বাজাজ ৩ হুইলার গাড়ীর স্বপ্ন এখন হাতের মুঠোয়

সানশাইন ডেস্ক : সৈয়দ রাসেল। বয়স ৩২, বাড়ী খূলনার দৌলতপুর উপজেলায়। বেশ কয়েক বছর ধরে ইজি বাইক চালায় রাসেল। কিন্ত এই কাজ করে শান্তি পায় না সে। সংসার চালাবার জন্য নিতান্তই বাধ্য হয়ে এই কাজ করে। ইজি বাইক চালালে, যাত্রী থেকে শুরু করে পরিচিত কেউ ই দাম দেয় না। এই জন্য মনের দিক দিয়ে সব সময় ছোট হয়ে থাকে রাসেল। এভাবেই দিন চলছিল, ইচ্ছা থাকলেও কোন উপায় ছিল না রাসেল এর কাছে যাতে করে সে তার ভাগ্যকে পরিবর্তন করতে পারে।
একদিন রাতের বেলায়, বাড়ী ফেরার পথে এক পাসেঞ্জার অনেক অনুরোধ করে তাকে দৌলতপুর থেকে খুলনা পৌছে দেবার জন্য। এখন তার গাড়ী বন্ধের সময়, এমন সময় আবার উলটো পথে যেতে ইচ্ছা করছিল না, তারপরও যাত্রীর অনেক অনুরোধে রাসেল যেতে রাজি হয়। যেতে যেতে যাত্রীর সাথে কথা বলার এক পর্যায়ে রাসেল জানতে পারে যে, যাত্রী ভাইটি বাজাজ কোম্পানি তে চাকুরী করে। বাজাজ ৩ হুইলার গাড়ী চালাবার ইচ্ছা রাসেল এর অনেক দিনের সপ্ন ছিল। সেই কথা রাসেল কোম্পানির লোক কে বলে। তখন তিনি বলেল, স্বপ্ন যেহেতু আছে, তো বাজাজ গাড়ী নেন না কেন? রাসেল একটা দীর্ঘঃশ^াস ছেড়ে বলে, ভাই সেই কপাল কি আর আমাদের আছে, বাজাজ গাড়ী কিনতে গেলে তো অনেক টাকার দরকার। অতো টাকা কোথায় পাবো? আপনার গাড়ির অনেক দাম আমার মত মানুষ আপনার গাড়ি কিনতে পারবে না। তখন কোম্পানীর লোক হেসে দিয়ে বলে, আপনি কত টাকা দিয়ে গাড়ী কিনতে পারবেন? রাসেল উত্তর দেয়, ১ লাখ থেকে ১ লাখ ১০ হাজার টাকা মত জোগার করতে পারব।
কোম্পানীর লোক বলে, আচ্ছা ঠিক আছে, আপনি আমাদের বাজাজ রানার শোরুমে আসেন, আপনাকে একটা বাজাজ আর ই এলপিজি গাড়ী দেবার ব্যাবস্তা করব। রাসেল কোম্পানীর লোকের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে আর মনে মনে ভাবে, লোকটা নিশ্চয় মজা করছে তার সাথে। রাসেলের মনের কথা বুঝতে পেরে রানারের প্রতিনিধি বলে, ভাই আমি একদমই আপনার সাথে মজা করছি না। আপনাদের মতো মানুষের কথা চিন্তা করেই, রানার নূন্যতম ডাউনপেমেন্ট ও দীর্ঘমেয়াদি কিস্তি সুবিধায় বাজাজ আর ই এলপিজি গাড়ী দিচ্ছে। এটা শুনে রাসেলের নিজের কান কেও বিশ্বাস হচ্ছিল না। এমন খুশির কথা শুনে সে কি করবে কিছুই বুঝে উঠতে পারছিল না। রাসেল জিজ্ঞাসা করে, এতা কি আসলেই সত্যি!! রানারের প্রতিনিধী হাসিমুখে রাসেল কে আশস্ত করে কিস্তিতে গাড়ী দেবার ব্যাপারে।
রাসেল ৩ দিনের মাথায় তার ইজি বাইকটা বিক্রি করে রানারের প্রতিনিধির সাথে যোগাযোগ করলে সে তাকে রানার বাজাজের শোরুমে আসতে বলে। গাড়ী বিক্রির টাকা আর জমানো টাকা নিয়ে রাসেল চলে যায় রানার বাজাজ শোরুমে। সেখানে কোম্পানীর প্রতিনিধি তাকে কিস্তির বিষয়ে সব কিছু বুঝিয়ে বলে, আর এও বলে যে, সে ৪টি ফ্রী সার্ভিস পাবে এবং ১৮ মাসের ইঞ্জিনের ওয়ারেন্টি পাবে। এ সব কিছুই ছিল রাসেল এর কাছে স্বপ্নের মতন। সে কোম্পানীর প্রতিনিধিকে অনেক ধন্যবাদ জানায়, তাকে এবং তার মত মানুষদের কে কিস্তি সুবিধায় গাড়ী দিয়ে উপকার করবার জন্য।
বাজাজের গাড়ী ক্রয়ের পর থেকে, আলহামদুলিল্লাহ অনেক ভালো আছে সৈয়দ রাসেল। আগের থেকে অনেক বেশি ট্রিপ মারতে পারছে যার জন্য রোজগার ও বেশি হচ্ছে। আর সবচেয়ে বড় কথা, এখন আর রাসেলের মন খারাপ হয় না। কারন যাত্রীসহ অনান্য সবাই তাকে এখন সন্মান দিয়ে কথা বলে। সারাদিন খাটুনি করে যে রোজগার করে, সেটাকে সার্থক বলে মনে হয় রাসেল এর।


প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১, ২০২১ | সময়: ৬:৪৯ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ