রাত পোহালেই ভোট, প্রস্তুতি সম্পন্ন

স্টাফ রিপোর্টার: রাত পোহালেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সব শঙ্কা কাটিয়ে দুয়ারে কড়া নাড়ছে নির্বাচনের সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। সুষ্ঠুভাবে ভোট গ্রহণে ইতোমধ্যেই সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। সুন্দর পরিবেশে ভোট গ্রহণে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী মাঠে অবস্থান নিয়েছে। রাজশাহীসহ দেশের সব ভোটকেন্দ্রগুলোতে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
রাজশাহী আঞ্চলিক নির্বাচন কার্যালয় ও জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজশাহী বিভাগের ৮ জেলায় মোট ভোটার সংখ্যা ১ কোটি ৫৪ লাখ ৬০ হাজার ৩৩২ জন। প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ২৪৩ জন প্রার্থী। এর মধ্যে রাজশাহী জেলার মোট ভোটার ২১ লাখ ৭৭ হাজার ৬৯৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার সংখ্যা ১০ লাখ ৮৪ হাজার ৭৩০ জন ও নারী ভোটার ১০ লাখ ৯২ হাজার ৯৬৬ জন। এর মধ্যে তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ১৮ জন। রাজশাহীতে নারী ভোটার সংখ্যা বেশি।
আঞ্চলিক নির্বাচন অফিসে তথ্য অনুযায়ি, রাজশাহী বিভাগের ৩৯টি আসনে ৩ হাজার ১১৯টি কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ। এর মধ্যে নওগাঁ জেলার ১টি আসনের প্রার্থী মারা যাওয়ায় সেখানে ভোট হচ্ছে না। বাকি ৩৮টি আসনে ভোট হবে। এ ৮ জেলার ৫ হাজার ৪৩২টি কেন্দ্র আছে।
রাজশাহী আঞ্চলিক নির্বাচন অফিসের তথ্য মতে, রাজশাহী জেলায় ৬টি আসনের ৭৭০টি কেন্দ্রের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ ৩১০টি। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ৩টি আসনের ৫১২টি কেন্দ্রের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ ৩২৫টি।
নওগাঁ জেলার ৬টি আসনে ৭৭৪টি কেন্দ্রের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ ৪১৪টি। নাটোর জেলার ৪টি আসনের ৫৬৬টি কেন্দ্রের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ ২৪৫টি।
পাবনা জেলার ৫টি আসনের ৭০১টি কেন্দ্রের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ ৪৯৬টি। সিরাজগঞ্জের ৫টি আসনের ৮৯২টি কেন্দ্রের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ ৪৬৬টি। বগুড়ার ৭টি আসনের ৯৬৯টি কেন্দ্রের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ ৬৬২টি ও জয়পুরহাটের ২টি আসনের ২৫৪টি কেন্দ্রের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ ১৮৯টি।
এদিকে পার্শ্ববর্তী চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার মোট ভোটার সংখ্যা ১৩ লাখ ৫৩ হাজার ৩২১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৬ লাখ ৮৩ হাজার ৪৭৮ জন, নারী ভোটার ৬ লাখ ৬৯ হাজার ৮৪৩ ও তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ১ জন।
নওগাঁ জেলার মোট ভোটার সংখ্যা ২২ লাখ ১৯ হাজার ২৮১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১১ লাখ ৬ হাজার ২৫৬ জন, নারী ভোটার ১১ লাখ ১৩ হাজার ২৫ জন ও তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ১০ জন। নাটোর জেলার মোট ভোটার ১৪ লাখ ৬২ হাজার ৬৭২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৭ লাখ ৩১ হাজার ১৯০ জন, নারী ভোটার ৭ লাখ ৩১ হাজার ৪৮২ জন ও তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ১০ জন। পাবনা জেলার মোট ভোটার ২১ লাখ ৩৪ হাজার ২৭৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১০ লাখ ৮০ হাজার ৭৯৬ জন, নারী ভোটার ১০ লাখ ৫৩ হাজার ৪৮১ জন ও তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ১৩ জন।
অন্যদিকে সিরাজগঞ্জ জেলার মোট ভোটার ২৫ লাখ ৩৯ হাজার ৯১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১২ লাখ ৯৬ হাজার ৬১০ জন, নারী ভোটার ১২ লাখ ৪২ হাজার ৪৮১ জন ও তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ১৯ জন। বগুড়া জেলার মোট ভোটার ২৮ লাখ ৭৬ হাজার ৪৮৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১৪ লাখ ৩৩ হাজার ৮৩৭ জন, নারী ভোটার ১৪ লাভ ৪২ হাজার ৬৪৯ জন ও তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ২৬ জন।
উত্তরের অপর জেলা জয়পুরহাটের মোট ভোটার সংখ্যা ৭ লাখ ৭৯ হাজার ৬৯২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৩ লাখ ৮৭ হাজার ৬৩৪ জন, নারী ভোটার ৩ লাখ ৯২ হাজার ৫৮ জন ও তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ৭ জন।
রাজশাহী আঞ্চলিক নির্বাচন কার্যালয়ের সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা শাহিনুর ইসলাম প্রামাণিক জানিয়েছেন, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য তাদের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। সাধারণ ভোটকেন্দ্রগুলোর পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ ভোটকেন্দ্রগুলোতে থাকবে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা। কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নেবে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। ভোটকেন্দ্রগুলোতে পুলিশের পাশাপাশি আনসার সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। এর পাশাপাশি র‌্যাব ও বিজিবি মোতায়েন থাকবে। এ ছাড়া আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মাঠে থাকবে সশস্ত্র বাহিনী। আগামী ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে নিরাপত্তার কোনো ঘাটতি থাকবে না। এ সময় তিনি স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোটকেন্দ্রে আসার জন্য ভোটারদের প্রতি আহ্বান জানান।
পুলিশের রাজশাহী রেঞ্জের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) আনিসুর রহমান জানিয়েছেন, রাজশাহী বিভাগে ৩৯টি আসন রয়েছে। ১টি সদরে বাকি ৩৮টি রেঞ্জের মধ্যে রয়েছে। এ আসনগুলোতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কোথাও কেউ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে চাইলে তাকে কঠোর হাতে দমন করা হবে। নির্বাচনের আগের দিন থেকে পরের দিন পর্যন্ত এ বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা বহাল থাকবে।
শনিবার দিবাগত মধ্যরাত ১২টা হতে ৭ জানুয়ারি দিবাগত মধ্যরাত ১২টা পর্যন্ত ট্যাক্সি ক্যাব, পিকআপ, মাইক্রোবাস ও ট্রাক চলাচলের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টা থেকে ৮ জানুয়ারি মধ্যরাত পর্যন্ত সকল ধরনের মোটর সাইকেল চলাচলের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
তবে, এ নিষেধাজ্ঞা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সশস্ত্র বাহিনী, প্রশাসন ও অনুমতিপ্রাপ্ত পর্যবেক্ষক, জরুরি সেবা কাজে নিয়োজিত যানবাহন এবং ঔষধ, স্বাস্থ্য-চিকিৎসা ও অনুরূপ কাজে ব্যবহৃত দ্রব্যাদি ও সংবাদপত্র বহনকারী সকল ধরনের যানবাহন, আত্মীয়-স্বজনের জন্য বিমানবন্দরে যাওয়া, বিমানবন্দর হতে যাত্রী বা আত্মীয়-স্বজনসহ নিজ বাসস্থানে অথবা আত্মীয়-স্বজনের বাসায় ফিরে যাওয়ার জন্য ব্যবহৃত যানবাহন (টিকেট বা অনুরূপ প্রমাণ প্রদর্শন) এবং দূরপাল্লার যাত্রী বহনকারী অথবা দূরপাল্লার যাত্রী হিসেবে স্থানীয় পর্যায়ে যাতায়াতের জন্য যে কোন যানবাহন, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর জন্য ১টি, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর নির্বাচনি এজেন্ট ( নিয়োগপত্র/পরিচয়পত্র সাপেক্ষে) এর জন্য ১টি গাড়ি (জিপ, কার, মাইক্রোবাস ইত্যাদি ছোট আকৃতির যানবাহন) রিটার্নিং অফিসারের অনুমোদন ও গাড়িতে স্টিকার প্রদর্শন সাপেক্ষে, সাংবাদিক, পর্যবেক্ষক অথবা জরুরি কোন কাজে ব্যবহৃত মোটর সাইকেল রিটার্নিং অফিসারের অনুমোদন সাপেক্ষে, নির্বাচন কমিশনের অনুমোদন সাপেক্ষে নির্বাচনি কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তা/ কর্মচারী অথবা অন্য কোন ব্যক্তির জন্য মোটরসাইকেল চলাচল, জাতীয় মহাসড়ক, বন্দরছাড়াও আন্তঃজেলা বা মহানগর থেকে বাহির বা প্রবেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সড়ক, মহাসড়ক ও প্রধান প্রধান রাস্তার সংযোগ সড়ক বা উক্তরূপ সকল রাস্তায় যানবাহন চলাচলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না।


প্রকাশিত: জানুয়ারি ৬, ২০২৪ | সময়: ৭:৪০ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ