দশ জনকে রান্না করে খাওয়ানোর প্রস্তাব অস্বীকৃতি জানানোয় রাবি শিক্ষার্থীকে ছাত্রলীগ নেতার মারধর

রাবি প্রতিনিধি: দশ জনকে রান্না করে খাওয়ানোর প্রস্তাবে অস্বীকৃতি জানানোর ফলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) এক শিক্ষার্থীকে হলের অতিথি কক্ষে ‘গেস্ট রুম’ নিয়ে মারধর ও হুমকি প্রদানের অভিযোগ উঠেছে হলের দায়িত্বপ্রাপ্ত ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে। গতকাল সোমবার (১৮ ডিসেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব আব্দুল লতিফ হলে এই ঘটনা ঘটে।
এ বিষয়ে মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর) ভুক্তভোগী নিজের নিরাপত্তা চেয়ে হল প্রাধ্যক্ষ বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
এঘটনায় অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবী বিভাগের ২০১৫-১৬ সেশনের শিক্ষার্থী তাসকিফ আল তৌহিদ। তিনি লতিফ হল শাখা ছাত্রলীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা এবং শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবুর অনুসারী। অন্যদিকে ভুক্তভোগী মফিজুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্স এণ্ড হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী। তিনি নবাব আব্দুল লতিফ হলের ১০৪ নম্বর কক্ষের আবাসিক ছাত্র।
ভুক্তভোগী অভিযোগপত্রে জানান, ‘গত সোমবার বিকেলে চিকিৎসার জন্য ডাক্তারের নিকট যাওয়ার পথে ছাত্রলীগ নেতা তৌফিকের সঙ্গে দেখা হয়। তখন আমি কোথায় যাচ্ছি তিনি জিজ্ঞেস করেন এবং রিপোর্টটা হাতে নেন। তারপর আমার বাবার পেশা জানতে চাইলে বলি, বাবা রিক্সা চালক। তখন তিনি বলেন, ‘বাবা রিক্সা চালক অথচ তুই এতো টাকা দিয়ে ডাক্তার দেখাস কি করে’। এমনকি বাবাকে হেয় করে বিভিন্ন কথা বলতে থাকেন। তখন আমি একটি সামাজিক সংগঠন থেকে আর্থিক সহায়তা নিয়ে চিকিৎসা করছি বলে জানাই। এটা শোনার পর তিনি বিদ্রুপ করে বলেন, ‘তুই রান্না করে দশ জনকে খাওয়াবি’।’
অভিযোগপত্রে তিনি আরও বলেন, এসময় আমি প্রতিবাদ করলে তিনি বলেন, অমুক (কারো নাম উল্লেখ না করে) নাকি তিন হাজার টাকা পায়। আমি উত্তর জানাই, আমার কাছে কেউ টাকা পায় না। এ নিয়ে উভয়ের মধ্যে তর্কবিতর্ক হয়। এক পর্যায়ে তৌহিদ সহ তার কয়েকজন অনুসারী মিলে আমাকে গেস্ট রুমে নিয়ে যান এবং পিঠে একটি আঘাত করে গালিগালাজ করেন ও হল থেকে বের হয়ে যাওয়ার হুমকি দেন। এসময় তারা আমাকে ডাক্তারের কাছে যেতে দিচ্ছিল না। এ অবস্থা দেখে হলের পাহারাদারসহ অন্যান্যরা এগিয়ে আসলে তারা আমাকে ছেড়ে দেন। পরবর্তীতে তিনি আমাকে ফোন করে তার কক্ষে দেখা করতে বলেন। এ অবস্থায় আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।
অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে ছাত্রলীগ নেতা তাসকিফ আল তৌহিদ বলেন, এটা রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র। এটা শামীম (হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি) করাচ্ছে। এটা কিছুই না। এরকম কোনো ঘটনায় ঘটেনি। হল প্রাধ্যক্ষ এবিষয়ে সবকিছু জানেন।
এবিষয়ে হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক এ.এইচ.এম মাহবুবুর রহমান বলেন, গতকালের ঘটনার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আজ সকালে উভয়পক্ষের সঙ্গে বসে বিষয়টির সমাধান করা হয়েছে। এবং যতদিন পর্যন্ত ওই শিক্ষার্থী হলে থাকবে ততদিন পর্যন্ত তাকে বিরক্ত করবে না, এটাও বলা হয়েছে। তবে রান্না করে খাওয়ানোর কথা বলেছে বা পিঠে আঘাত করেছে, এ ব্যাপারে আমার কাছে কোনো তথ্য নেই।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক বলেন, আমি অভিযোগটি দেখেছি। সেটা মূলত হল প্রাধ্যক্ষ বরাবর দেয়া হয়েছে। সে শিক্ষার্থী আমাকে ফোন দিয়েছিল। আমি এ বিষয়ে হল প্রাধ্যক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। দুই পক্ষকে ডেকে তিনি এটার মীমাংসা করে দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন। তবুও যদি হল প্রশাসন এটা সমাধান না করতে পারে, তাহলে এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণ করবে।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গতবছরের ২৩ জুন মধ্যরাতে তৌহিদের বিরুদ্ধে হলের মুন্না নামের এক শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় তাকে হল থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন অধ্যাপক প্রতিবাদ জানালে হলের গৃহশিক্ষক ড. হামিদুল ইসলামকে আহ্বায়ক তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তবে এখন ঘটনার দেড় বছর পরও সেই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়নি। এর মাঝে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবু তাকে হলে দায়িত্ব দেওয়ায় তিনি বর্তমানে হলেই থাকছেন।
সাময়িক বহিস্কার করা সত্বেও তৌহিদ হলে থাকা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে হল প্রাধ্যক্ষ বলেন, ‘ছাত্রলীগের নতুন কমিটি হওয়ার পরে সভাপতির একজন প্রতিনিধি, সাধারণ সম্পাদকের একজন প্রতিনিধি দেওয়া হয়েছে। তৌহিদকে পাঠানো হয়েছে সভাপতির (শাখা ছাত্রলীগ) প্রতিনিধি হিসেবে। ওরা তো নিজেরাও অবগত আছে, তাকে বহিস্কার করা হয়েছিল আবার কেন তাকে পাঠাব। তারা হয়ত চিন্তা-ভাবনা করেই পাঠিয়েছে। সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক (শাখা ছাত্রলীগ) যেহেতু দায়িত্ব দিয়েছে, তারা এসে তাকে বুঝে দিয়ে গেছে আমার কাছে।’
তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে কিনা এ প্রসঙ্গে হল প্রাধ্যক্ষ বলেন, ‘তাকে সাময়িক বহিস্কার করা হয়েছিল। সেটার তদন্ত প্রতিবেদন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে যায়নি, সেহেতু সে স্থায়ী বহিস্কার হয়নি। আর মুন্না নামের সেই শিক্ষার্থী পরবর্তীতে তার অভিযোগ প্রত্যাহার করে নিয়েছিল। তারপর সেটা ধামাচাপা পরে যায়।’
বহিস্কৃত হওয়া সত্বেও তৌহিদকে হলে দায়িত্ব দেয়ার বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবু বলেন, আমি এটা জানিনা। আজ রাতে এ বিষয়ে তাদের সঙ্গে বসব।


প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২০, ২০২৩ | সময়: ৬:২১ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ