এমবাপের রেকর্ডের পর মেসি-নেইমারের গোল

স্পোর্টস ডেস্ক: আক্রমণভাগে তিন তারকার বোঝাপড়া ঠিক হলে ফুটবল মাঠে কী হতে পারে এর নিদারুণ অভিজ্ঞতা হলো লিলের। দুই বছর আগে এই দলটি চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল! যেন নিজেকেই মনে করিয়ে দিচ্ছিলেন ধারাভাষ্যকার। নিজের চোখকেই যেন বিশ্বাস হচ্ছিল না তার। মাঠে যা ঘটছে সত্িয তো! একদমই পাত্তা পায়নি লিল। নেইমার, কিলিয়ান এমবাপে ও লিওনেল মেসির নৈপুণ্েয শিরোপা প্রত্যাশী দলটির জালে গোল উৎসবে মাতে পিএসজি।
লিগ ওয়ানের ম্যাচে রোববার রাতে ৭-১ গোলে জিতেছে পিএসজি। দ্রুততম গোলের রেকর্ডের সঙ্গে হ্যাটট্রিক করেছেন এমবাপে। অ্যাসিস্টের হ্যাটট্রিক করা নেইমার করেছেন জোড়া গোল। মেসি ও আশরাফ হাকিমি করেছেন একটি করে গোল, তাদের অ্যাসিস্টও আছে একটি করে। প্রথম মিনিটে গোল করে সুব বেঁধে দেন এমবাপে। দারুণ সঙ্গত করেন নেইমার ও মেসি। আক্রমণভাগের তিন তারকার বোঝাপড়া ঠিক হলে ফুটবল মাঠে কী হতে পারে এর নিদারুণ অভিজ্ঞতা হলো লিলের।
সবশেষ ম্যাচের পর নেইমার ও এমবাপেকে নিয়ে কত আলোচনা। মাঠের কিছু কিছু টুকরো টুকরো ছবি ও ভিডিও সামনে এনে তাদের মধ্েয ঝামেলা প্রমাণের কত চেষ্টা। তবে কোচ ক্রিস্তফ গালতিয়েরের দাবি ছিল, বড় কিছু ঘটেনি। যা ঘটেছিল তাও মিটে গেছে। মাঠেই যেন এর প্রমাণ দিলেন দুই তারকা।
পিএসজির দাপটের শুরু কিক অফ দিয়েই। মার্কো ভেরাত্তিকে বল বাড়ান নেইমার, ততক্ষণে লিলের ডি বক্সের দিকে ছুট দেন এমবাপে। সতীর্থর কাছ থেকে বল ফিরে পেয়ে নেইমার দেন কাছেই থাকা মেসিকে। আর্জেন্টাইন লিলের রক্ষণের উপর দিয়ে চমৎকার থ্রু বলে খুঁজে নেন অরক্ষিত এমবাপেকে। বাকি অনায়াসেই সারেন ফরাসি ফরোয়ার্ড।
স্রেফ ৮ সেকেন্ডেই এগিয়ে যায় পিএসজি। ২০০৬-০৭ মৌসুম থেকে অপটা হিসাব রাখার পর এটাই ফরাসি লিগে দ্রুততম গোল। যেকোনো প্রতিযোগিতায় পিএসজির দ্রুততম গোল। সপ্তম মিনিটে একটুর জন্য ব্যবধান দ্বিগুণ করতে পারেননি নেইমার। এমবাপের থ্রু বল পেয়ে বাইরে মারেন ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড। পাঁচ মিনিট পর বামবার শট ঠেকিয়ে পিএসজির ত্রাতা জানলুইজি দোন্নারুম্মা।
সপ্তদশ মিনিটে বল জালে পাঠান মেসি। তবে আক্রমণের শুরুতে নেইমার ও এমবাপে অফসাইডে থাকা গোল মেলেনি। আট মিনিট পর নেইমারের ডিফেন্স চেরা পাস থেকে দারুণ সুযোগ পেয়েছিলেন এমবাপে। তবে গোলরক্ষককে এড়ানোর পথে প্রথম স্পর্শে বল প্রত্যাশার চেয়ে বেশি দূর চলে যাওয়ায় কাজটা হয়ে যায় কঠিন। পরে দুরূহ কোণ থেকে শট আর লক্ষ্েয রাখতে পারেননি তিনি।
২৭তম মিনিটে নুনো মেন্দেসের সঙ্গে চমৎকার বোঝাপড়ায় ব্যবধান দ্বিগুণ করেন মেসি। লিলের ডিফেন্স গুঁড়িয়ে বল পায়ে এগিয়ে যান আর্জেন্টিনা অধিনায়ক। ডি বক্সে খুঁজে নেন মেন্দেসকে। পরে তার কাট ব্যাকে বল পেয়ে ডান পায়ের শটে বল জালে পাঠান তিনি। লিগে এটি তার তৃতীয় গোল। ৩৩তম মিনিটে হাকিমির ক্রসে শট একটুর জন্য লক্ষ্েয রাখতে পারেননি তিনি। তিন মিনিট পর লিলের দুটি সুযোগ ঝাঁপিয়ে ব্যর্থ করে দেন দোন্নারুম্মা।
৩৯তম মিনিটে স্কোর লাইন ৩-০ করে ফেলেন হাকিমি। নেইমারের সঙ্গে ‘ওয়ান-টু’ খেলে এগিয়ে যান এই ডিফেন্ডার। পরে দুরূহ কোণ থেকে চমৎকার শটে বল জালে পাঠান তিনি। চার মিনিট পর গোলদাতাদের তালিকার নাম উঠান নেইমারও। মেসির পাস লিলের একজনের গায়ে লেগে একটু দিক পাল্টালে পেয়ে যান এই ফরোয়ার্ড। কাছের পোস্ট দিয়ে বাকিটা সহজেই সারেন তিনি।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে পিএসজিকে ৫ গোলে এগিয়ে নেন নেইমার। লিলের খেলোয়াড়রা তালগোল পাকালে বল পেয়ে যান হাকিমি। তার বাড়ানো বলে এমবাপের ডামিতে সুবর্ণ সুযোগ এসে যায় নেইমারের সামনে। আলতো টোকায় বাকিটা সারেন তিনি। টানা দুই ম্যাচে জোড়া গোল করলেন ব্রাজিল অধিনায়ক। লিগে তিন ম্যাচে তার গোল পাঁচটি। ৫৪তম মিনিটে ব্যবধান কমায় লিল। বামবার প্রথম শট কোনোমতে ঠেকিয়ে দেন দোন্নারুম্মা। তবে বিপদমুক্ত করতে পারেননি দলকে। ফিরতি বলে বুলেট গতির শটে জাল খুঁজে নেন বামবা।
৫৭তম মিনিটে মেসির শট কোনোমতে জালে যাওয়া ঠেকান লিল গোলরক্ষক। পরের মিনিটে পিএসজি অধিনায়ক মার্কিনিয়োসের হেডও ঠেকিয়ে দেন তিনি। ফিরতি বলে সুযোগ এসেছিল ভিথানিয়ার সামনে। অবিশ্বাস্যভাবে খুব কাছ থেকেও বাইরে মারেন তিনি। ৬৬তম মিনিটে দলের ষষ্ঠ ও নিজের দ্বিতীয় গোলটি করেন এমবাপে। মাঝ মাঠ নেইমারকে বল বাড়িয়ে দ্রুত গতিতে ডি বক্সের দিকে ছুটে যান তিনি। বল ফিরে পেয়ে পেনাল্টি স্পটের কাছ থেকে দারুণ দক্ষতায় বাকিটা সারেন তিনি।
৮৭তম মিনিটে হ্যাটট্রিক পূরণ করেন এমবাপে। প্রতি আক্রমণ থেকে বল পেয়ে নেইমার খুঁজে নেন এমবাপেকে। চমৎকার ফিনিশিংয়ে বাকিটা সারেন তরুণ ফরাসি ফরোয়ার্ড। চলতি আসরে এটি তার চতুর্থ গোল। লিলকে উড়িয়ে দিয়ে আসরে টানা তৃতীয় জয় পেল পিএসজি। গালতিয়ের দলই থাকল শীর্ষে।


প্রকাশিত: আগস্ট ২৩, ২০২২ | সময়: ৬:০৯ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ