যারা আইন শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করবেন তাঁরাই হুমকি দেন ধর্ষণের!!

নুরুজ্জামান,বাঘা : দেশে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলতে আমরা সাধারণত পুলিশকেই বুঝে থাকি। আর বাঁকি যে সকল বাহিনী কিংবা অধিদপ্তর রয়েছে তাদের কথা তেমনটা উঠে আসে না! আমরা অনেকদিন ধরে একটি স্লোগানের সাথে পরিচিত, “পুলিশই জনতা-জনতাই পুলিশ’’। তাহলে সমাজের অভিজ্ঞ মহল, সুধীজন, শিক্ষক, ইমাম, সরকারি কর্মকর্তা, ডাক্তার, এমপি, মন্ত্রী তাঁরা কি এর বাইরে ?

প্রিয় পাঠক, এ কথা গুলো বলার কারণ হলো ইদানিং দেশে প্রতি নিয়ত ধর্ষণের মত জঘন্যতম ঘটনা বাড়ছে। আবার অনেকেই হুমকির শিকার হচ্ছেন। যার ব্যত্বয় ঘটেনি গত ক’দিন আগে একজন মন্ত্রীর জীবনে। এ নিয়ে অনেক ধরণের লেখা-লেখি চলছে।এখন টিভির সামনে বসলে কিংবা পত্রিকা খুললে প্রায়স: চোখে পড়ছে ইভটিজিং কিংবা ধর্ষণের খবর। যদিও এটি আমাদের কাম্য নয়, অনেকেই পত্রিকায় বড় করে শিরোনাম বানাচ্ছেন, “রক্ষকই যখন ভক্ষক’’ তখন জাতি কি আর আশা করবে ?

সম্প্রতি ঘটে যাওয়া একজন মন্ত্রীকে নিয়েই যে এ কথাটি বলা হচ্ছে এমন নয়। বিশেষ করে বাংলাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে শিক্ষকদের হাতে ছাত্রীরা অহরহ যৌন হয়রানি এবং ধর্ষনের শিকার হচ্ছে৷এ থেকে বাদ পড়ছেনা মাদ্রাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। কিছুদিন পূর্বে গাইবান্ধার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্রীকে ক্লাসের মধ্যে যৌন হয়রানি করেন প্রধান শিক্ষক আয়নাল হক৷ এতে সাময়িকভাবে তাকে বরখাস্ত করা হলেও, তার বিরুদ্ধে কোনো আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়নি৷ বিষয়টি বিভিন্ন গনমাধ্যমে উঠে এসেছিল।পরে অর্থের বিনিময়ে ঘটনাটি ধামা-চাপা দেয়া হয়েছে বলে অনেকেই নিশ্চিত করেন।

এর চেয়েও ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছে রাজশাহীর বাঘা উপজেলার তুলশীপুর গ্রামে । সেখানে বাদশা আলম নামে মুদী দোকানদার এক অসহায় নারীর সাথে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে দিনের-পর দিন মেলামেশা করার পর ওই নারী যখন গর্ভবতি হন, তখন তাকে বিয়ের চাপ দেয়া হয়। কিন্তু বিধিবাম ! ধর্ষক বিয়ে না করে পালিয়ে যান। পরে থানায় মামলা হলে পুলিশ তাকে আটক করেন ।এর কিছুদিন পর ঐ নারী একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দেন। অত:পর সেই মা ও শিশুটির দায়িত্ব নিয়েছেন বর্তমান সরকারের মাননীয় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এবং চারঘাট-বাঘা থেকে তিন-তিনবার নির্বাচিত সাংসদ আলহাজ শাহরিয়ার আলম।

এ বিষয়ে আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশে ভারতের জাতীয় ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর পরিসংখ্যান এর মাধ্যমে জানা গেছে, দেশের অর্ধকের বেশি শিশু যৌন নিগ্রহের শিকার হচ্ছে পরিবারের কোন মানুষিক বেকার গ্রস্থ সদস্যের হাতে অথবা তার আত্নীয় স্বজনদের মাধ্যমে। তাই সব ঘটনা পুলিশ পর্যন্ত পৌঁছাচ্ছে না ।

অপর দিকে শিশু অধিকার নিয়ে কাজ করে এমন ২৬৭ টি সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত ‘বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরাম’ এর হিসেবে, চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে ৬১ টি শিশু গণধর্ষণের শিকার হয়েছে বলে তারা তথ্য দিয়েছেন৷ বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে এই তথ্য জানায় ফোরামটি৷ একই সময়ে ধর্ষণ, উত্ত্যক্ত-সহ যৌন সহিংসতার শিকার হয় ৩৪৭ টি শিশু৷ এর মধ্যে চারটি ছেলে শিশুও রয়েছে৷

এ বিষয়ে বাঘা উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম বাবুল বলেন, মানুষের মনোবৃত্তি পরিবর্তন করতে হবে। আমরা বিগত সরকার আমলে ইভটিজিং ও ধর্ষনের কারনে এ পৃথিবী থেকে বিদায় নেয়া- পিংকি ,রুমা, সিমি, তিষা, রুমি, পুর্ণিমা, মহিমা, ফাহিমা, অন্নপর্ণা, চাঁদমনি, উম্মে কুলসুম-সহ অসংখ্য তাজা প্রান ঝরে যাওয়ার কথা ভুলিনি। এর প্রতিকার করা প্রশাসনের একার পক্ষে সম্ভব নয়। এ জন্য দরকার সম্মলিত প্রচেষ্টা। তবেই এ সমস্যা সমাধান করা সম্ভব হবে বলে আমি মনে করি।

তবে সমাজের অভিঙ্গ মহল ও বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশব্যাপী ইভটিজিং এবং ধর্ষনের ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় আইনি পদক্ষেপ কঠোর হওয়া-খুবই প্রয়োজন। তাঁদের মতে, দেশী-বিদেশী অশ্লীল সিনেমা এবং অশিক্ষা-কুশিক্ষা এর প্রধান দায়ী। আবার অনেকেই বলেছেন, আদীকাল থেকে আজ পর্যন্ত মানুষের ভেতরে বরবর আদিমত্যা, যৌন হয়রানী এ সবই মানব সমাজে টিকে আছে যা নব্য জাতীর জন্য কখনো কখনো মারাত্নক আকার ধারণ করে। বর্তমান সমাজেও তাই ঘটছে। তাদের মতে, এ জন্য ধনোবাদী অর্থনীতি অনেকাংশেই দায়ী। যার মধ্যে পড়ে কালো টাকা-সাদা করার সরকারী আনুকুল্যতা।


প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৮, ২০২১ | সময়: ১২:১১ অপরাহ্ণ | সুমন শেখ