বছরে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে ৩.৮ থেকে ৫.৮ মিলিমিটার

ঢাকা অফিস : বাংলাদেশের সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা প্রতিবছর ৩ দশমিক ৮ থেকে ৫ দশমিক ৮ মিলিমিটার হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত ৩০ বছর ধরেই উপকূলবর্তী সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা এই হারে বৃদ্ধির প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। অর্থাৎ ৩০ বছরে উপকূলীয় অঞ্চলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ১১৪ থেকে ১৭৪ মিলিমিটার (৪ দশমিক ৪৯ থেকে ৬.৮৫ ইঞ্চি) বৃদ্ধি পেয়েছে। পরিবেশ অধিদফতরের এক গবেষণা থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

বৃহস্পতিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে উপস্থাপিত একটি প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা যায়।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি ও ঝুঁকি নিরূপণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্টের অর্থায়নে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এবং সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্ট জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (সিইজিআইএস)।সহায়তায় পরিবেশ অধিদফতর ‘প্রজেকশন অব সি লেভেল রাইজ অ্যান্ড অ্যাসেসমেন্ট অব ইটস সেকটোরাল (অ্যাগ্রিকালচার, ওয়াটার অ্যান্ড ইনফ্রাসট্রাকচার) ইমপ্যাক্টস’ শীর্ষক একটি গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ‘স্যাটেলাইট আল্টিমেট্রি ডাটা’ ব্যবহার করে গবেষণার খসড়া পাওয়া গেছে।

এতে দেখা যায়, গত ৩০ বছরে বাংলাদেশের উপকূলবর্তী সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা প্রতিবছর প্রায় ৩.৮ থেকে ৫.৮ মিলিমিটার হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ওই গবেষণার মাধ্যমে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির পরিমাপ ও এর ফলে কৃষি, পানি ও অবকাঠামো খাতে কী প্রভাব পড়বে তা নিরূপণ করা হচ্ছে। যা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় ভবিষ্যৎ করণীয় নির্ধারণে সহায়ক হবে। উপকূলীয় অঞ্চলের সঙ্গে সঙ্গে অভ্যন্তরীণ অঞ্চলে যেমন-গোপালগঞ্জ অঞ্চলেও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির প্রভাব পড়বে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। এ লক্ষ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ অন্য সংস্থাগুলোকে সমন্বিত কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। সম্পূর্ণ গবেষণাটি চলতি বছরের জুনের মধ্যে শেষ হবে বলে উল্লেখ করা হয়।

এদিকে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বৈঠককে জানানো হয়- জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলার অংশ হিসেবে দেশের উত্তরাঞ্চলে বজ্রপাত রোধে বন অধিদফতরের চলতি ২০২১-২২ অর্থ বছরে ৮৭ হাজার ৭৭৩টি তালের চারা রোপণের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এছাড়া উপকূলীয় জনগোষ্ঠীকে ঘূর্ণিঝড় এবং জলোচ্ছ্বাস থেরে রক্ষা, সমুদ্র ও নদী মোহনায় গেজে ওঠা চর স্থায়ীকরণের জন্য ১৯৬৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত উপকূলীয় অঞ্চলে দুই লাখ ৩৯ হাজার ৮৩০ হেক্টর উপকূলীয় বনায়ন সম্পন্ন করেছে। এর মধ্যে ৪৫ হাজার ৩৭৫ হেক্টর ভূমি জনগণের বসবাস ও চাষাবাদের উপযোগী হওয়ায় ভূমি মন্ত্রণালয়কে ফেরত দেওয়া হয়েছে।

সংসদ সচিবালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বৈঠকে কমিটি বালু মহাল ও জলমহালের সীমানা এবং মালিকানা নির্ধারণ, বালু উত্তোলন ইত্যাদি বিষয়গুলো নিয়ে ভূমি,পানি সম্পদ এবং পরিবেশ,বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের মধ্যে দ্রুত সমন্বিত নীতিমালা প্রণয়নের সুপারিশ করা হয়।

সরকারি কর্মচারীদের কাজের মূল্যায়ন বিচারে সম্ভাব্য অধিকতর সঠিক পদ্ধতি নির্ধারণ করে সরকারের মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম আধুনিকায়ন ও ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে জাতীয় জীবনে সফলতা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধির সুপারিশ করা হয়।

বৈঠকে মাঠ পর্যায়ে বাস্তবসম্মতভাবে জমির মৌজা রেট নির্ধারণ করা এবং মৌজা রেট নির্ধারণে বর্তমান কমিটিকে পুনর্গঠন করার সুপারিশ করা হয়।

কমিটির সভাপতি এইচ এন আশিকুর রহমানের বৈঠকে কমিটি সদস্য জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, আবুল হাসান মাহমুদ আলী, আ.স. ম ফিরোজ, হাফিজ আহমদ মজুমদার,পনির উদ্দিন আহমেদ, ফেরদৌসী ইসলাম এবং মোকাব্বির খান অংশগ্রহণ করেন।


প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২২ | সময়: ১:৩৫ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ