সর্বশেষ সংবাদ :

তাদের সমালোচনায় কিছু আসে যায় না: প্রধানমন্ত্রী

সানশাইন ডেস্ক: আন্তর্জাতিক মহল বাংলাদেশের উন্নয়নকে রোল মডেল হিসেবে দেখলেও তা দেশে যাদের নজরে আসে না তাদের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এতে কিছু আসে যায় না। মঙ্গলবার দুপুরে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভায় যুক্ত হয়ে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
রাজধানীতে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এ সভার আয়োজন করে আওয়ামী লীগ। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ আজকে এগিয়ে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক মহল বলে উন্নয়নের রোল মডেল। আর আমাদের দেশের কিছু লোক আছে তারা তো ঘেউ ঘেউ করেই যাচ্ছে। এই ঘেউ ঘেউ করতে থাকুক। এতে কিছু আসে যায় না।
আওয়ামী লীগ ভালো কাজ করলেই তার বিরুদ্ধে লেগে থাকা এক শ্রেণির মানুষের অভ্যাস মন্তব্য করে তিনি বলেন, কারণ যারা এদেশের স্বাধীনতা চায়নি, যারা খুনীদের নিয়ে এবং যুদ্ধাপরাধীদের নিয়ে সরকার গঠন করে রাষ্ট্র পরিচালনা করে বাংলাদেশকে, বাংলাদেশের উন্নয়নকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করতে চেয়েছিল তাদের কিছু প্রেতাত্মা এখনও সমাজে আছে। “রাজনৈতিক অঙ্গনে আছে এবং তারাই এগুলো করে বেড়াচ্ছে। শুধু এখানে না বিদেশে গিয়ে নালিশ করে বেড়াচ্ছে। তাদের কাছে তথ্য দিচ্ছে।“
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের উন্নয়নটা হয়েছে বলেই আজকে আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি। স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ করেছি। আর সেই ডিজিটাল বাংলাদেশ ব্যবহার করে আমাদের বিরুদ্ধে বদনাম করে বেড়াচ্ছে দেশে বিদেশে এটাও আরেকটি বিষয়। দেশ ডিজিটাল হওয়ায় মানুষ নানাবিধ সুযোগ সুবিধা পাচ্ছেন তুলে ধরে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের কাছে প্রযুক্তির সব ধরনের সুবিধা নিশ্চিতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও করে দিয়েছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়নটা যারা সহ্যই করতে পারে না তাদের মুখেই ওই কিছুই হলো না, কিছুই হলো না কথা। তাদের বলবো নিজেরা আয়নায় একটু চেহারা দেখেন আর অতীতে কী করেছেন সেটা দেখেন। “আর যাদের জন্য মায়াকান্না, একটা হচ্ছে দুর্নীতিতে সাজাপ্রাপ্ত আর আরেকটা খুনী। ২১ অগাস্ট গ্রেনেড হামলা করে যারা আমাকে হত্যা করতে চেয়েছিল, আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছিল, আইভি রহমানের হত্যাকারী- সেই হত্যাকারীরা আজকে সব থেকে বেশি সোচ্চার।“
জাতির পিতা নিজ হাতে আওয়ামী লীগ গড়ে দিয়ে গেছেন উল্লেখ করে দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি শেখ হাসিনা বলেন, অনেক ঘাত প্রতিঘাত সয়ে আমরা এ সংগঠনকে সুসংগঠিত করেছি। “আর একমাত্র আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হয়। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে এদেশ অর্থনৈতিকভাবে উন্নতি করে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের মানুষ মর্যাদা পায়।“
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে মঙ্গা নাই, দুর্ভিক্ষ নাই, মানুষের সেই হাহাকার নেই। আর মানুষকে আমরা কষ্ট দেব না। মানুষের অন্ন, বস্ত্রের চাহিদা আমরা মেটাতে পেরেছি। “সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান, এইচ এম এরশাদ ও খালেদা জিয়ার সরকারের সময়ে বিদেশ থেকে পুরানো কাপড় এনে বাংলাদেশের মানুষকে পরানো হতো। আজকে তা লাগে না।“
এ সক্ষমতা ধরে রাখতে তিনি জাতির পিতা ক্ষুধা, দারিদ্রমুক্ত, উন্নত, সমৃদ্ধ দেশ গড়ে তোলার যে স্বপ্ন দেখেছিলেন সেই সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য সবাইকে প্রতিজ্ঞা নেওয়ার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী। জাতির পিতা দেশকে ও দেশের মানুষকে ভালোবাসতে শিখিয়েছেন বলেও অনুষ্ঠানে জানান বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, মানুষের ভোটের অধিকার নিয়ে অতীতে যারা ছিনিমিনি খেলেছে, তারা শাস্তি পেয়েছে। মানুষ তাদের ক্ষমতা থেকে হটিয়েছে। আওয়ামী লীগ পরপর তিনবার জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে সরকারে আসতে পেরেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, জনগণের ভোটে যদি নির্বাচিত না হতাম, তাহলে তিন তিনবার আমরা সরকারে আসতে পারতাম না। আর আজকে ১৩ বছর পূর্ণ করতে পারতাম না। এটা হলো বাস্তবতা। এই বাস্তবতাকে স্বীকার করতে হবে।
আওয়ামী লীগ সরকারে থাকলে উন্নয়নের চাকা গতিশীল থাকবে জানিয়ে তিনি বলেন, যারা এদেশকে খুনীর রাজত্ব করেছিল, যুদ্ধাপরাধীদের রাজত্ব করেছিল, দুর্নীতির রাজত্ব করেছিল তাদের স্থান বাংলার মাটিতে হবে না। “এই কথাটা স্পষ্ট জানাতে হবে এদেরকে। পাশপাশি জনগণের অধিকার নিয়ে আমরা কাউকে ছিনিমিনি খেলতে দেব না।“
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরে শোষিত বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আজীবন সংগ্রামের কথা তুলে ধরার পাশাপাশি ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যার কথাও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর অবৈধভাবে সরকারে আসা সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান, তার স্ত্রী খালেদা জিয়ার সময়ে হওয়া বিভিন্ন জাতীয় নির্বাচনে অনিয়ম ও কারচুপির কথা তুলে ধরেন তিনি। পাশপাশি বিএনপি জামায়াত জোট সরকারের অনিয়ম, দুর্নীতি, জঙ্গিবাদ সৃষ্টির কথাও উঠে আসে তার বক্তৃতায়।
তিনি বলেন, তারা দুর্নীতি করেছে। শত শত কোটি টাকা বানিয়ে বিদেশে পাচার করেছে। যারা আজকে দুর্নীতি খোঁজেন তাদেরকে বলবো ২০০১ সাল থেকে কী পরিমাণ দুর্নীতি হয়েছে? “যারা ঋণ খেলাপির কথা বলেন তাদের বলবো জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসার পরে এলিট শ্রেণি তৈরি করার জন্য যে ঋণ খেলাপি সৃষ্টি করার কালচার এদেশে শুরু করে গেছে সেই খবরটা আগে নিয়ে নেন।“
শেখ হাসিনা বলেন, যেসব যুদ্ধাপরাধীদের এদেশে বিচার হয়েছে, সাজা হয়েছে, তাদের ছেলে-পেলে এবং যারা পালিয়ে গেছে। আর সেই সঙ্গে এতিমের অর্থ আত্মসাৎ করে জেলে, দয়া করে আমরা তাকে বাসায় থাকতে দিয়েছি, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় এবং সব থেকে ব্যয়বহুল হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে। আর তার ছেলে একজন ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলা এবং দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে পলাতক হয়ে গেছে বিদেশে পালিয়ে। কিন্তু ষড়যন্ত্র বাংলাদেশের বিরুদ্ধে। আজকে দেশে উন্নয়ন কোথায় কম আছে প্রশ্ন তুলে তিনি উন্নয়নের বর্ণনা দেন।
আওয়ামী লীগ সরকার প্রায় ১৩ কোটি মানুষকে বিনা পয়সায় করোনাভাইরাস মহামারী প্রতিরোধক টিকা দিয়েছে জানিয়ে তিনি সবাইকে টিকা নেওয়ার আহ্বান জানান। করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে বিশেষ প্রণোদনা দিয়ে অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, (দেশের উন্নয়নে) যদি অর্থ ব্যয়ই না হবে, তাহলে এত কাজ হয় কীভাবে। শেখ হাসিনা বলেন, এগুলো যারা দেখে না তাদের চোখে হচ্ছে সেই ঠুলি পড়া। খুনীদের ঠুলি, যুদ্ধাপরাধীদের ঠুলি। তারা দেশের উন্নয়ন দেখে না। লুটে খেতে পারছে না সেটাই তাদের বড় কথা।
“তারা ওই গরীরের হাড্ডিসার, কঙ্কালসার শরীর দেখিয়ে দেখিয়ে বিদেশ থেকে অর্থ এনে খাবে আর লুটপাট করে খাবে, যা করে গেছে সেটাই তাদের বড় কথা।“ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয় প্রান্তে এসময় দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান ও খায়রুজ্জামান লিটন, যুগ্ম সম্পাদক দীপু মনি, হাছান মাহমুদ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজমসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।


প্রকাশিত: জানুয়ারি ১২, ২০২২ | সময়: ৫:৪৫ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ