সর্বশেষ সংবাদ :

বিতর্কিত মেয়র আব্বাস গ্রেপ্তার

স্টাফ রিপোর্টার : জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল স্থাপনের বিরোধিতা করে আলোচিত রাজশাহীর কাটাখালী পৌরসভার মেয়র আব্বাস আলীকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। বুধবার ভোরে রাজধানীর কাকরাইলের হোটেল রাজমনি ঈশা খাঁ থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
পরে এক সংক্ষিপ্ত সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন পরে বলেন, মেয়র আব্বাসের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার পর থেকেই তাকে খোজা হচ্ছিল। গত ২৩ তারিখ থেকে তিনি আত্মগোপনে ছিলেন। ঢাকার বিভিন্ন হোটেলে ছিলেন। মঙ্গলবার তিনি হোটেলে ঈশা খাঁয় অবস্থান নিলে র্যা ব গোয়েন্দারা জানতে পারে। তিনি বলেন, তার কাছে পাসপোর্ট পাওয়া গেছে। তার দেশত্যাগের পরিকল্পনা ছিল।
এর আগে ২৪ নভেম্বর বিকালে দলীয় কার্যালয়ে পবা উপজেলা আওয়ামী লীগের জরুরি বৈঠকে আব্বাসকে পৌর আওয়ামী লীগের আহ্বায়কের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল নির্মাণ কেন্দ্র করে কটূক্তি এবং সেটি নির্মাণের প্রতিহতের ঘোষণা দিয়ে বক্তব্য দেন নৌকা প্রতীকে দুবারের নির্বাচিত মেয়র আব্বাস আলী। এর পর তার ফাঁস হওয়া অডিও ঘুরছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। সোমবার রাত থেকে অডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
তার এমন বক্তব্যে রাজশাহীজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। যদিও পুরো ঘটনাটি অস্বীকার করেছেন মেয়র আব্বাস। এ ঘটনায় মঙ্গলবার রাতে বিভিন্ন সময়ে রাজশাহী মহানগরীর রাজপাড়া, বোয়ালিয়া ও চন্দ্রিমা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মেয়র আব্বাসের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা করা হয়।
বোয়ালিয়া থানায় করা অভিযোগে বাদী রাজশাহী মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ১৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল মোমিন।
পবা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাজদার রহমান সরকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা ইয়াসিন আলীর সভাপতিত্বে জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সভায় আব্বাস আলীকে দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। একই সঙ্গে কেন দলীয় সদস্য পদ থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে না জানতে চেয়ে কারণ দর্শানের নোটিশ দেওয়া হয়।
প্রসঙ্গত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল নির্মাণ কেন্দ্র করে কটূক্তি এবং সেটি নির্মাণের প্রতিহতের ঘোষণা দিয়ে বক্তব্য দেন নৌকা প্রতীকে দুবারের নির্বাচিত মেয়র আব্বাস আলী। এর পর তার ফাঁস হওয়া অডিও ঘুরছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। সোমবার রাত থেকে অডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
ইসলামের দৃষ্টিতে পাপ- সে জন্য রাজশাহী সিটি গেটে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল না বসানোর নির্দেশ দেন এই মেয়র, যা জীবন দিয়ে হলেও প্রতিহত করার ঘোষণা দেন তিনি। তার এমন বক্তব্যে রাজশাহীজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। যদিও পুরো ঘটনাটি অস্বীকার করেছেন মেয়র আব্বাস। তবে এ ঘটনায় মেয়র আব্বাসের বিরুদ্ধে রাজশাহী মহানগরীর পৃথক তিন থানায় তিনটি মামলা করা হয়েছে। তাকে দল থেকে বহিষ্কার এবং মেয়র পদ থেকে অপসারণের দাবিতে সোচ্চার হয়ে উঠেছে বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন।
এদিকে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে কটূক্তির অভিযোগে ঢাকায় আটক রাজশাহীর কাটাখালীর মেয়র আব্বাস আলীর ব্যক্তিগত সহকারীসহ (পিএস) দুজনকেও তুলে নেওয়ার অভিযোগ করেছে তাঁদের পরিবার। মঙ্গলবার রাত সোয়া নয়টার দিকে আব্বাসের পিএস জহুরুল ইসলাম ও তাঁর ছোট ভাই মনিরুল ইসলামকে কাটাখালী পৌরসভা থেকে তুলে নেওয়ার অভিযোগ পরিবারের।
জহুরুল ও মনিরুলের পরিবারের দাবি, সাদা পোশাকে এসে দুই গাড়িতে করে দুই ভাইকে নিয়ে গেছেন। তাদের বিষয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে স্থানীয় থানাসহ বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ করা হয়। তবে কেউ তাদের আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেনি।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও মনিরুলের বন্ধু হিসেবে পরিচিত রেজাউল করিম বলেন, ‘মঙ্গলবার রাত নয়টার দিকে একটি সাদা গাড়িতে করে বেশ কয়েকজন মনিরুলের খাবার হোটেল একতায় আসেন। তারা মনিরুলের বড় ভাই জহুরুলের খোঁজ করেন। পরে দোকান থেকে ফোন নম্বর সংগ্রহ করে জহুরুলের সঙ্গে কথা বলে তাঁকে ডেকে আনেন। এ সময় জহুরুলকে সাদা গাড়িতে তুলে নেন। মনিরুল বাধা দেন। এর কিছুক্ষণ পর আরেকটি সাদা গাড়িতে করে কয়েকজন এসে মনিরুলকে জোর করে তুলে নিয়ে যান।
মনিরুলের স্ত্রী সোমাইয়া আক্তার বলেন, প্রথমে তাঁর ভাশুর জহুরুলকে নিয়ে যাওয়া হয়। এতে বাধা দিলে ১০ থেকে ১৫ মিনিট পর তাঁর স্বামী মনিরুলকেও নিয়ে যাওয়া হয়। তারা বলেন, তুলে নেওয়ার খবর পেয়ে তিনি ফোন দেন জহুরুলকে। রাত ১০টা ও রাত ২টার দিকে দুই দফায় ফোন ধরে জহুরুল শুধু বলেন, তাঁরা ভালো আছেন। কিন্তু কোথায় আছেন, কে আটক করেছে, তা বলেননি। এরপর আর যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
র‌্যাব রাজশাহী ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার মেজর নাজমুস শাকিব বলেন, ঢাকা থেকে র‌্যাব কাটাখালীর মেয়র আব্বাস আলীকে আটক করেছে, শুধু এই খবর তাঁদের কাছে আছে। এ ছাড়া র‌্যাবের পক্ষ থেকে আর কাউকে আটক করা হয়নি।
কাটাখালী থানার ওসি নুরে আলম বলেন, তাঁরা শুনেছেন, র‌্যাব কাটাখালী থেকে দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে নিয়ে গেছে। কিন্তু তাঁদের কাছে কাউকে হস্তান্তর করা হয়নি। তাই তারা নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারছেন না।
বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল স্থাপন নিয়ে সম্প্রতি আব্বাস আলীর বিতর্কিত মন্তব্য সংক্রান্ত একটি অডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া অডিওর কণ্ঠ নিজের বলে স্বীকার করেছেন তিনি। পরে তিনি ভুলের ক্ষমা চান। তাঁর বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে। সর্বশেষ মঙ্গলবার রাজধানীর একটি আবাসিক হোটেল থেকে আব্বাস আলীকে গ্রেফতার করা হয়।


প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২, ২০২১ | সময়: ৪:৪৯ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ