সর্বশেষ সংবাদ :

বৃষ্টির ক্ষতি ও কয়লার বাড়তি দামে তচনচ ইটভাটার ব্যবসা

মাহফুজুর রহমান প্রিন্স, বাগমারা: মাঘের শেষে অসময়ে টানা বর্ষণে চরম বিপাকে পড়েছে বাগমারার প্রায় অর্ধশতাধিক ইটভাটা মালিক। বর্ষণ অব্যাহত থাকায় তারা চরম উদ্বেগ উৎকন্ঠার মধ্যে রয়েছেন। আবার ভরা মৌসুমে কয়লার অভাবে ঠিকমত ইট পোড়াতে না পেরে তারা চরম বিপাকে পড়েছেন।
বাগমারা ইট প্রস্তুতকারি মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দরা টানা বর্ষণ সহ হটাৎ করেই কয়লার দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় তাদের ব্যবসায় চরম দুর্ভোগ সৃষ্টি হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, একদিকে কয়লার দাম টন প্রতি ১৮-১৯ হাজার টাকা বৃদ্ধি এবং অসময়ে দফায় দফায় বৃষ্টির কারণে তারা বিপুল অংকের টাকা ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
জানা গেছে, উপজেলার ১৬ টি ইউনিয়ন ও ২টি পৌরসভা মিলে প্রায় ৬০টি অধিক ইটভাটা রয়েছে। এসব ভাটায় সরকারি নিয়ম মেনে কয়লা দিয়ে ইট পোড়ানো হলেও এখানে প্রায় বিশটির অধিক ড্রামচিমনির ইটভাটা রয়েছে যেখানে কয়লার পাশাপাশি জ্বালানী হিসাবে কাঠখড়িও ব্যবহার করা হয়। এসব কাঠের অধিকাংশই বিভিন্ন সরকারি রাস্তার ধারের গাছ চুরি করে কাটা বলে জানান স্থানীয়রা।
উপজেলার মাড়িয়া, ঝিকরা, হামিরকুৎসা, গোয়ালকান্দি, যোগিপাড়া, বাসুপাড়া, শ্রীপুর, দ্বীপপুর, গনিপুর, গোবিন্দপাড়া, শুভডাংগা, আউসপাড়া সহ বিভিন্ন ইউনিয়নের ইটভাটা গুলো ঘুরে দেখা গেছে, সম্প্রতি টাকা বৃষ্টির ফলে প্রায় প্রতিটি ইট ভাটায় কাচা ইটের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
কয়েকজন ভাটা মালিক জানান, একদিকে কয়লার দাম বৃদ্ধি ও চরম সংকট তার উপর হটাৎ টানা বর্ষণে তাদের লাখ লাখ টাকার কাচা ইট নষ্ট হয়েছে। তারা বিভিন্ন জায়গা থেকে ধার দেনা ও ব্যাংক থেকে চড়া সুদে টাকা এনে ইটভাটায় বিনিয়োগ করেছেন। এখন তারা ভাটা চলমান রাখতেই হিমসিম খাচ্ছেন।
অনেক ভাটা মালিকের মতে, এসব দুর্ভোগ ও ক্ষতি পুষিয়ে আবার পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র না থাকায় অনেক ভাটা মালিককে প্রশাসনকে দিতে হচ্ছে বাড়তি টাকা।
এ দিকে তীব্র সংকট চলছে কয়লার। কয়লা মূলত ইন্দোনেশিয়া, ভারত, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়া থেকে আদমানী করা হয়। এ বছর কয়লা আমদানি নিয়ে নানা সমস্যা দেখা দিয়েছে। ৮ হাজার টাকার কয়লার দাম বেড়ে হয়েছে ২০-২২ হাজার টাকা।
উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি মেসার্স জাহাঙ্গীর ট্রেড্রার্সের মালিক জাহাঙ্গীর আলম হেলাল বলেন, উপজেলায় সরকারি বিধি অনুযায়ী পরিবেশবান্ধব ইটভাটায় উন্নত মানের ইট প্রস্তুত করা হয়। নানা প্রতিকূলতার মাঝে একজন ভাটা মালিক জীবনের কষ্টার্জিত সমস্ত অর্থ ও ব্যাংক ঋণ নিয়ে ইটভাটা স্থাপন করলেও তাদের পদে পদে নানা হয়রানীর শিকার হতে হয়।
গতবছর কয়লার দাম ছিল প্রতিটন ৯-১০ হাজার টাকা। চলতি বছর টন প্রতি কয়লার দাম বৃদ্ধি পেয়ে দাড়িয়েছে ২২ থেকে ২৪ হাজার টাকা। গত বছর ১ হাজার ইটের দাম ছিল ৬-৭ হাজার টাকা। এবার কয়লা সহ জ্বালানির দাম বেড়ে যাওয়ায় ১ হাজার ইটের দাম পড়বে ৮ থেকে ৯ হাজার টাকা।
তিনি কিছু অসাধু ড্রামচিমনি ভাটা মালিকদের প্রতি অভিযোগ করে বলেন, তারা সরকারি কোন বিধিবিধান মানে না। ওই খাতে তারা কোন খরচাপাতিও লাগে না। আবার তারা পরিবেশ অধিদপ্তরের নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে কয়লার পরিবর্তে অবাধে কাঠ পুড়িয়ে থাকে।
এতে তারা কম পয়সায় ইট তৈরি ও বিক্রি করতে পারছে। পক্ষান্তরে আমরা বৈধভাবে ইট প্রস্তুত করে তাদের সাথে ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতায় হিমহিস খেতে হচ্ছে।


প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৯, ২০২২ | সময়: ৬:২৮ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ