সোমবার, ৯ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৫শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি: চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার ঝিলিম ইউনিয়নের বুলনপুরে নবাব অটো রাইস মিল সংলগ্ন এলাকা থেকে অবৈধ মদের ভাটি অপসারণের দাবীতে সোচ্চার হয়ে উঠেছে এলাকার মানুষ। ওইস্থানে উন্মুক্তভাবে মদের ব্যবসা চালানোর কারণে পরিবেশ দিন দিন বিনষ্ট হচ্ছে। এতে উঠতিবয়সী যুবকসহ বিভিন্ন শ্রেণি- পেশার মানুষ মাদকে আসক্ত হচ্ছে। এছাড়া অভিযোগ উঠেছে ওই মদের ভাটির ভূয়া মালিকানা সেজে বাংলা মদের রমরমা ব্যবসা চলিয়ে যাচ্ছে গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর পুরাতন বাজারের মনতোষ কুমার চক্রবর্তী।
এ সংক্রান্ত বুলনপুর-আতাহার থেকে অবৈধ মদের ভাটি বন্ধে এলাকাবাসী জেলাপ্রশাসক ও জেলা পরিষদ চেযারম্যান বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছে। কিন্তু ৩ মাস অতিবাহিত হলেও এবিষয়ে প্রশাসনিক কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
শুধু তাই নয় স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় ও শিল্প মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল ওদুদ এমপি গত ২১ শে এপ্রিল মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবরে ডিও লেটার দিয়ে মদের ভাটিটি বুলনপুর শিল্প এলাকা থেকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছেন।
এদিকে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আনিছুর রহমান খান জানান, তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় বিতর্কিত স্থান থেকে মদের ভাটি অপসারণের জন্য ভাটির মালিককে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। এই মদের ভাটিটি ইতিপূর্বে চাঁপাইনবাবগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন চন্ডিতলায় ছিল।
তখন এলাকাবাসী প্রতিবাদ ও আন্দোলনের মুখে জেলা প্রশাসন ২০০৩ সালে মদের ভাটিটি সিলগালা করে বন্ধ করে দেয়। পরবর্তিতে ওই বছরের ২৪ শে জুন জেলা প্রশাসনের তৎকালীন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট নেপুর আহমেদ স্বাক্ষরিত এক চিঠির মাধ্যমে সিলগালাকৃত মদের ভাটিটির খুলে চন্ডিতলা থেকে ১২ ঘন্টার মধ্যে নবাবগঞ্জ-আমনুরা রাস্তার পাশে কমিটি কর্তৃক প্রস্তাবিত স্থানে স্থানান্তর করার নির্দেশ দেন।
কিন্তু মনতোষ চক্রবর্তী জেলা প্রশাসনের নিন্দেশনা উপেক্ষা করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অসাধু কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে জেলা প্রশাসনের নির্ধারিত স্থানের পরিবর্তে মদের ভাটিটি শিল্পএলাকা বুলনপুরে স্থানান্তর করে এবং জেলা পরিষদের ১৬০ বর্গফুট জমি লিজ নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। পরবর্তিতে স্থানীয়রা প্রতিবাদ জানালে জেলা পরিষদ ওই লিজ বাতিল করে।
২০০৫ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থানা থেকে মৌখিক ভাবে ভাটিটি অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার জন্য নোটিশ দেয়। নোটিশের প্রেক্ষিতে মনতোষ চক্রবর্তী ২০০৫ সালের ৪ এপ্রিল নবাবগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ বরাবরে লিখিতভাবে নোটিশের জবাব দিয়ে জানায়, বুলনপুরে নিজের বসবাসের জন্য মাটি ক্রয় করে বাড়ি নির্মাণ করছেন। কে বা কারা আপনার বরাবরে আমি মদের দোকান নির্মাণ করছি বলে অভিযোগ করেছেন। যা সত্য নয়। আমি বাড়ি তৈরী করে সুষ্ঠুভাবে জীবনযাপনের সুযোগ দানের জন্য অনুরোধ করে নবাবগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়রি করি।
জানা গেছে, দেশীয় মদ বিক্রির জন্য সরকার চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার আমনুরায় আব্দুল বারী নামের এক ব্যক্তিকে লাইসেন্স দেয়, যার নম্বর ৫/৮২৮৩। সেটির মেয়াদ ছিল ২০২৩ সালের ২ জুলাই পর্যন্ত। অথচ বুলনপুর নামক স্থানে গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর পুরাতন বাজারের মনতোষ কুমার চক্রবর্তী জায়গা কিনে বাড়ি তৈরী না করে অবৈধভাবে মদের ভাটি করে ব্যবসা শুরু করেন। এখন পর্যন্ত সেখানে উম্মুক্তভাবে মদের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। ওই এলাকায় ছোট-বড় মিলে ৫০ টি অটো রাইস মিল গড়ে উঠেছে এবং সেখানে সহস্রাধিক শ্রমিক-কর্মচারী কাজ করেন। পাশাপাশি ওই এলাকায অনেকে বসতবাড়ি নির্মাণ করে বসবাস করছে। গড়ে উঠেছে কযকেটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
এ এলাকা দিয়ে প্রতিনিয়ত কোমলমতি শিক্ষার্থী, শ্রমিক-কর্মচারীসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ যাতাযাত করে থাকে। আর মদ্যপাযীরা বাংলা মদপান করে প্রকাশ্যে মাতলামি করার কারণে সামাজিক পরিবেশ কুলষিত হচ্ছে। রাস্তায ও আশেপাশের এলাকায বাংলা মদের খালি বোতল ফেলে রাখছে। এর ফলে দিন দিন এ অঞ্চলের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। শুধু তাই নয সরকারী নীতিমালা উপেক্ষা করে ভাটির মালিক জেলার বিভিন্ন অবৈধ মাদক ব্যবসাযীদের কাছে প্রতিদিন শত শত লিটার বিভিন্ন ধরণের মদ বিক্রি করছে। প্রতিদিন সূর্য ওঠার আগে অবৈধ মাদক ব্যবসাযীরা এই মদের ভাটি থেকে মদ নিয়ে মোটরসাইকেল ও মাইক্রোবাসে করে জেলার বিভিন্ন এলাকায নিয়ে যাচ্ছে। ফলে পুরো জেলায় মাদকাসক্তির সংখ্যা বিপদজনক হারে বাডছে।
এলাকাবাসীসহ মিল মালিকরা মদের ভাটি বন্ধের জন্য ইতিপূর্বে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও জেলা পরিষদ চেযারম্যান বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন। এমনকি স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকায বিভিন্ন সময়ে মদের ভাটির বিষয়ে সংবাদ প্রকাশিত হলেও তা বন্ধ হযনি।
বুলনপুর এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে ইসমাইল হোসেন জানান, বসত বাড়ি করার নাম করে সেখানে মনতোষ কুমার চক্রবর্তী মদের ভাটি হিসাবে ব্যবহার করছেন, যা তদন্ত করলেই প্রকৃত তথ্য বেরিয়ে আসবে। সামাজিক অবক্ষয এবং অপকর্মরোধে এলাকার স্বার্থে মদের ভাটিটি বন্ধ বা অন্যত্র সরানোর দাবী জানায এলাকাবাসী। গত ১২ মে অনুষ্ঠিত জেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভায় কযকেজন প্রভাবশালী সদস্য শিল্প এলাকা বুলনপুর থেকে মদের ভাটিটি অন্যত্র সরিয়ে নেওযার দাবী জানান।
এলাকাবাসী প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক এ কে এম গালিভ খাঁন জানান, এ বিষয সম্পর্কে তাঁর জানা নেই। তবে অভিযোগ পেলে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে জানান তিনি।