শিক্ষার্থীদের সৃষ্টিশীল করতে রাজশাহী কলেজে সৃজনশীল মেলা

জুল ইকরাম ইবতিদা: মানুষের নিজস্ব চিন্তাভাবনার আলোকে কোনোকিছু নতুন করে তৈরি করাকে এবং কোনো বিষয়কে নতুনভাবে উপস্থাপন করার চিন্তাকে সৃজনশীলতা বলে। সৃজনশীলতার মাধ্যমে কোন ব্যক্তি কোন নতুন কিছু করার প্রয়াস পায়। সৃজনশীলতার আরেকনাম সৃষ্টিশীলতা। যিনি সৃজণশীলতা চর্চা করেন বা সৃষ্টিশীল হন বা নতুন কিছু উপহার দেন তিনিই সৃজনশীল। আধুনিক যুগে যত উদ্ভাবন যত কিছু তৈরি হয়েছে সব কিছু নতুন সৃজনশীল চিন্তাধারার মাধ্যমে সংগঠিত হয়েছে। রাজশাহী কলেজের শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল করতে এবং তাদের দ্বারা নতুন কিছু উদ্ভাবন করাতে এবং তাদেরকে সৃজনশীলতার মাধ্যমে উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য রাজশাহী কলেজে শুরু হয়েছে দুই দিন ব্যাপী সৃজনশীল মেলার আয়োজন।
মোট ১৯টি স্টল নিয়ে অর্থনীতি বিভাগের ক্লাব অফ ইকোনমিক্স এর উদ্যোগে আয়োজিত হয়েছে সৃজনশীল মেলা। মঙ্গলবার সকালে সৃজনশীল মেলার উদ্বোধন করেন রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ প্রফসর মো আব্দুল খালেক এবং সাবেক ক্রিকেটার খালেদ মাসুদ পাইলট। সৃজনশীল মেলাতে যারা অংশগ্রহণ করেছে তারা সকলে রাজশাহী কলেজের শিক্ষার্থী। কলেজের শিক্ষার্থীরা সকলেই নিজ উদ্যোগে নতুন ভাবনা-চিন্তার মাধ্যমে স্বল্প পুঁজি দিয়ে নতুন কিছু করার উদ্দেশ্য নিয়ে সৃজনশীল মেলায় অংশ নিয়েছে।
সৃজনশীল মেলার স্টল গুলোর মধ্যে ছিল বইয়ের দোকান,মাছের একুরিয়ামের দোকান, বিভিন্ন প্রকার গাছের দোকান, শাড়ির দোকান, পাঞ্জাবির দোকান বিভিন্ন ধরনের পিঠার স্টল, মাটির হাড়ি পাতিলের স্টল এছাড়াও বুটিকসের স্টল, খালি হাতে সেলাই করা কাপড়ের দোকান ইত্যাদি।সৃজনশীল মেলাতে সর্বনিম্ন তিন হাজার টাকা পুঁজিতে স্টল দিয়েছে পিঠা ব্যাবসায়ীরা। এবং সর্বোচ্চ বারো হাজার টাকা পুঁজিতে একুরিয়ামের স্টল দিয়েছে অর্থনীতি বিভাগের মাস্টার্স পড়ুয়া শিক্ষার্থী ইয়াছিন আরাফাত।
সৃজনশীল মেলা সম্পর্কে ক্লাব অফ ইকোনমিক্স এর আহ্বায়ক পারভেজ পিয়াস বলেন, প্রতিবছরই এ ধরনের মেলা আমাদের উদ্যোগে হয়ে থাকে তবে এ বছর মেলাটির বড়সড়ো করে করা হয়েছে এবং মেলাতে নিজস্ব উদ্যোগে সবাই নিজস্ব অর্থায়নে সকল কিছু তৈরি করেছে। আমাদের মূল উদ্দেশ্য মুনাফা অর্জন নয়,রাজশাহী কলেজের শিক্ষার্থীরা যেনো সৃজনশীল হয়ে উদ্যোক্তা হতে পারে এটাই এই সৃজনশীল মেলার সার্থকতা। কলেজ প্রশাসন যদি সার্বিক ভাবে আমাদেরকে সাহায্য সহযোগিতা করে তাহলে পরবর্তী বছর থেকে সৃজনশীল মেলাটি আরো বড় পরিসরে করতে পারব এবং সাধারণদের জন্য ও স্টল দিতে পারব।
সৃজনশীল মেলায় সর্বোচ্চ পুঁজি নিয়ে স্টল দিয়েছেন অনার্স তৃতীয় বর্ষের একুরিয়াম ব্যবসাহী মোঃ ইয়াসিন আরাফাত। তিনি জানান প্রত্যেকটা একুরিয়ামের তৈরির জন্য তাদের খরচ প্রায় একশ থেকে দেড়শ টাকা তারা একুরিয়ামের পাশাপাশি মাছ এবং পাখির ব্রিডিং করছে।পাখির মধ্যে রয়েছে লাভ বার্ড, বাজুরিকা ইত্যাদি। এছাড়াও তারা খরগোশও বিক্রি করছে। তাদের মূল ব্যাবসা হয় অনলাইনে বিভিন্ন পেজের মাধ্যমে। একুরিয়ামের তৈরি থেকে পাখির ব্রিডিং সব কিছু নিজেরা করায় বাজারের তুলনায় শিক্ষার্থীরা অনেক কম দামে এখান থেকে তাদের পছন্দের জিনিস ক্রয় করতে পারবে।
রাজশাহী কলেজ অধ্যক্ষ মোঃ আব্দুল খালেক বলেন, এই সৃজনশীল মেলা অর্থনীতি বিভাগের ক্লাব অফ ইকোনোমিক্স এর একটি মহৎ উদ্যোগ। তারা প্রত্যেক বছরই এ ধরনের আয়োজন করে থাকে তবে প্রত্যেক বছর তারা পিঠার আয়োজন করলেও এবার তারা জিনিসটা ভিন্ন করে নতুন কিছুর বিকাশ ঘটিয়েছেন। এবং তাদের সৃজনশীল মেলার মাধ্যমে নিজেরাও যেমন পড়াশোনার পাশাপাশি উদ্যোক্তা হয়ে উঠছে পাশাপাশি তাদের নিজেদের অর্থের জোগান তারা নিজেরাই তৈরি করে নিচ্ছে। তাদের এই উদ্যেগে বা এই প্রতিষ্ঠানের দ্বারা অন্য ছেলেমেয়েদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিতে পারছে। এটা একটা রাজশাহী কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্য খুব আনন্দের বিষয়। রাজশাহী কলেজের শিক্ষার্থীরা বরাবরই সৃজনশীল তারা নতুনত্বে বিশ্বাসী। বঙ্গবন্ধু কন্যার স্মার্ট বাংলাদেশ তৈরির প্রকল্পে রাজশাহী কলেজ এই সৃজনশীল আয়োজনের মাধ্যমে রাজশাহী কলেজকে স্মার্ট হওয়ার দিক দিয়ে এক ধাপ এগিয়ে নিয়েছে।


প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২৪ | সময়: ৬:১৬ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ