এক থানা থেকে ধরে অন্য থানায় নিয়ে মাদক দিয়ে ফাঁসানোর অভিযোগ

স্টাফ রিপোর্টার : রাজশাহীর বাঘা থানার পুলিশের এক এসআইএর বিরুদ্ধে পাশের থানা এলাকা থেকে এক মোটরসাইকেল যাত্রীকে ধরে নিয়ে এসে মাদকের মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযুক্ত ওই এসআইএর নাম রবিউল ইসলাম। এদিকে এই মামলায় যাদেরকে সাক্ষ্মী করা হয়েছে তাদের দাবি সাক্ষ্মী করতে তাদের কাছ থেকে সাদা কাগজে সই নেয়া হয়েছে।
ঘটনা সূত্রে জানা যায়, গত ১৪ ফেব্রুয়ারি রাত্রি আনুমানিক সোয়া ১১টার দিকে চারঘাট থানাথীন রাওথা এলাকার নিজ বাড়ি থেকে গার্মেন্টস সামগ্রী ব্যবসায়ী উজ্জল হোসেন (৩০) তার মায়ের জন্য ওষুধ কিনতে মোটরসাইকেল নিয়ে বের হন। এলাকার মিশাবপাড়া মোড়ের কাছে আসলে বাঘা থানার এসআই রবিউল ইসলাম সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে তার গতি রোধ করেন। এরপর রাত্রি আনুমানিক পৌনে একটার দিকে উজ্জল তার বড় ভাই ওয়াসিমকে কল করে তার অবস্থা তুলে ধরে জানান তার মোটরসাইকেলের কাগজ সাথে না থাকায় তাকে আটক করা হয়েছে, কাগজ নিয়ে গেলে তাকে ছেড়ে দেয়া হবে। ওয়াসিম মোটরসাইকেলের কাগজপত্র নিয়ে ঘটনাস্থলে গেলে আশপাশের মানুষের কাছ থেকে জানতে পারেন তাকে মারধর করা হয়েছে এবং তাকে বাঘা থানার দিকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ওয়াসিম বাড়িতে ফিরে আসলে রাত্রি আনুমানিক দেড়টার দিকে বাঘা থানীধন মহাদীপুর এলাকার রিয়াল নামে এক ব্যক্তি তাকে মোবইল করে জানান, পুলিশ উজ্জলকে নিয়ে বাঘা এলাকার বিনোপুর বাজারের দিকে গেছে। এক লাখ টাকা দিলে তাকে ছেড়ে দেয়া হবে। খবর পেয়ে উজ্জলের ছোটভাই জুয়েল তাকে নিয়ে এসআই রবিউলের সাথে দেখা করতে বিনোদপুর বাজারে উপস্থিত হন ওয়াসিম। এসময় জুয়েলকে জানানো হয় ৪০ মিনিটের মধ্যে এক লাখ টাকা দিতে না পারলে উজ্জল ও তার বড়ভাই ওয়াসিমের বিরুদ্ধে মদক মামলা দেয়া হবে। আর দিলে ছোট একটা মামলা দেয়া হবে।
পরের দিন ১৫ ফেব্রুয়ারি বেলা ১০ টার দিকে রাওথা ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আয়নাল হক সহ স্থানীয় কয়েকজন জনপ্রতিনিধিকে সাথে নিয়ে জুয়েল এসআই রবিউলের বাড়িতে গেলে তাদেরকে জানানো হয়, উজ্জল তার সাথে অনেক বড় বেয়াদবী করেছে। এখন এক কোটি টাকা দিলেও তাকে ছাড়া হবে না।
এরপর উজ্জলকে কোর্টে চালান দেয়া হয়। পরবর্তিতে আদালত থেকে মামলার কপি তুলে উজ্জলের পরিবার জানতে পারে তাকে ১০০ গ্রাম হেরোইনের মামলা দেয়া হয়েছে। একই মামলায় উজ্জল সহ আসামী করা হয়েছে তার বড়ভাই ওয়ামিকে। যেখানে আওয়াসিমকে পালতক দেখান হয়েছে।
এই মামলায় অন্যান্যদের মধ্যে সাক্ষ¥ী করা হয়েছে বাঘা থানাধীন মীরগঞ্জের একটি বাজারের প্রহরী মো, তালেব (৩৫) ও নাজিমকে (৩২)। তাদের সাথে কথা হলে নাজিম জানান, ঘটনার দিন রাতে তিনি বাঘার মীরগঞ্জ বাজারের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। এসময় তিনি পুলিশ দেখে দাঁড়ালে তাকে সাক্ষ¥ী হবার কথা জানিয়ে একটি কাগজে সই করতে বলা হয়। পুলিশের কথামতো তিনি সাদা একটি কাগজে সই করেছেন। তবে ওই ঘটনার বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না বা মাদকও দেখেননি। একই কথা উল্লেখ করেছেন বাজারের নৈশপ্রহরী তালেব। তিনি জানান, ওইদিন রাতে উজ্জলকে রাতে ধরে নিয়ে আসা হয় চারঘাট থানা এলাকা থেকে। এরপর তালেবকে বলা হয় সাক্ষ¥ী হতে। পুলিশের কথামতো তিনি সাদা কাগজে সই করেছেন।
এদিকে ঘটনার বর্ণনা তুলে ধরে রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নে সংবাদ সম্মেলন করেছেন উজ্জলের পরিবার। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন উজ্জলের স্ত্রী জুলেখা বেগম ও তার দুই শিশু সন্তান, উজ্জলের ভাই জুয়েল রানা, বোন পারভি ও ঝর্ণা। জুলেখার পক্ষে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান উজ্জলের ছোট ভাই জুয়েল। সংবাদ সম্মেলনে উজ্জলের স্ত্রী দাবি করেন, তার স্বামীকে মাদক দিয়ে ফঁসানো হয়েছে। এসময় উজ্জলের স্ত্রী আরও দাবি করেন প্রায় ১০ বছর আগে উজ্জলের এক চাচাতো ভাইকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। সেই মামলার সাক্ষ্মী ছিলেন উজ্জল। ওই মামলার রায়ে আসামী সামাদ মোল্লার ফাঁসির রায় ঘোষণা করা হয়েছে। সামাদ মোল্লা ভারতে পালতক রয়েছে। সে নানা ভাবে উজ্জলকে চাপ দিচ্ছে ওই হত্যা মামলায় মিথ্যা সাক্ষ্মী দিতে। পুলিশের সাথে যোগসাযোশ রয়েছে সামদ মোল্লার এমটাই দাবি উজ্জলের পরিবারের।
এবিষয়ে বাঘা থানার এসআই রবিউল ইসলাম জানান, উজ্জলের বিরুদ্ধে ৫ থেকে ৬ টি মাদকের মামলা রয়েছে। ওই রাতে মাদক বিরোধী অভিযানের নেতৃত্বে ছিলেন সাবইন্সপেক্টর শাহআলম। উজ্জলকে বাঘা থানাধীন মীরগঞ্জ এলাকায় অবস্থিত ব্রাকের একটি অফিসের সামনের থেকে মাদক সহ আটক করা হয়। সাক্ষ¥ীদের সাদা কাগজে সই প্রসঙ্গে তিনি জানান, মাদক কারবারীদের ভয়ে এলাকার মানুষ মুখ খুলছে না। তাদের ভয়ে সাক্ষ্মীরা এখন এসব বলছে। উজ্জল ও তার ভাই ওয়াসিম মাদকের ব্যবসা করে এখন বিপুল অর্থসম্পদের মালিক বনে গেছে।


প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২১, ২০২২ | সময়: ৮:০৭ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ