সর্বশেষ সংবাদ :

নতুন উদ্যোক্তা তৈরির ক্ষেত্রে বড় প্রতিবন্ধকতা দুর্নীতি

স্টাফ রিপোর্টার: বাংলাদেশের প্রতিটি সরকারি প্রতিষ্ঠান দুর্নীতিগ্রস্ত। দুর্নীতির নেতিবাচক প্রভাব ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উদ্যোক্তাদের মারত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এমনকি করোনাকালীন মহামারির মধ্যেও দুর্নীতির মাত্রা হ্রাস পায়নি। বাংলাদেশে ব্যাবসায় বিনিয়োগ এবং নতুন উদ্যোক্তা তৈরির ক্ষেত্রে অন্যতম বড় প্রতিবন্ধকতা হল দুর্নীতি।
রবিবার (৩১শে জুলাই) সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) কর্তৃক আয়োজিত এক আঞ্চলিক আলোচনা সভায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পখাতের উদ্যোক্তারা এসব কথা বলেন। ব্যবসার ক্ষেত্রে উদ্যোক্তাদের প্রতিনিয়ত সম্মুখীন হওয়া দুর্নীতি এবং এই দুর্নীতি প্রতিরোধে একটি সমন্বিত প্ল্যাটফর্ম তৈরির প্রয়োজন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট এন্টারপ্রাইজ (সিআইপিই)- এর সহায়তায় এই আলোচনা সভাটি রাজশাহীর হোটেল রয়্যাল রাজ অ্যান্ড কনডোমিনিয়াম– এ অনুষ্ঠিত হয়। রাজশাহী বিভাগের বিভিন্ন পর্যায়ের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পখাতের প্রতিনিধিরা এতে অংশগ্রহণ করেন।
আলোচনায় অংশগ্রহনকারী উদ্যোক্তারা তাদের ব্যবসা শুরু করার ক্ষেত্রে এবং পরবর্তীতে ব্যবসা পরিচালনা করার ক্ষেত্রে শিকার হওয়া দুর্নীতির বিভিন্ন অভিজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তারা বলেন যে, বাংলাদেশে ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে লাইসেন্স বা অনুমোদন নেয়ার ক্ষেত্রে প্রায় ১৩ থেকে ১৪টি বিভাগের সাথে যুক্ত হতে হয় যার প্রতিটি ক্ষেত্রেই দুর্নীতি জড়িত। রেজিস্ট্রেশন, ট্রেড লাইসেন্স তৈরি বা অন্যান্য ক্ষেত্রে হয়রানি, ব্যাবসায়িক বিড়ম্বনা ও ঝামেলা এড়ানোর জন্য প্রধানত উদ্যোক্তারা ঘুষ বা বখশিস প্রদান করতে বাধ্য হন যা দুর্নীতিরই নামান্তর।
প্রত্যন্ত অঞ্চলে ব্যাংকগুলো ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের সাহায্য করতে অনীহা প্রকাশ করে এবং অনেক ক্ষেত্রে সাহায্যের পরিবর্তে উপরন্তু হয়রানি এবং হেনস্তার শিকার করে বলে উদ্যোক্তারা অভিমত প্রদান করেন। তাছাড়া অনলাইনে ভ্যাট প্রদান প্রক্রিয়াতে অনিয়ম এবং অব্যবস্থাপনার কথা তারা উল্লেখ করেন।
অংশগ্রহনকারী এক নারী উদ্যোক্তা বলেন, ব্যাংক থেকে লোন গ্রহণ করার সময় অতিরিক্ত অর্থ প্রদান করতে হয়, অন্যথায় তাদের লোন পেতে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। উদ্যোক্তারা বলেন যে, দুর্নীতি এবং অন্যান্য অনিয়মের কারণে প্রণোদনা প্যাকেজের সুযোগ থেকে অনেক ক্ষেত্রে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীয়া বঞ্চিত হন। রাজশাহ্রী বিখ্যাত সিল্ক শিল্পের দুরাবস্থা এবং জাতীয় পর্যায়ে পাট শিল্পের ধ্বংসের কারণ হিসেবে উদ্যোক্তারা মূলত দুর্নীতিকেই দায়ী করেন। ব্যবসা পরিচালনায় অনিয়ম এবং দুর্নীতির শিকার হওয়া উদ্যোক্তারা ব্যবসায়িক সংগঠন এবং রাষ্ট্রীয় কোনো সংস্থার কাছ থেকে সহযোগিতা পান না। এসব সংগঠনই মূলত নানাভাবে হয়রানির শিকার করেন এবং দুর্নীতির পথকে বেছে নিতে উৎসাহ প্রদান করেন বলে তাঁরা মতামত প্রদান করেছেন।
দুর্নীতি প্রতিরোধে জাতীয় পর্যায় থেকে শুরু করে তৃনমূল পর্যায়ে বিস্তারিত আলোচনা এবং সেমিনার আয়োজন করা অত্যন্ত জরুরী। এছাড়াও সম্মিলিতভাবে একটি দুর্নীতিবিরোধী প্লাটফর্ম তৈরি করার প্রয়োজনীয়তা এবং সেই প্লাটফর্মে সবার ঐক্যবদ্ধভাবে অংশগ্রহণের আগ্রহ এই আলোচনা সভার মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। সরকারি পদক্ষেপ ও অন্যান্য ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের সুষ্ঠুভাবে কাজ করার পাশাপাশি ধর্মীয় অনুশাসন, সামাজিক ও নৈতিক শিক্ষার উপরেও গুরুত্ব পদান করার কথা উদ্যোক্তারা উল্লেখ করেছেন।


প্রকাশিত: আগস্ট ১, ২০২২ | সময়: ৫:৩৯ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ