সর্বশেষ সংবাদ :

সম্মাননা প্রদানের মধ্য দিয়ে পর্দা নামল ‘চিহ্নমেলা’র

রাবি প্রতিনিধিঃ

‘চিহ্ন’ সম্মাননা প্রদানের মধ্য দিয়ে পর্দা নামল দুই বাংলার লেখক, পাঠক ও সম্পাদকের বৈশ্বিক সম্মিলন ‘চিহ্নমেলা’র।  মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) দুইদিনব্যাপী এ মেলার সমাপনী অনুষ্ঠিত হয়। সমাপনী অনুষ্ঠানে বাংলা বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে দুটি সাহিত্য পত্রিকা ও দুই গুণী সাহিত্যিককে ‘চিহ্ন’ সম্মাননা প্রদান করা হয়।

 

সমাপনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে পুরস্কার তুলে দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার, লিটলম্যাগ ব্যক্তিত্ব সন্দীপ দত্ত, চিহ্ন সম্পাদক অধ্যাপক শহীদ ইকবাল প্রমুখ।

 

অনুষ্ঠানে ছোটকাগজ ক্যাটাগরিতে ‘চিহ্ন লিটলম্যাগ সম্মাননা’ প্রদান করা হয় বাংলাদেশের চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত ‘তৃতীয় চোখ’ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকে প্রকাশিত ‘নৌকো’ পত্রিকাকে। পত্রিকা দুটির পক্ষে সম্মাননা স্মারক গ্রহণ করেন সম্পাদক আলী প্রয়াস ও অমলিন্দু বিশ্বাস। বাংলা সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য ‘চিহ্ন সাহিত্য পুরস্কার’ প্রদান করা হয় কথাসাহিত্যিক হামিদ কায়সারকে এবং ‘চিহ্ন সারস্বত সম্মাননা’ প্রদান করা হয় কবি জুলফিকার মতিনকে। তাদের হাতে সম্মাননা স্মারক, সনদ ও নগদ অর্থ তুলে দেন অতিথিবৃন্দ। এসময় পুরস্কার গ্রহণের অনুভূতি ব্যক্ত করেন তাঁরা।

 

 

সমাপনী অনুষ্ঠানে ভারতের বিশিষ্ট লিটল ম্যাগ ব্যক্তিত্ব সন্দীপ দত্ত বলেন, ‘চিহ্ন একটি পত্রিকা ছিল। পত্রিকা থেকে সেটি আরও বিস্তারিত হলো এবং দুই বাংলাকে একত্রিত করল। রাষ্ট্রীয় কোন সাহায্যে নয়, একটি বিশ^বিদ্যালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় ও ব্যক্তিগত পুঁজির বিতরণে। আমার মনে হয় দুদিনের এই অনুষ্ঠানটি পাঁচদিন হতেও পারত। দেখলাম চিহ্ন স্টলে বহু লিটল ম্যাগাজিন ছড়ানো ছিটানো রয়েছে। তা দেখে মনে হলো এখানে একটা লিটল ম্যাগাজিন লাইব্রেরি ও গবেষণা কেন্দ্র তো হতেই পারে।’

 

 

‘চিহ্ন’ সম্পাদক অধ্যাপক শহীদ ইকবাল বলেন, ‘আমরা এই অঙ্গনে শিল্প-সাহিত্য-শিক্ষা-সংস্কৃতি চর্চার একটি ধারা আপনাদের মধ্য দিয়ে তুলে ধরতে চাই। নানা অঞ্চল থেকে আসা লোকদের মধ্যে যে সম্মিলন তার মধ্যেও একটা চেতনা আমি লক্ষ্য করি। সেটি হচ্ছে বাংলা ভাষাকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা। ইংরেজি ভাষা আমাদের অনেক ভাবে প্রভাবিত করছে। এর বিপরীতে দাঁড়িয়ে সমস্ত বঙ্গের মানুষদের সাথে যে ভাষা ভিত্তিক চেতনার যুদ্ধ সে যুদ্ধ আসলে এই ‘চিহ্নমেলা’। ভাষার সাথে আমাদের যে সংস্কৃতি, মেধা, মনন, বুদ্ধিবৃত্তিক চিন্তা, প্রগতিশীলতা ও কূপমণ্ডুকতার বিরুদ্ধে যে অস্ত্র সেটিই হচ্ছে আমাদের এই বাংলা ভাষা এবং ভাষার ভিতর দিয়েই যে শিল্পের চর্চা সেটা।’

 

 

সমাপনী বক্তব্যে রাবি উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, ‘এই মেলা বাংলা ভাষাভাষী মানুষের মিলনকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা বাংলা ভাষাকে পেয়েছি। এই বাংলা ভাষা আর কোনোদিন হারিয়ে যাবে না। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে, ততদিন বাংলা ভাষা থাকবে। এরকম মেলা আমাদের সকলকে অনুপ্রাণিত করে। আজকের আয়োজনে আমরা দুই বাংলার মানুষ একত্রিত হয়েছি। এটা আমাদের জন্য গর্বের বিষয়।’

 

 

মেলার সমাপনী দিন বেলা ১১টায় মামুন মুস্তাফার সঞ্চালনায় ‘লিটলম্যাগে লেখালেখি: দ্বৈরথ ও দ্বন্দ্ব’ শীর্ষক আড্ডা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর মেলা উপলক্ষে দুই বাংলা থেকে প্রকাশিত বেশ কয়েকটি বই ও লিটল ম্যাগাজিনের মোড়ক উন্মোচন করেন সন্দীপ দত্ত ও অধ্যাপক শহীদ ইকবাল। বিকেল ৩টায় ‘গদ্য আখ্যান ও বাংলার গ্রামীণ জীবন’ শীর্ষক প্রবন্ধ পাঠ করেন মোস্তাক আহমেদ। পরে মেলায় অংশ নেওয়া প্রতিটি পত্রিকার সম্পাদকের হাতে ‘চিহ্নস্মারক’ তুলে দেন মেলা উদযাপন পর্ষদের আহ্বায়ক অধ্যাপক শহীদ ইকবাল।

 

 

দুইদিন ব্যাপী এ মেলার প্রথম দিন গতকাল সোমবার ‘প্রয়াত-প্রিয়জন’ অনুষ্ঠানে প্রয়াত প্রতিথযশা লেখকদের স্মরণ করা হয়। পরে ‘সৃষ্টিশীলতার সমাজতত্ত্ব ও লিটলম্যাগ’ নিয়ে একক বক্তৃতা দেন প্রাবন্ধিক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম। অনুবাদ প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলেন আলম খোরশেদ, শরীফ আতিক-উজ-জামান, সফিকুল ইসলাম, প্রত্যয় হামিদ ও মুহম্মদ মুহসীন।

 

 

 

সানশাইন/তৈয়ব

 


প্রকাশিত: অক্টোবর ১৮, ২০২২ | সময়: ৯:৩১ অপরাহ্ণ | Daily Sunshine