সর্বশেষ সংবাদ :

ইউক্রেইনে যুদ্ধে দুশ্চিন্তায় বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা

সানশাইন ডেস্ক: করোনাভাইরাসের মহামারী বাংলাদেশের রপ্তানিকে টেনে নামিয়েছিল খাদে, সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে হারানো গতি ফিরে পাওয়ার চেষ্টায় ছিলেন ব্যবসায়ীরা, কিন্তু পূর্ব ইউরোপে শুরু হওয়া নতুন যুদ্ধ তাদের কপালে ফিরিয়ে এনেছে চিন্তার ভাঁজ।
সাড়ে তিন মাসের উত্তেজনার পর বৃহস্পতিবার সত্যি সত্যি ইউক্রেইনে হামলা চালিয়ে যুদ্ধ শুরু করে দিয়েছে রাশিয়া। এর জবাবে রাশিয়ার ব্যক্তি ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ওপর একের পর এক নিষেধাজ্ঞা দিয়ে চলেছে যুক্তরাষ্ট্র এবং তাদের পশ্চিমা মিত্ররা।
বাল্টিক অঞ্চলের যে সমুদ্রপথ ধরে রাশিয়ার বাজারে বাংলাদেশি পণ্যগুলো এতোদিন রপ্তানি হচ্ছিল, সেসব এলাকাতেও ছড়িয়েছে যুদ্ধের উত্তেজনা। ফলে সেসব এলাকার চলমান রপ্তানি আদেশ এবং ভবিষ্যতের ক্রয়াদেশ নিয়ে নতুন করে উদ্বেগে পড়ার কথা বলেছেন তৈরি পোশাক খাতের কয়েকজন উদ্যোক্তা।
পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর সহ-সভাপতি শহিদুল্লাহ আজিম বলেন, “এই যুদ্ধ যে কেবল বাজার অস্থিতিশীল করছে- তা নয়, বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেলের দামও বাড়িয়ে দিচ্ছে। তাতে জাহাজ ভাড়া আরও বেড়ে যেতে পারে। এমনিতেই জাহাজ ভাড়া বাড়ায় আমদানি-রপ্তানি খাত ধুঁকছে।”
তিনি জানান, বাংলাদেশ থেকে সরাসরি ৬৫ কোটি ডলার এবং অন্যান্য দেশের মাধ্যমে আরও ২০ থেকে ৩০ কোটি ডলারের পোশাক পণ্য রাশিয়ায় রপ্তানি হয়। “এই যুদ্ধ আমাদের অনেক উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাশিয়া ইউরোপের কাছাকাছি দেশ হওয়ায় এই যুদ্ধের প্রভাবে ইউরোপের বাজারও অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে।”
তৈরি পোশাক কারখানা ফ্যাশন ফ্ল্যাশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হেলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, “বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানির অনেক বড় একটি বাজার রাশিয়া। ইউক্রেইনের সঙ্গে দেশটি যুদ্ধে জড়িয়ে যাওয়ার পর বাংলাদেশে পোশাক রপ্তানিকারকরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। “গতকালও আমরা নিজেদের মধ্যে কিছু আলাপ করেছি। রাশিয়ার হয়ে যারা আমাদের কাছ থেকে পোশাক কেনে, তাদের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করেছি। তাদেরও কিছু করার নেই।”
হেলাল উদ্দিন বলেন, বিদেশি ক্রেতারা এই পরিস্থিতিতে ‘একটু অপেক্ষা করতে’ বলছেন। কিন্তু পোশাক প্রস্তুতের পর তা নিয়ে অপেক্ষা করা কঠিন। কারণ এখানে ব্যাংকের দায়সহ নানা বিষয় জড়িত। “আমি রাশিয়ায় নিয়মিত পোশাক পণ্য পাঠাই। সেন্ট পিটার্সবুর্গ ও মস্কো শহরে আমার পণ্য যায়। ফ্রান্সের একজন ক্রেতার মাধ্যমে রাশিয়ায় পণ্য পাঠাচ্ছিলাম। সমুদ্র পথে ইউক্রেইনের কিয়েভ গিয়ে সেখান থেকে পণ্যগুলো রাশিয়ায় যেত এতদিন।” যুদ্ধ শুরু হওয়ায় ওই পথে পণ্য পাঠানোর আর সুযোগ থাকছে না।
রাশিয়ার সঙ্গে সরাসরি এলসি খোলার পদ্ধতি না থাকায় নেদারল্যান্ডস, নটরডেম, সুইডেন ও নরওয়ে হয়েও রাশিয়ার পিটার্সবুর্গে বাংলাদেশের পণ্য যায়। পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞা সেখানেও প্রভাব ফেলবে। বাংলাদেশে অনেক রুশ ক্রেতার কার্যালয় রয়েছে জানিয়ে হেলাল উদ্দিন বলেন, ঢাকার উত্তরা ও গুলশানে অফিস খুলে তারা এদেশের পোশাক মালিকদের সঙ্গে ব্যবসা করেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অগ্রিম টাকা পরিশোধ করে রাশিয়ান ক্রেতারা পণ্য নেন।
এছাড়া হংকং, সিঙ্গাপুর ও দুবাইয়েও রাশিয়ার ক্রেতারা আছেন। তাই রাশিয়ার ওপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা থাকলেও দেশটির সঙ্গে ‘বেশ ভালোভাবেই’ ব্যবসা করা যাচ্ছিল। ভবিষ্যতে বাংলাদেশ থেকে রাশিয়ায় পণ্য রপ্তানি সম্ভব না হলে চীন এই সংকটের সুযোগ নেবে বলে ব্যবসায়ী হেলাল উদ্দিনের ধারণা। ২০২০-২০২১ অর্থবছরে রাশিয়ায় ৬৬ কোটি ৫৩ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এর মধ্যে ৫৯ কোটি ৩৬ লাখ ডলারের পোশাক পণ্য রয়েছে। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের সাত মাসে রপ্তানি হয়েছে ৪৫ কোটি ৮৫ লাখ ডলারের পণ্য।
বিজিএমইএর হিসাবে, রাশিয়ায় ২০১৯ সালে ৪৮ কোটি ২৪ লাখ ডলার, ২০২০ সালে ৪৭ কোটি ৩৫ লাখ ডলার এবং সর্বশেষ ২০২১ সালে ৬৮ কোটি ৭৮ লাখ ডলারের পোশাক পণ্য রপ্তানি হয়েছে বাংলাদেশ থেকে। বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানির অপ্রচলিত বাজারের মধ্যে জাপান ও অস্ট্রেলিয়ার পরেই রাশিয়ার অবস্থান। ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, রাশিয়ায় তৈরি পোশাক ছাড়াও হিমায়িত মাছ, কাকড়া, সবজি, ওষুধ, চামড়া পণ্য ও চামড়া জুতা, হেডগিয়ার, হস্তশিল্পসহ বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি হয়।


প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২২ | সময়: ৩:৫৩ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ