শনিবার, ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
সানশাইন ডেস্ক: ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং-এর প্রভাবে রাত থেকেই বৃষ্টি হচ্ছে উপকূল অঞ্চলে। এর ফলে দেশের সাত জেলা এখন বিদ্যুৎবিহীন হয়ে পড়েছে। ইতোমধ্যে ভোলাসহ সাতটি সমিতিরই বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি)। সর্বশেষ আপডেট অনুযায়ী এই বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। ঝড়ের ঝুঁকি ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমাতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এই সময় তারা তাদের কর্মকর্তা ও কর্মচারীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে মোবাইলের ব্যবহার কমিয়ে চার্জ ধরে রাখারও পরামর্শ দিয়েছেন।
এদিকে পশ্চিমাঞ্চল বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি (ওজোপাডিকো) জানায়, তাদের সব এলাকা ঝুঁকির মুখে নেই। তবে যে কয়টি জেলা পড়েছে সেখানে বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু আছে। তবে ঝড়ো হাওয়ার কারণে কিছু এলাকায় এমনিতে বিদ্যুৎ বিতরণ বন্ধ হয়ে গেছে। আরইবি জানায়, সর্বশেষ আপডেট অনুযায়ী আরইবির অধীন বরিশাল-১, পিরোজপুর, পটুয়াখালী, ভোলা, ঝালকাঠি, খুলনা ও বাগেরহাট পিবিএস এর ১৬ লাখ ১২ হাজার গ্রাহক এখন বিদ্যুৎ বিহীন অবস্থায় আছে।
আরইবির চিফ ইঞ্জিনিয়ার আমজাদ হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমাদের সাতটা পিবিএস ঝুঁকির মধ্যে আছে। তাই আপাতত বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে কিছু কিছু পিবিএস-এর হেড অফিসে বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু রাখা হয়েছে। যদিও তার পরিমাণ খুবই অল্প। ভোলায় একেবারেই বিদ্যুৎ নেই। তিনি জানান, এই সাতটির বাইরেও বেশ কিছু পিবিএস ঝুঁকিতে আছে, যেমন কক্সবাজার। সেখানেও ঝড়ো হাওয়া বইছে।
তিনি বলেন, উপকূলের বেশিরভাগ এলাকায় ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি হচ্ছে। তাই সবগুলোই ঝুঁকিরমধ্যে আছে। প্রস্তুতির বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা সিত্রাং মোকাবিলায় ঘূর্ণিঝড় আম্পান মোকাবেলার অভিজ্ঞতা সামনে রেখেই প্রস্তুতি নিয়েছি। মেরামতের সব ধরনের মালামাল, লোকবল বৃদ্ধি করা হয়েছে। ফিডার ভিত্তিক কাজ বন্টন, লোকালের সাথে যোগাযোগ, টিম এরেঞ্জমেন্ট করা হচ্ছে। এছাড়া বলা হয়েছে, মোবাইলে কম কথা বলতে; যাতে করে চার্জ বেশিক্ষণ রাখা যায়।
পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) ভৌগোলিক এলাকা বাদে, খুলনা, বরিশাল ও বৃহত্তর ফরিদপুর বিভাগের ২১টি জেলা ও ২০টি উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করে ওজোপাডিকো। ঝড়ের বিষয়ে জানতে চাইলে ওজোপাডিকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আজহারুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের কিছু এলাকা এই ঝড়ের ঝুঁকির মধ্যে আছে। সেখানে আমরা সবধরনের প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছি। কিছু এলাকায় ঝরো হাওয়া ও বৃষ্টির কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘ্নিত হলেও এখনো কোথাও আমরা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করিনি।’
প্রসঙ্গত, ওজোপাডিকোর অধীন বরিশাল বিভাগের ভান্ডারিয়া, নলছিটি, কাঁঠালিয়া, বোরহানউদ্দীন, চরফ্যাশন এবং মনপুরা সবচেয়ে ঝুঁকিতে আছে। এছাড়া খুলনা বিভাগের ফুলতলা, মোংলা, কালীগঞ্জ, কোটচাঁদপুর এবং মহেশপুরেও ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি হচ্ছে।
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’ আরও ঘনীভূত হয়ে বাংলাদেশের দিকে এগিয়ে আসছে। আজ মঙ্গলবার ভোরে ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হেনেছে। সোমবার সকালে ঝড়টি উপকূল থেকে ৪৯৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে।
আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, সাগর আরও বেশি বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠায় মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরগুলোকে ৪ (চার) নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ৭ (সাত) নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। এছাড়াও চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরগুলোকেও ৬ (ছয়) নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। ৭ (সাত) নম্বর বিপদ সংকেতের অর্থ হচ্ছে বন্দর ছোট বা মাঝারি তীব্রতার ঝঞ্ঝাবহুল এক সামুদ্রিক ঝড়ের কবলে নিপতিত। ঝড়ে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ থেলে ৮৮ কিলোমিটার। ঝড়টি বন্দরের উপর বা নিকট দিয়ে উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
পূর্বাভাস অনুযায়ী, ঘূর্ণিঝড়টি আগামীকাল মঙ্গলবার ভোরে বা সকাল নাগাদ পটুয়াখালীর খেপুপাড়ার পাশ দিয়ে দিয়ে বরিশাল-চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম করতে পারে।