সর্বশেষ সংবাদ :

রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রের

সানশাইন ডেস্ক: মিয়ানমারে নির্যাতিত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ‘বড় সংখ্যক’কে আশ্রয় দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র সরকার। বাংলাদেশে রোহিঙ্গা ঢলের পাঁচ বছর পূর্তিতে বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে এ ঘোষণা দেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন।
এদিকে জাপানও আরও রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেবে বলে জানিয়েছেন ঢাকায় দেশটির রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি। মিয়ানমারে দমন-পীড়নের শিকার হয়ে মুসলিম জনগোষ্ঠী রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে শরণার্থী হয়ে আসার ইতিহাস দীর্ঘদিনের। ২০১৭ সাল নাগাদ এই সংখ্যা ৪ লাখ ছাড়ায়। ২০১৭ সালের অগাস্টে রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অভিযানের মুখে বাংলাদেশ সীমান্তে রোহিঙ্গাদের ঢল নামে। কয়েক মাসেই এই সংখ্যা ৭ লাখ ছাড়িয়ে যায়।
সব মিলিয়ে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে উদ্বাস্তু জীবন কাটাচ্ছেন। তাদের ফেরত নিতে মিয়ানমার সরকার বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হলেও পাঁচ বছরেও প্রত্যাবাসন শুরু হয়নি। মিয়ানমারে নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের অধিকাংশ বাংলাদেশে শরণার্থী হয়ে এলেও ভারত, থাইল্যান্ডসহ আরও ২০টি দেশেও এই জনগোষ্ঠীর কিছু অংশ আশ্রয় নিয়ে আছে।
যেসব দেশ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে তাদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে বিবৃতিতে ব্লিংকেন বলেন, “আন্তর্জাতিক ও সমন্বিত মানবিক সাড়াদানের অপরিহার্য একটি উপাদান হিসাবে আমরা বাংলাদেশসহ এই অঞ্চলের দেশগুলো থেকে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর কার্যক্রম উল্লেখযোগ্য হারে বাড়াতে কাজ করছি, যাতে তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তাদের জীবন খুঁজে নিতে পারে।” মোট কত রোহিঙ্গা শরণার্থীকে যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় দেওয়া হবে, তা বিবৃতিতে স্পষ্ট করেননি ব্লিংকেন।
২০১৭ সালে রোহিঙ্গাদের উপর চালানো মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনকে জাতিসংঘ জাতিগত নিধনের জাজ্বল্যমান উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরেছিল। যুক্তরাষ্ট্র সরকার চলতি বছরের মার্চে রোহিঙ্গাদের উপর চালানো ওই হত্যাযজ্ঞকে ‘জেনোসাইড’ হিসাবে বর্ণনা করে।
মিয়ানমারে সামরিক বাহিনীর জবাবদিহি নিশ্চিতে কাজ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে ব্লিংকেন বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র রোহিঙ্গাদের এবং বার্মার জনগণকে তাদের স্বাধীনতা এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতন্ত্রের সাধনায় ন্যায়বিচার ও জবাবদিহিতার অগ্রগতি, অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক চাপ বৃদ্ধি এবং বার্মার সকল ব্যক্তির মানবাধিকার ও মানবিক মর্যাদা রক্ষা করার মাধ্যমে তার সমর্থন অব্যাহত রাখবে।” রোহিঙ্গা গণহত্যার জন্য জাতিসংঘের আদালতেও বিচারের মুখোমুখি মিয়ানমার।
আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য সামরিক বাহিনীর কর্মকাণ্ডের ন্যায়বিচার এবং জবাবদিহিতার ক্ষেত্রে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের পদক্ষেপকে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন করে উল্লেখ করে ব্লিংকেন বলেন, “একইভাবে আমরা বার্মার পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সুপারিশকে সমর্থন করব।”
দীর্ঘদিন সামরিক শাসনে থাকা মিয়ানমারে অং সান সু চির নেতৃত্বে গণতন্ত্রে ফিরলেও সেই যাত্রা স্থায়ী হয়নি। গণতন্ত্রের নেত্রী সু চি এখন দেশটিতে বন্দি জীবনে। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর দমন-পীড়ন ও নির্যাতনের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “গণতন্ত্রপন্থি এবং বিরোধী নেতাদের শাসকগোষ্ঠীর সাম্প্রতিক মৃত্যুদণ্ড বার্মিজ জনগণের জীবনের প্রতি সেনাবাহিনীর চরম অবহেলার সর্বশেষ উদাহরণ মাত্র।
“এর সহিংসতার বৃদ্ধি ক্রমবর্ধমান মানবিক পরিস্থিতিকে আরও নাজুক করে তুলছে, বিশেষ করে রোহিঙ্গাসহ জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য, যারা দেশের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে রয়ে গেছে।” বাংলাদেশে রোহিঙ্গা ঢল এবং প্রত্যাবাসনের চুক্তির সময় সু চির দল ক্ষমতায় থাকলেও গত বছর সামরিক বাহিনী ফের ক্ষমতা দখল করে। এরপর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনও অনিশ্চয়তায় পড়ে।
বিবৃতিতে ব্লিংকেন বলেন, “২০১৭ সাল থেকেই যুক্তরাষ্ট্র রোহিঙ্গাদের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখার পথ খুঁজে এসেছে। আর এই বাস্তবতা উপলব্ধি করছে যে, বর্তমান সামরিক শাসন ক্ষমতায় থাকা পর্যন্ত মাতৃভূমি বার্মায় তাদের বড় আকারের প্রত্যাবাসন সম্ভব নয়। “রোহিঙ্গা সঙ্কটের মানবিক প্রতিক্রিয়ার প্রধান একক দাতা হিসেবে আমরা বার্মা, বাংলাদেশ ও এই অঞ্চলের অন্যান্য জায়গায় সঙ্কটে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ১৭০ কোটি ডলারের বেশি সহায়তা প্রদান করেছি।”
এদিকে, বৃহস্পতিবার ঢাকায় ফরেইন সার্ভিস একাডেমিতে এক আলোচনা অনুষ্ঠানে ঢাকায় জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি বলেন, “(রোহিঙ্গা) প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার পাশাপাশি তৃতীয় দেশে স্থানান্তরের বিষয়টিও বিবেচনা করা দরকার। তৃতীয় দেশে শরণার্থীদের স্থানান্তর একটি স্থায়ী সমাধান। এটা শরণার্থীদের চাপ আন্তর্জাতিকভাবে ভাগাভাগি করার সুযোগ।
“এশিয়ার প্রথম দেশ হিসাবে জাপান পাইলট প্রকল্পের আওতায় ২০০৮ সালের ডিসেম্বর মিয়ানমারের শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। আজ পর্যন্ত এই স্কিমের আওতায় রোহিঙ্গাসহ ৫৪ পরিবার ও ২০০ লোককে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। ইউএনএইচসিআরের সাথে আলোচনার মাধ্যমে আরও বেশি রোহিঙ্গাকে জাপানে স্থানান্তরের বিষয়টি আমরা বিবেচনা করতে পারি।”


প্রকাশিত: আগস্ট ২৬, ২০২২ | সময়: ৫:৫৩ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ