সর্বশেষ সংবাদ :

শেষ হলো ঠাকুর নরোত্তম দাসের তিরোভাব তিথি মহোৎসব

গোদাগাড়ী প্রতিনিধি: লাখো ভক্তের মিলনের মধ্যে দিয়ে শেষ হলো রাজশাহী জেলায় গোদাগাড়ী উপজেলার প্রেমতলী ক্ষেতুরীগ্রামে তিন দিনব্যাপী ঐতিহ্যবাহী গৌরাঙ্গবাড়িতে বৈষ্ণব ধর্মের শিরোমণী, প্রেমভক্তি মহারাজ ও অহিংসার প্রতীক ঠাকুর নরোত্তম দাসের তিরোভাব তিথি মহোৎসব। শনিবার প্রথম প্রহরে দধিমঙ্গল দ্বি-প্রহরে ভোগ আরতি ও মহান্ত বিদায়ের মধ্য দিয়ে শেষ হলো ঠাকুর নরোত্তম দাসের তিরোভাব তিথি মহোৎসব।
দুই বছর করোনার কারণে ভক্তকুল প্রেমতলী ক্ষেতুরীগ্রামে তিন দিনব্যাপী ঐতিহ্যবাহী গৌরাঙ্গবাড়িতে ঠাকুর নরোত্তম দাসের তিরোভাব তিথি মহোৎসব আসতে না পারার বেদনা ভুলে গেছে এবার তিরোভাব তিথি মহোৎসব আসতে পেরে। ভক্তরা এবার প্রাণ খুলে তাদের বৈষ্ণব ধর্মের শিরোমণী, প্রেমভক্তি মহারাজ ও অহিংসার প্রতীক ঠাকুর নরোত্তম দাসের আরাধনা করতে পেরেছে।
দেশ বিদেশের লাখো ভক্ত এসে উপস্থিত হতে পারায় লাখো ভক্তের মিলন মেলায় পরিনত হয় এ মহোৎসব। এ মহোৎসবকে ঘিরে প্রেমতলী ক্ষেতুরী গ্রামে বসে ছিল ক্ষেতুরীমেলা। মেলাই কোন কিছুর কমতি ছিল না। মেলাকে ঘিরে মিষ্টির দোকান, খাবারের হোটেল, মনহারির দোকান, গার্মেন্সের দোকান, খেলনার দোকান, বিভিন্ন ধরনের লোহার দোকান, কাঠের দোকান, সিদুর-কাঠের মালার দোকানসহ হরেক রকমের দোকান পাট। এছাড়াও ছিল নাগোর দোলা। সব মিলিয়ে মেলা ছিল ভক্তকুলের আনান্দের এক মহাযোগ্য।
তিরোভাব তিথি মহোৎবে গিয়ে কথা হয় দিনাজপুর জেলার বিরহামপুর এলাকার ভক্ত রতন মহুন্তের সঙ্গে। তিনি বলেন, মহাপ্রভুকে প্রনাম করতে এখানে এসেছি। কথা হয় আরেক ভক্ত রাজশাহীর ভেড়িপাড়ার দিলিপ কুমার রামের সাথে। তিনি বলেন, মহা প্রভুকে প্রনাম ও ভোগের জন্য এখানে এসেছি।
ঐতিহ্যবাহী গৌরাঙ্গবাড়ি থেকে প্রায় দুই থেকে আড়াই কিলোমিটার দুরে পদ্মা নদীর তীরে অবস্থীত তমালতলী। সেখানে ভক্তরা ছুটে যান পদ্মা নদীতে শ্যান করে তমালতলী দর্শনের জন্য। তা ছাড়াও ছুটে যান ভোজনতলী, খিলতলী ও আমতলী মহাপ্রভু ঠাকুর নরোত্তম দাসের আরাধনা করার জন্য। তবে এবার মহোৎসবকে ঘিরে কোথাও কোন অপ্রিতিকর ঘটনা ঘটেনি।
এবারের উৎসবকে ঘিরে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। মহোৎসব ও উৎসবকে ঘিরে মেলা- এসব নির্বিঘ্নে করতে মাঠে থাকবেন ভ্রাম্যমাণ আদালত ও ট্রাস্ট বোর্ডের কয়েকশ’ নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী। বিভিন্ন রাস্থায় পুলশি বাহিনির ছিলো কড়া নিরাপত্তা। গৌরাঙ্গবাড়ির ভিতরে ছিলো গোদাগাড়ী মডেল থানার কনট্রোল রুম। গোদাগাড়ী থানা পুলিশ, জেলা পুলিশের ৫০০ জন সদস্য, ৩০ জন আনসার, উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা, কর্মচারী, চিকিৎসক ও দুই শতাধিক স্বেচ্ছাসেবক দিনরাত কাজ করছেন। ১৬টি সিসি ক্যামেরা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত থেকেছে ৩০ বিঘা জমির ওপর অনুষ্ঠিত এ মহোৎসব। আসা ভক্তদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে মেডিকেল টিম গঠন করে অভিজ্ঞ স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ করে স্বাস্থ্যসেবা দিতে প্রস্তুত ছিল।
গত বৃহস্পতিবার অধিবাসের মধ্য দিয়ে তিন দিনব্যাপী ঠাকুর নরোত্তম দাসের তিরোভাব তিথি মহোৎসব শুরু হয়। শুক্রবার অরুণোদয় থেকে অষ্টপ্রহরব্যাপী তারক গ্রক্ষ্মনাম সংকীর্ত্তন, শনিবার প্রথম প্রহরে দধিমঙ্গল দ্বি-প্রহরে ভোগ আরতি ও মহান্ত বিদায়ের মধ্য দিয়ে শেষ হলো ঠাকুর নরোত্তম দাসের তিরোভাব তিথি মহোৎসব।
সুন্দর পরিবেশে অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়েছে। লাখ লাখ নারী-পুরুষ ভক্তের জন্য প্রয়োজনীয় প্রসাদ, বিশুদ্ধ পানি ও স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশনের ব্যবস্থা করা ছিল। যাতায়াত নির্বিঘ্ন করতে প্রেমতলী বাজার থেকে খেতুরিধাম পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার সংযোগ সড়কটিতে আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করা ছিল।


প্রকাশিত: অক্টোবর ১৬, ২০২২ | সময়: ৬:০৯ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ