সর্বশেষ সংবাদ :

বিড়াল অসুস্থ, সুচিকিৎসার দাবিতে ডিসির দরবারে পশুপ্রেমি

স্টাফ রিপোর্টার

বুধবার দুপুর ২.৪০ বাজে। সবেমাত্র প্রায় আড়াই ঘন্টার মিটিং শেষ করে রাজশাহী জেলা প্রশাসক তার সভাকক্ষে ঢুকেছেন। তখনো প্রায় ১৫ জন দর্শণার্থী বসে রয়েছেন তাদের ব্যক্তিগত সমস্যার সমাধানের জন্য। কারণ ইতমধ্যে রাজশাহীবাসী জেনে গেছে জেলা প্রশাসকের কাছে গেলে তাৎক্ষনিক একটা সমাধান তিনি দিবেন।  এক বয়স্কা নারী অভিযোগ করলেন জমির সমস্যা, ডিসি গোদাগাড়ীর ভূমি অফিসে ফোন দিয়ে সমাধানের রাস্তা দেখিয়ে দিলেন।

 

 

 

একজন মোহনপুর থেকে ফোন করলেন সরকারী গাছ  হচ্ছে, ডিসি সেখানে ফোন দিয়ে কারা গাছ কাটছে আগে ধরে তার পর তাকে জানাতে নির্দেশ দিলেন। একের পর একজন সিরিয়ালভাবে সমস্যা তুলে ধরে সমাধান পেয়ে বের হচ্ছেন।

 

 

এভাবে সিরিয়াল আসে মিতুল নামে এক বিড়াল প্রেমী যুবকের।। তিনি অভিযোগ করলেন রাজশাহী জেলা প্রশাসকের কাছে, তার বিড়াল ঠান্ডাজনিত কারনে অসুস্থ । চোখ লাল হয়ে গেছে। যে ডাক্তার দেখিয়েছিলেন তিনি ৫০০ টাকা ভিজিট নিয়েছেন অথচ বিড়াল সুস্থ হয়নি। তাছাড়া ডাক্তার ফোন ধরছে না এখন। উপায় না পেয়ে তার কাছে এসছেন ।

 

 

 

মিতুলের সব কথা শোনার পর ডিসি রাজশাহী জেলা প্রাণি সম্পদ দপ্তরের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা মো. ইসমাইল হককে টেলিফোনে কল করেন। ফোন করে তাকে বললেন, ‘মিতুল নামে একটি ছেলে একটি বিড়াল নিয়ে আগামীকাল (১৫ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টায় আপনার কাছে যাবে। বিড়ালের সমস্যা দেখে আপনি চিকিৎসা দিবেন, যাতে বিড়ালটি দ্রুত সুস্থ হয়ে যায়।’

চিকিৎসকের  ব্যবস্থাপত্র

 

নগরীর সাধুর মোড় এলাকার শাহজাহান শেখের ছেলে মিতুল। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ থেকে সবেমাত্র পড়ালেখা শেষ করেছেন। বিড়ালের জন্য ডিসি অফিসে এসেছেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, “উপায় না পেয়ে আমি সরাসরি জেলার অভিভাবকের কাছে এসেছি। কারণ, আমার পুষিকে বাঁচাতেই হবে। পুষির কিছু হলে আমি স্বাভাবিক থাকতে পারবো না। দুই বছর আগে থেকে ও আমার কাছেই পালিত। আদর করে ওর নামও রেখেছি ‘পুষি’।”

 

 

এক প্রশ্নের জবাবে মিতুল বলেন, ‘আমি শুনেছি, ডিসি স্যারের নিকট কেউ গেলে সমস্যার সমাধান ছাড়া ফিরেন না। তাই আমিও গিয়েছিলাম। সেখানে গিয়ে দেখলাম- সহযোগিতার জন্য অনেকেই এসেছিল। তিনি সকলকেই সহযোগিতা করলেন তাৎক্ষণিকভাবেই। আমাকেও সহযোগিতা করলেন। এতো আন্তরিক সরকারি কর্মকর্তা আমি আগে কখনো দেখিনি। হাসি মুখে সবার সমস্যার সমাধান দিলেন। তার মতো কর্মকর্তা সকল সরকারি দপ্তর, সকল অফিসে থাকলে বাংলাদেশ আরও বহুগুণে এগিয়ে যাবে।’

 

মিতুল আরো জানান, গত শনিবার (১০ সেপ্টেম্বর) পুষিকে নিয়ে যান নগরীর টিকাপাড়ার বাশার রোড এলাকার ‘কিটক্যাট’ এ (কেয়ার এন্ড কিউর)। পুষিকে দেখান ‘পোষা প্রাণির আধুনিক এই চিকিৎসা কেন্দ্র’র ভেটেনারী সার্জন ডা. মো. নিয়ামত উল্লাহকে। বিড়ালটির পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সুস্থ হতে ব্যবস্থাপত্রে কিছু ওষুধও লিখে দেন তিনি। কিন্তু ‘সাজেস্ট’ করা ওষুধের দুই-একটি বাদে অন্য ওষুধগুলো কোথাও খুঁজে না পেয়ে মিতুল চলে যান সরাসরি রাজশাহী জেলা প্রশাসক আবদুল জলিলের কাছে। নালিশ করেন ডাক্তারের বিরুদ্ধে। কীভাবে পুষিকে সুস্থ করে তোলা যায় সেই পরামর্শ চান ডিসির কাছে!

ডিসি এমন প্রশ্ন করতেই মিতুল বিড়ালের চিকিৎসার সেই ব্যবস্থাপত্রের ফাইল খুলে ডিসিকে দিলেন। মিতুল বলেন, ‘বেশ কিছুদিন হলো আমার বিড়াল অসুস্থ। চোখে পেচুল আসে। চোখ ফুলে গিয়ে বন্ধ হয়ে গেছে। বিদ্যুতের আলোয় তাকাতে পারে না। এজন্য ঘরে না থেকে বাইরে গিয়ে চোখ বন্ধ করে থাকে। আমার খৃুব কষ্ট হয়। এভাবে ‘পুষি’র অবস্থার অবনতি হলে গত শনিবার (১০ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় বিড়ালকে ডাক্তারের চেম্বারে নিয়ে যাই।

 

 

পুষিকে দেখাতে ডাক্তার ৫০০টাকা পরামর্শ ফি-ও নেন। কিন্তু দুঃখের বিষয়- তিনি শুধুমাত্র দেখেই ওষুধ লিখেছেন। বিড়ালের চোখ তাৎক্ষণিকভাবে পরিষ্কার করা ও প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার প্রয়োজন ছিল কিন্ত সেটা তিনি করেননি। কোন প্রাথমিক চিকিৎসা না পেয়ে বিড়ালকে বাসায় নিয়ে আসি এবং ব্যবস্থাপত্রে লিখে দেয়া ওষুধগুলো ক্রয়ের জন্য বৃষ্টিতে ভিজে রাতেই নগরীর লক্ষ্মীপুরে যাই। কিন্তু হতাশ হলাম। অসংখ্য ওষুধের দোকান খুঁজে ওষুধ পেলাম না। বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে বৃষ্টিতে ভিজে গত দুই দিন থেকে রাজশাহী নগরীর বিভিন্ন জায়গায় ওষুধের ডিসপেন্সারিগুলোতে ওষুধ খুঁজেছি, পাইনি। বিকল্প ওষুধ কী নেয়া যায় তা জানার জন্য অসংখ্যবার ডাক্তারকে ফোন দিয়েছি। কিন্তু ডাক্তারের একই কথা- ‘খুঁজে দেখেন’! ডাক্তারের কোনো সহযোগিতা পাইনি!

 

 

এসময় মিতুল ডিসিকে বেশ কিছু প্রশ্ন ছুড়ে দেন! বলেন, ‘আমি কেন ৫০০ টাকা দিয়ে ডাক্তার দেখলাম? এসকল ডাক্তার থেকে কী লাভ, যদি চিকিৎসা না পাই? তাদের অবহেলার জন্য বিড়াল যে কষ্ট পাচ্ছে , যে ক্ষতিগ্রস্ত হলো এর বিচার কে করবে? সে কেমন ডাক্তার, বিকল্প ওষুধের নাম বলতে পারে না? তাহলে কি আমার কাছ থেকে টাকা নিলো শুধু ওষুধ লেখার জন্য?

 

মিতুল ডিসির সঙ্গে কথা বলে চলে যাওয়ার পর জেলা প্রশাসক আবদুল জলিল বলেন, ‘সৃষ্টিকর্তা মানুষকে ধৈর্য্য দিক, সেই সাথে আমাকেও! বিড়ালের সুচিকিৎসা না পেয়ে ছেলেটি সরাসরি আমার কাছে এসেছে। ডাক্তারকে ফোন না দিয়ে যদি বুদ্ধি করে আবারও সেই ডাক্তারের চেম্বারে যেতো, তাহলে হয়তো তাকে এই পর্যন্ত আসতে হতো না।’ তিনি আরও বলেন, ‘এমন হাজারো সমস্যা নিয়ে জনগণ আমার কাছে আসে। কিছু সমস্যা যৌক্তিক আবার কিছু অযৌক্তিক সমস্যা নিয়েও আসে। আমি সবার সমস্যা জানার পর সাধ্যমত চেষ্টা করি সমাধানের। কেননা- আমি নিজেকে প্রজাতন্ত্রের একজন কর্মচারী মনে করি। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী প্রজাদের সমস্যার সমাধান করবে- এটাই স্বাভাবিক।’

 

অভিযোগের বিষয়ে জানতে ‘কিটিক্যাট’ এর ভ্যাটেনারী সার্জন ডা. মো. নিয়ামত উল্লাহ’র মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তার ব্যবহৃত ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।

সানশাইন / শাহজাদা মিলন


প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২২ | সময়: ৯:১২ অপরাহ্ণ | Daily Sunshine