ঘুরে দাঁড়িয়ে পাকিস্তানের দারুণ জয়

স্পোর্টস ডেস্ক: পঞ্চাশের আগে নেই ৪ উইকেট। ব্যাটিং ধসে পড়া দলকে টানলেন ইফতিখার আহমেদ। ঝড়ো ফিফটি উপহার দিয়ে পাকিস্তানকে বড় সংগ্রহ এনে দিলেন শাদাব খান। পরে বলে হাতে এক ওভারে দুই উইকেট নিয়ে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিলেন তিনি। তার অলরাউন্ড নৈপুণ্যে বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকাকে অনায়াসে হারল বাবর আজমের দল।
সিডনিতে বৃহস্পতিবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ডাকওয়ার্থ-লুইস-স্টার্ন পদ্ধতিতে ৩৩ রানে হারায় পাকিস্তান। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দুই দলের চারবারের মুখোমুখি লড়াইয়ে সবগুলোই জিতল ২০০৯ সালের শিরোপাজয়ীরা।
৪৩ রানে ৪ উইকেট হারানো পাকিস্তান ঘুরে দাঁড়ায় ইফতিখার ও শাদাবের ফিফটিতে। ২ ছক্কা ও ৩ চারে ৫১ রান করেন ইফতিখার। সাতে নেমে শাদাব খেলেন ৪ ছক্কা ও ৩ চারে ২২ বলে ৫২ রানের বিধ্বংসী ইনিংস। শেষ পর্যন্ত তারা করে ৯ উইকেটে ১৮৫ রান।
দক্ষিণ আফ্রিকার রান তাড়ায় ৯ ওভারে শেষে নামে বৃষ্টি। পরে ১৪ ওভারে তাদের সামনে লক্ষ্য দাঁড়ায় ১৪২ রানের। বৃষ্টির পর ৫ ওভারে ৭৩ রানের সমীকরণ আর মেলাতে পারেনি তারা। ৯ উইকেট হারিয়ে করে ১০৮ রানে। বৃষ্টির আগেই অবশ্য পাকিস্তানের জয়ের ভিতটা গড়ে দেন শাদাব। ১৬ রানে ২ উইকেট হারানো দক্ষিণ আফ্রিকা এইডেন মারক্রাম ও টেম্বা বাভুমার জুটিতে আভাস দেয় ম্যাচে ফেরার। আক্রমণে এসেই এই দুই জনকে ফিরিয়ে ম্যাচের ভাগ্য অনেকটাই গড়ে দেন লেগ স্পিনিং অলরাউন্ডার ।
ফিফটির পর ১৬ রান দিয়ে তার প্রাপ্তি ২ উইকেট। এমন পারফরম্যান্সের পর ম্যাচের সেরা তিনি ছাড়া আর কে! এই জয়ে কাগজে-কলমে এখনও সেমি-ফাইনালের আশা টিকে রইল পাকিস্তানের। শেষ চারের দৌড়ে ভালোভাবেই আছে দক্ষিণ আফ্রিকা। টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা পাকিস্তানের শুরুটা ছিল বেশ বাজে। প্রথম ওভারেই তারা হারায় মোহাম্মদ রিজওয়ানকে। বিশ্বকাপে প্রথম খেলতে নেমে ৩ ছক্কা ও ২ চারে ১১ বলে ২৮ রানের ক্যামিও ইনিংস খেলেন মোহাম্মদ হারিস।
আরও একবার ব্যর্থ হন বাবর আজম (৬)। আসরে এখন পর্যন্ত ৪ ম্যাচের একটিতেও দুই অঙ্কে যেতে পারলেন না পাকিস্তান অধিনায়ক। দুর্দান্ত এক ক্যাচে তাকে ফেরান কাগিসো রাবাদা। দ্রুত বিদায় নেন শান মাসুদও।
২ রানেই ফিরতে পারতেন ইফতিখার, যদি কঠিন ক্যাচটি মুঠোয় জমাতে পারতেন কুইন্টন ডি কক। ভীষণ বিপদে পড়া দলকে পরে টানেন তিনি। তাকে সঙ্গ দেন মোহাম্মদ নাওয়াজ। দুজনের ৫২ রানের জুটি ভাঙে ৪টি চার ও ১ ছক্কায় ২৮ রান করা নাওয়াজের বিদায়ে। এরপর ইফতিখার ও শাদাবের ব্যাটে এগোয় পাকিস্তানের রান। তাদের ৩৬ বল স্থায়ী ৮২ রানের জুটিতে দলটি পায় বড় সংগ্রহ।
বাঁহাতি রিস্ট স্পিনার তাবরাইজ শামসির পর নরকিয়াকে ওভারে একটি করে চার ও ছক্কা মারেন শাদাব। পরে নরকিয়াকে টানা দুই ছক্কায় উড়িয়ে ২০ বলে ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটি স্পর্শ করেন তিনি। টি-টোয়েন্টিতে পাকিস্তানের হয়ে যা দ্বিতীয় দ্রুততম। এরপর টানা তিন বলে তিন উইকেট নেয় দক্ষিণ আফ্রিকা। শাদাব ও মোহাম্মদ ওয়াসিমকে ফেরান নরকিয়া। ৩৩ বলে ফিফটি করা ইফতিখার লং-অনে রাইলি রুশোর দারুণ ক্যাচে ফেরেন রাবাদার বলে।
পাকিস্তানের মতো দক্ষিণ আফ্রিকাও প্রথম ওভারে হারায় উইকেট। শূন্য রানে বিদায় নেন ডি কক। রুশোও টিকতে পারেননি। দুই বিস্ফোরক ব্যাটসম্যানই শাহিন শাহ আফ্রিদির শিকার। এরপর ২৭ বলে ৪৯ রানের জুটি গড়ে দলকে কক্ষপথে ফেরান বাভুমা ও মারক্রাম। অষ্টম ওভারের প্রথম বলে ১৯ বলে ৩৬ রান করা বাভুমাকে কট বিহাইন্ড করে দেন শাদাব। এক বল পর তার টপস্পিনে বোল্ড মারক্রাম (৪টি চারে ২০)। সেখানেই অনেকটা শেষ হয়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকার আশা।
এক ওভার পর বৃষ্টির বাগড়া। অনেকটা সময় অপেক্ষার পর খেলা শুরু হলে হাইনরিখ ক্লাসেন, ট্রিস্টান স্টাবসরা আর দলকে জয়ের পথে এগিয়ে নিতে পারেননি। ৯ রানের মধ্যে ৫ উইকেট হারায় তারা। দুর্দান্ত বোলিংয়ে স্রেফ ১৪ রান দিয়ে ৩ উইকেট আফ্রিদি। সুপার টুয়েলভ পর্বে শেষ ম্যাচে আগামী রোববার বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলবে পাকিস্তান। একই দিন নেদারল্যান্ডসের মুখোমুখি হবে দক্ষিণ আফ্রিকা।


প্রকাশিত: নভেম্বর ৪, ২০২২ | সময়: ৬:০৯ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ