সোমবার, ১৪ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৯শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
নুরুজ্জামান,বাঘা :
রাজশাহীর বাঘায় পৌর মেয়র আক্কাছ বাহিনীর হামলায় নিহত আ’লীগ নেতা আশরাফুল ইসলাম বাবুলের ছেলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তার বুক ভাঙ্গা হাকাকার ব্যক্ত করেছে। সেখানে সে লিখেছে, এই আত্মচিৎকার, আহাজারি, হৃদয়ের রক্তক্ষরণ কে দেখবে ? “আওয়ামীলীগ করলেই কি সুস্থ স্বাভাবিক ভাবে বাড়ী থেকে বের হয়ে লাশ হয়ে ঘরে ফিরতে হয় ?”বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনার নিকট নারকীয় এই হত্যাকান্ডের বিচার চেয়ে তার লেখা চিঠি মানুষের হৃদয় স্পর্শ করছে।
রাজশাহীর বাঘা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম বাবুল হত্যা কান্ডের মুলহোতা বাঘা পৌর মেয়র আক্কাছ আলী। বাবুল হত্যার আগে থেকেই এলাকায় মুর্তিমান এক আতঙ্কের নাম আক্কাছ। আধিপত্য বিস্তারে তার রয়েছে সু-সংগঠিত সশস্ত্র বাহিনী। বালু মহাল থেকে শুরু করে টেন্ডারবাজি, মদ খেয়ে মাতলামি, প্রধানমন্ত্রীকে কালো পতাকা দেখানো, নারী নির্যাতন, চাঁদাবাজি, ধর্ষণ, বলাৎকার, বিবস্ত্র, দাঙ্গা-হাঙ্গামা , সরকারি কর্মকর্তাকে মারপিট, আ’লীগের সম্মেলনে হামলা এমন কোন ঘটনা নেই যা তিনি করেননি যা বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমে উঠে এসছে।
আক্কাছ এর নামে বাঘা থানা ও আদালত মিলে বিভিন্ন সময় রেকর্ড হয়েছে ২৩ টি মামলা এবং ১৭ টি জিডি। এসব অপকর্মের জন্য তাকে দল থেকে একাধিকবার বহিস্কারও করা হয়েছে। তার পরেও থেমে নেই তার নারকীয় তান্ডব। সর্বশেষ গত ২২ জুন সকাল ১০ টায় পৌর সভার নয়জন কাউন্সিলর এর মৌখিক আবেদনের ভিত্তিতে বাঘা উপজেলা পরিষদের সামনে তার একাধিক অনিয়ম,দুর্ণীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে উপজেলা আওয়ামী লীগের ব্যানারে মানববন্ধন করতে গেলে সেই মানব বন্ধনের উপর বর্বরোচিত হামলা চালায় আক্কাছ বাহিনী। এতে গুরুত্বর আহত দলের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম বাবুল ঘটনার দু’দিন পর রামেক হাসপাতালের আইসিউতে মারা জান । তবে এখন পর্যন্ত গ্রেফতার হয়নি এ মামলার প্রধান আসামী আক্কাছ আলী।
এদিকে আশরাফুল ইসলাম বাবুলের দাফন সম্পন্য হওয়ার পর তাঁর ছেলে আশিক জাবেদ লাবু, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশ্যে লিখেছেন, একই ছাদের নিচে দুইযুগের বেশী সময় একসাথে অবস্থান করা মানুষটি আজ নেই, যার হাত ধরে পথ চলতে শেখা হামাগুড়ি থেকে দৌড়ানো তারপর তার ছায়া তলে বেড়ে ওঠা সেই মানুষটি আজ অতীত, প্রতি মূহুর্তে অপলক দৃষ্টি সবখানে সবদিকে খুজে ফিরছে সেই প্রিয় মুখ, ব্যাকুল প্রানে শুনতে স্বাদ জাগছে সেই কন্ঠস্বর, কোথায় পাবো হারানো সে ধন? যা কেড়ে নিলো ঘাতকের দল। তদন্তের আশ্বাস দিচ্ছে কেউ, কেউ সঠিক খুনি খুজছে আবার কারও কারও কাছে ঘটনাটি শুধুই বিচ্ছিন্ন ঘটনামাত্র। এখানে তদন্তের কি আছে আর ! খুনির আবার সঠিক ভুল কি? সবাই দেখতে পাচ্ছে খুনি কারা।
সে আরো লিখেছে, হারানোর ব্যাথা অন্যকেউ বোঝেনা । কথার কৌশল আর অপরাধীদের শক্ত খুঁটিই কি তাহলে এই বিচারের বাধা? তাহলে কি বঙ্গবন্ধুর স্বাধীন দেশে প্রকাশ্য দিবালোকে এই নির্মমতার বিচার এভাবেই ঘুরপাক খেতে থাকবে। এর পর হইতো ষড়যন্ত্রের শিকার নির্দোষ ৩২ জনের মত আমাকেও আসামী হতে হবে । লজ্জা ও ঘৃণার সাথে ধিক্কার জানায় সেইসব মানুষদের, যারা এই নৃশংস ঘটনার বিচার বন্ধ করতে বার বার শুধু বলছে যে দুপক্ষের সংঘর্ষে নিহত বাঘা উপজেলা আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক। কিন্তু একবারো বলছে না ,আক্কাস খুনি, মেরাজ খুনি।
এই আত্মচিৎকার, আহাজারি হৃদয়ে রক্ত ক্ষরণ কে দেখবে? আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে এই নারকীয় হত্যকান্ডের বিচার চাই। আমি এবং আমার নিষ্পাপ ভাইটাকে কোনো কারণ ছাড়া এতিম করে দেওয়ার বিচার চাই। আপা, আপনিই বোঝেন আপনজন হারানোর ব্যাথা। জাতির পিতা এবং আপনার আজীবনের একজন আদর্শিক সৈনিক ছিলেন আমার বাবা, কোনোদিন তিনি আদর্শচ্যুত হয়নি। অন্যদল ক্ষমতায় থাকলে মেনে নিতাম ভাগ্যকে কিন্তু এই ২০২৪ সালে শেখ হাসিনার বাংলাদেশে তার দলের একজন সাধারণ সম্পাদককে আওয়ামীলীগ সেজে থাকা স্বার্থপর বেইমানরা যে ভাবে খুন করলো আবার তার বিচারকে বাধাগ্রস্ত করতে চাইছে, তার আদর্শই কি জীবনের কাল হলো? আওয়ামীলীগ করলেই কি সুস্থ স্বাভাবিক ভাবে বাড়ী থেকে বের হয়ে লাশ হয়ে ফিরতে হয়? এই অন্যায়ের বিচার আপনার কাছে চাই আপা। আমি আমার মাসুম ভাই এবং অসহায় মায়ের চোখের পানির বিচার চাই, আমি পিতৃহত্যার বিচার চাই, খুনি আক্কাস মেরাজের ফাঁসি চাই।
আশিক জাবেদের এই লেখা হৃদয় স্পর্শ করছে বাঘার আগনিত মানুষকে। যারা রাজনীতি করেন না, কিংবা অন্য মতদর্শী, তারাও এ নরকীয় হত্যা কান্ডের বিচার চাচ্ছেন। ফেসবুকে যারা এ লেখা পড়েছেন তারা অনেকেই বাবুল নিহতের ঘটনায় মর্মাহত হয়েছেন। তারাও চাচ্ছেন যতদ্রুত মেয়র আক্কাছকে আটক করে বিচার করে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত হরা হোক। জনপ্রতিনিধি কখনোও খুনী হতে পারে না তাই দ্রুত পৌর মেয়র পদ থেকে তাকে অপসারণের কথাও এখন পৌরবাসীর মুখে মুখে।
সানশাইন / শামি