আত্মসাৎ করা সাড়ে ১৮ লাখ টাকা ফেরত

স্টাফ রিপোর্টার : রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের অনুকূলে ব্যাংকে ১৮ লাখ ৪৪ হাজার ৮৩১ টাকা জমা পড়েছে। ব্যাংকের জমা তথ্য অনুযায়ী একজন ঠিকাদারের পক্ষ থেকে টাকাগুলো জমা দেওয়া হয়েছে। সেই ঠিকাদার দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একটি মামলার আসামি।
সেই মামলার প্রধান আসামি হচ্ছেন রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ। তবে ঠিকাদার ও চেয়ারম্যান দুজনই এই টাকা জমা দেওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন।
রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের রাস্তার কাজ না করে টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দুদক মামলাটি করেছিল। এ মামলার মোট আসামি ১৪ জন। তাঁদের বিরুদ্ধে ১৮ লাখ ৪৪ হাজার ৮৩১ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ছিল। সেই পরিমাণ টাকাই ব্যাংকে জমা দেওয়া হয়েছে। এই কাজের ঠিকাদার ছিলেন শওকত আলী নামের এক ব্যক্তি। ব্যাংকের জমা রসিদে তাঁর নামই লেখা হয়েছে।
একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, গত ১৩ সেপ্টেম্বর সোনালী ব্যাংকের গ্রেটার রোড শাখায় এই টাকা জমা দেওয়া হয়। ব্যাংকের ওই শাখার ব্যবস্থাপক তারিক হাসান বোর্ডের অনুকূলে ওই পরিমাণ টাকা জমা পড়ার কথা নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, জমাকারী হিসেবে শওকত আলীর নাম লেখা আছে। তাঁরা এই টাকা জমা হওয়ার পর শিক্ষা বোর্ডকে মৌখিকভাবে জানিয়েছেন। বুধবার বোর্ডের চেয়ারম্যানকে চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানানো হবে বলেও জানান।
রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের বর্তমান চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান বলেন, আমাকে কোনো চিঠি দিয়ে জানানো হয়নি। তবে ব্যাংক বিবরণী দেওয়া হয়েছে। তাতে ওই টাকার পরিমাণের নিচ দিয়ে হলুদ দাগ দিয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে করে তিনি জানতে পেরেছেন যে ওই পরিমাণ টাকা বোর্ডের অনুকূলে ব্যাংকে জমা পড়েছে।
ঠিকাদার শওকত আলী বলেন, তিনি টাকা জমা দেননি। তাঁর নামে অন্য কেউ দিতে পারে। তিনি বলেন, তিনি শতভাগ কাজ করেছেন। তারপরও তাঁর নামে ষড়যন্ত্রমূলক মামলা দেওয়া হয়েছে।
আবুল কালাম আজাদ ২০১৪ সালের ১০ জুলাই শিক্ষা বোর্ডের সচিব হন। এরপর ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে তাঁকে চেয়ারম্যান করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে ২০১৯ সালের জুনে তাঁকে পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এরপর তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অনুসন্ধান শুরু করে দুদক।
অনুসন্ধান শেষে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় একটি মামলা করে। মামলায় সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদসহ ১৪ জনকে আসামি করা হয়। তাঁদের মধ্যে চারজন ঠিকাদার এবং অন্যরা শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারী।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, ওই মামলায় এরই মধ্যে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। তবে সম্প্রতি টাকা ফেরত দিয়ে মামলা থেকে আসামিদের দায়মুক্তির জন্য আবেদনও করা হয়েছে। তবে আবেদনকারীর নাম তাঁরা বলতে চাননি। নিয়ম অনুযায়ী, মামলা বিচারাধীন অবস্থায় টাকা ফেরত দিয়ে দায়মুক্তির সুযোগ নেই। তবে রায়ের সময় আদালত এটি বিবেচনা করতেও পারে বলে দুদকের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমি তিনি সপ্তাহ ধরে ঢাকায় বোনের বাসায় আছি। আমি অসুস্থ। কে টাকা জমা দিয়েছে, আমি বলতে পারব না। মামলাও আমি এখন আর ডিল করি না।
হাজিরা দেন কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, করোনার আগে একবার শুধু হাজিরা দিয়েছেন। আর যেতে হয়নি।
মামলার আরেক আসামি শিক্ষা বোর্ডের উপ-কলেজ পরিদর্শক নেসার উদ্দীন আহমেদ বলেন, তিনি টাকা জমা দেওয়ার ব্যাপারে কিছু জানেন না। তিনি দাবি করেন, বোর্ডের রাস্তার কাজগুলো শতভাগ হয়েছে। ষড়যন্ত্র করে তাঁদের শুধু শুধু মামলার আসামি করা হয়েছে।


প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৮, ২০২১ | সময়: ৫:৪৭ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ