প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন রক্ষা করলে নতুন প্রজন্ম ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারবে : রতন চন্দ্র পন্ডিত

নুরুজ্জামান,বাঘা : সারা দেশে ৫ শ’২৭ টি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন রয়েছে। এ সব নিদর্শন একটি জাতির ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির ধারক ও বাহক হিসেবে পরিগণিত৷ বাংলাদেশের হাজার বছরের ইতিহাস, জাতিসত্ত্বা বিকাশের সুদীর্ঘ পথ-পরিক্রমা উদঘাটনে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলো অনন্য ভূমিকা পালন করছে৷ এ গুলো রক্ষা করার দায়িত্ব সকলের।

রবিবার(১৫-মে) দুপুরে প্রায় ৫ শ’বছর পূর্বে সুলতান আমলে নির্মানকৃত বাঘার ঐতিহাসিক শাহী মসজিদ পরিদর্শন শেষে স্থানীয় সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় কালে এ কথা বলেন প্রাথমিক এবং গনশিক্ষা মন্ত্রনালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব ও বর্তমান বাংলাদেশ প্রত্নতাত্ত্বিক(আরকলজি)বিভাগ এর মহাপরিচালক রতন চন্দ্র পন্ডিত ।

তিনি সাংবাদিকদেরে বলেন, আমাদের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের মধ্যে রয়েছে প্রাচীন স্থাপত্য-বৌদ্ধবিহার, মন্দির, মসজিদ, আবাসিক গৃহ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, জমিদার প্রাসাদ অথবা রাজপ্রাসাদ, অসংখ্য প্রাচীন পুকুর ও দীঘি,শানবাঁধানো ঘাট, পানীয় জলের কুয়া, প্রস্তরলিপি, মূদ্রা, প্রাচীন পুঁথি, পোড়ামাটির ফলকচিত্র, পাথরের ভাস্কর্য, ইত্যাদি৷

তিনি বলেন,বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে থাকা প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের সমৃদ্ধ ভাণ্ডার এ দেশের ইতিহাস বিনির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে৷এ সব ইতিহাস এ প্রজন্মকে জানাতে হবে।বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের মধ্যে রয়েছে কুমিল্লার লালমাই-ময়নামতি ও সিলেটের চাকলাপুঞ্জিতে পাওয়া প্রাগৈতিহাসিক হাতিয়ার, মৌদ্ধ যুগে এ অঞ্চলের প্রশাসনিক কেন্দ্র বগুড়া মহাস্থানগড়, চাপাইনবাবগঞ্জের সোনা মসজিদ, রাজশাহীর বাঘা শাহী মসজিদ, পুঠিয়ার ও নাটোরের রাজবাড়ি, নওগার কুসুম্বা মসজিদ,পাহাড়পুর বদ্ধ বিহার, বাগেরহাটে অবস্তিত ষাট গম্বুজের মসজিদ অন্যতম। এসব পুরাতন স্থাপনা যাতে ধবংস হয়ে না যায় এ জন্য আমাদের ডিপারমেন্ট থেকে কাজ করে থাকি।

তিনি বাঘার কৃতি সন্তান ও মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব রথীন্দ্রনাথ দত্তের নাম উল্লেখ করে বলেন, তিনি বাঘার ঐতিহাসিক শাহী মসজিদ, সু-বিশাল দিঘী,হযরত শাহ্ দৌলার মাজার ও জাদুঘরকে ঘিরে একটি পর্যটন কেন্দ্র গড়ার দাবি রেখেছেন আমার কাছে।বর্তমানে আমাদের পর্যাপ্ত ফান্ড নেই। তবে স্থানীয় পৌরসভা, মাজার কর্তৃপক্ষ ,উপজেলা পরিষদ এবং জেলা প্রশাসক মহাদ্বয় চাইলে এটি করা সম্ভব।

এ সময় বাংলাদেশ প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগ এর মহাপরিচালক রতন চন্দ্র পন্ডিত এর সাথে উপস্থিত ছিলেন, প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগ রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক নাহিদা সুলতানা,বাঘা উপজেলা নির্বাহী অফিসার পাপিয়া সুলতানা, কেন্দ্রীয় প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক সমিতির সভাপতি আনজারুর ইসলাম,বাঘা জাদু ঘরের দায়িত্বে নিয়োজিত(ইনচার্জ)এনায়েত হোসেন, বাঘা উপজেলা হিন্দু বৈধ্য ঐক্য পরিষদের সভাপতি শ্রী-সুজিত কুমার বাকু, সাবেক বাঘা পৌর আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক কামাল হোসেন ও বাঘা প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামান সহ চারজন সাংবাদিক এবং অত্র এলাকার সুধীজন।

উল্লেখ্য বাঘা উপজেলায় যে শাহী মসজিদটি রয়েছে, এটি ইতিহাস ও ঐতিহ্যের এক অন্যতম নিদর্শন । রাজশাহী জেলা সদর হতে প্রায় ৪১ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে এটি অবস্থিত । প্রায় ৫শত বছরের পুরনো সুলতানি আমলের এই নিদর্শনটি দেশের অন্যতম একটি দর্শনীয় স্থানে পরিণত হয়েছে। মসজিদটি ১৫২৩-১৫২৪ সালে (৯৩০ হিজরি) হুসেন শাহী বংশের প্রতিষ্ঠাতা আলাউদ্দিন শাহের পুত্র সুলতান নসরাত শাহ নির্মাণ করেন। পরবর্তীতে বিভিন্ন সময় এই মসজিদের সংস্কার করা হয় । দর্শনার্থীদের কাছে সমাদৃত ১০ গম্বুজ বিশিষ্ট এ মসজিদের ছবি রয়েছে বাংলাদেলে ৫০ টাকা নোটে।

প্রায় ২৫৬ বিঘা জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত দর্শনীয় শাহী মসজিদ, সুবিশাল দীঘি ও আউলিয়াদের সমাধি স্থান, মূল দরগাহ্ সবকিছু। সমতল ভূমি থেকে প্রায় ৮-১০ ফুট উঁচু একটি বেদির উপরে এ মসজিদটি তৈরি করা হয়েছে। এর দুপাশ দিয়ে দুটি বিশাল গেট রয়েছে। এ ছাড়াও রয়েছে, তৎকালীন বরেন্দ্র অঞ্চলের ঐতিহ্যকে টেরাকোটা তথা পোড়ামাটির কারুকাজের দেশজ নিদর্শন দিয়ে শাপলা ও লতা-পাতা সহ এ অঞ্চলের প্রধান অর্থকারি ফসল আমের ছবি সম্বলিত পার্সিয়ান খোদাই শিল্পে ব্যবহৃত হাজার রকম কারুকাজ। যা দেখলে সকলের নজর কাড়ে।


প্রকাশিত: মে ১৫, ২০২২ | সময়: ৪:২০ অপরাহ্ণ | সানশাইন