আল-কায়েদা নেতা জাওয়াহিরি মার্কিন হামলায় নিহত

সানশাইন ডেস্ক: আল-কায়েদার প্রতিষ্ঠাতা ওসামা বিন লাদেন নিহত হওয়ার পর আন্তর্জাতিক এ সন্ত্রাসী সংগঠনের জন্য এটাই সবচেয়ে বড় আঘাত। আল-কায়েদার শীর্ষ নেতা আয়মান আল-জাওয়াহিরি আফগানিস্তানে সিআইএ-এর ড্রোন হামলায় নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
আল-কায়েদার প্রতিষ্ঠাতা ওসামা বিন লাদেন ২০১১ সালের ২ মে পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদে মার্কিন কমান্ডো হামলায় নিহত হওয়ার পর আন্তর্জাতিক এ সন্ত্রাসী সংগঠনের জন্য এটাই সবচেয়ে বড় আঘাত। বেসামরিক বিমান ছিনতাই করে ২০০১ সালে নিউ ইয়র্কের বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্র (টুইন টাওয়ার), পেন্টাগন আর পেনসিলভানিয়ায় আত্মঘাতী হামলা চালিয়ে ৩ হাজারের বেশি মানুষকে হত্যার ঘটনার অন্যতম পরিকল্পনাকারী হিসেবে বিবেচনা করা হয় মিশরীয় চিকিৎসক জাওয়াহিরিকে, যিনি সে সময় ছিলেন ওসামা বিন লাদেনের শীর্ষ উপদেষ্টা। তাকে ধরিয়ে দেওয়ার বিনিময়ে ২৫ মিলিয়ন ডলার পুরস্কার ঘোষণা করে রেখেছিল যুক্তরাষ্ট্র সরকার।
পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রোববার ভোর ৬টা ১৮ মিনিটে আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে জাওয়াহিরির আস্তানায় সিআইএ-র হামলায় তার মৃত্যু হয়। সোমবার হোয়াইট হাউজের এক বিবৃতিতে প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেছেন, “ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ওই সন্ত্রাসী নেতা আর জীবিত নেই। আমরা কখনও হারিনি।”
কোভিড-১৯ থেকে সেরে ওঠার পর্যায়ে থাকা বাইডেন আরও বলেন, “যদি আপনি আমাদের জনগণের জন্য হুমকি হন, আপনি যেখানেই লুকিয়ে থাকুন আর যত সময়ই লাগুক না কেন যুক্তরাষ্ট্র আপনাকে খুঁজে বের করে হত্যা করবে।” বাইডেন বলেন, জাওয়াহিরি কেনিয়া ও তাঞ্জানিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস ও মার্কিন যুদ্ধজাহাজ ইউএসএস কোল-এ হামলার পরিকল্পনাকারী অথবা এসব হামলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।
বাইডেন প্রশাসনের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেছেন, কাবুলে সিআইএ-এর হামলায় যিনি নিহত হয়েছেন, তিনি জাওয়াহিরি বলেই একাধিক গোয়েন্দা তথ্য থেকে তারা ‘অত্যন্ত আত্মবিশ্বাসের’ সঙ্গে নিশ্চিত হয়েছেন। কাবুলে তার ‘নিরাপদ আস্তানার’ বারান্দায় থাকা অবস্থায় জাওয়াহিরি নিহত হন। বাড়িটিতে তিনি পরিবার পরিজন নিয়ে থাকলেও হামলায় আর কেউ নিহত হয়নি।
ওই কর্মকর্তা বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের সকল নাগরিক, মার্কিন স্বার্থ আর জাতীয় নিরাপত্তার জন্য জাওয়াহিরি ছিলেন হুমকি। তার মৃত্যু আল-কায়েদার জন্য একটি বড় ধাক্কা। এর ফলে এ সংগঠনের টিকে থাকার সক্ষমতা অনেকটা কমে যাবে।” বিগত বছরগুলোতে বহুবার জাওয়াহিরির মৃত্যুর গুজব বেরিয়েছে, তার স্বাস্থ্য পরিস্থিতি নিয়েও বিভিন্ন সময়ে নানা খবর এসেছে।
এখন কাবুলে তার মৃত্যুর খবরে প্রশ্ন উঠছে, ২০২১ সালে আফগানিস্তানের ক্ষমতায় ফেরা তালেবানই জাওয়াহিরিকে সেখানে আশ্রয় দিয়েছিল কি না। যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের মিত্ররা আফগানিস্তান থেকে তাদের বাহিনী প্রত্যাহার করে নিলে দুই দশক পর কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নেয় তালেবান। তালেবান মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ এক বিবৃতিতে কাবুলে একটি হামলার ঘটনার কথা স্বীকার করে এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। তার ভাষায়, এটা ‘আন্তর্জাতিক নিয়মের লঙ্ঘন’। রোববার সকালে বড় ধরনের বিস্ফোরণে কাবুল কেঁপে উঠেছিল।
আফগানিস্তানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আব্দুল নাফি টাকোর বলেন, “শেরপুরের একটি বাড়িতে রকেট আঘাত হেনেছে। বাড়িটি খালি থাকায় সেখানে কেউ হতাহত হয়নি।” পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে তালেবানের একটি সূত্র রয়টার্সকে জানায়, সেদিন সকালে কাবুলের ওপর দিয়ে অন্তত একটি ড্রোন উড়ছিল বলে বেশ কয়েকটি প্রতিবেদন পাওয়া গেছে।
আল কায়েদার অন্যান্য জ্যেষ্ঠ সদস্যদের সঙ্গে মিলে জাওয়াহিরি ২০০০ সালের ১২ অক্টোবর ইয়েমেনে মার্কিন নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ ইউএসএস কোল এ চালানো হামলার পরিকল্পনা করেছিলেন বলে বিশ্বাস যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের। ওই হামলায় ১৭ জন মার্কিন সেনা নিহত ও ৩০ জনেরও বেশি আহত হয়েছিল।
এর আগে ৭ অগাস্ট, ১৯৯৮-তে কেনিয়া ও তাঞ্জানিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসে বোমা হামলায় ২২৪ জন নিহত ও ৫ হাজারেরও বেশি মানুষ আহত হয়; এই হামলায়ও জাওয়াহিরির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল বলে বিশ্বাস যুক্তরাষ্ট্রের। যুক্তরাষ্ট্রে ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের হামলার পর ওই বছরের শেষ দিকে মার্কিন বাহিনী আফগানিস্তানে অভিযান চালিয়ে তালেবান সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করলেও বিন লাদেন ও জাওয়াহিরি পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছিলেন।


প্রকাশিত: আগস্ট ৩, ২০২২ | সময়: ৫:৪৮ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ