বাগমারায় অবৈধ পুকুর খনন চার লক্ষাধিক টাকা জরিমানা

স্টাফ রিপোর্টার, বাগমারা: রাজশাহীর বাগমারায় অবৈধ ভাবে ফসলি জমিতে পুকুর খনন কিছুতেই থামছে না। উপজেলা প্রশাসনকে বাইপাছ করে রাতের অন্ধকারে অব্যাহত পুকুর খননে সাধারন লোক বেকায়দায় পড়েছে। যত্রতত্র পুকুর খননে কৃষি জমির পরিমান কমে যাচ্ছে এবং চাষাবাদ হুমকীর মুখে পড়ছে। অপরদিকে পুকুর খননের মাটিবাহি ট্রাক্টর রাস্তা-ঘাট নষ্ট করে ফেলছে।
সম্প্রতি চলমান পুকুর খননে গত ৪ দিনে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ভ্রাম্যমাণ আদলত পরিচালনা করে ৪ লক্ষাধিক টাকা জরিমানা করেছে। অব্যাহত ভ্রাম্যমাণ আদালত চলমান থাকলেও থামছেন অবৈধ ভাবে পুকুর খনন। এলাকায় এক শ্রেণি পুকুর ব্যবসায়ী স্থানীয়দের কাছে অল্প মূল্যে বেশী লাভের আশায় বিঘা চুক্তিতে কৃষি জমি লিজ নিয়ে পুকুর খনন করে ওই পুকুরই মৎস্য ব্যবসায়ীদের কাছে উচ্চ মূল্যে বিক্রি করছে। এতে কতিপয় লোক লাভবান হলেও অধিকাংশ মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন।
স্থানীয়রা অভিযোগ করে জানান, উপজেলার ঝিকরা, গোয়ালকান্দি, গণিপুর, শ্রীপুর, মাড়িয়া, নরদাশ ও ভবানীগঞ্জ পৌরসভার দরগামাড়িয়া হুদির বিলসহ বিভিন্ন এলাকায় অর্ধশত অবৈধ ভাবে পুকুর খনন চলছে। এসব পুকর দিনের বেলা লুকোচুরি ভাবে ও রাতের অন্ধকারে খনন অব্যাহত রেখেছে।
উপজেলা প্রশাসন থেকে অবৈধ ভাবে পুকুর খনন বন্ধের নির্দেশ থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গলি দেখিয়ে প্রভাবশালীরা রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় ফসলি জমিতে বরাবরই করছে পুকুর খনন। একই ভাবে অবৈধ জমিচাষের ট্রাক্টরের মাধ্যমে মাটি বহনে যানবহনে রাস্তা ভেঙ্গে চলাচলে ব্যাপক বিঘ্ন ঘটাচ্ছে। মাটি বহনের সময় মাটি পড়ে রাস্তায় যানবহন ঝুঁকিতে পড়ায় গতকাল বৃহস্পতিবার উপজেলা প্রশাসনের কাছে মাটি বহনে রাস্তার ক্ষতি ও চলাচলে ঝুঁকির বিষয় অভিযোগ করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা হামিরকুৎসা ইউনিয়নের অরজুন পাড়ার সোলাইমান আলী। তিনি পুকুর খননে চলাচলের বিড়াম্বনা ও ফসলি জমি কমে যাওয়াসহ ভবিষ্যতে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের আশংকা ব্যক্ত করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার উজ্জল হোসেনের কাছে অভিযোগ করেন।
অভিযোগটি আমলে নিয়ে বৃহস্পতিবার উপজেলার প্রশাসনের উদ্যোগে উপজেলা নির্বাহী অফিসার উজ্জল হোসেন ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি)সুমন চৌধুরী বাগমারা থানা পুলিশের সহযোগীতায় অবৈধ পুকুর খননে পৃথক অভিযান চালায়। বিকালে অভিযান কালে ভবানীগঞ্জ দরগামাড়িয়ার হুদির বিলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার উজ্জল হোসেন অভিযান ও ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে তাহেরপুর এলাকার সতিন্দ্রনাথের ছেলে শিবেন (৫০) কে বালুমহল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন ২০১০ এর ৪(খ) এর ১৫ ধারায় ভ্রাম্যমাণ আদালতে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। একই ভাবে উপজেলার গণিপুর ইউনিয়নের আচিনঘাট চান্দ্ররা এলাকায় উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুমন চৌধুরী থানার পুলিশের সহযোগীতায় পুকুরে অভিযান পরিচালনা করেন।
এতে তিনি ওই এলাকার আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে সহেল রানা (৩৬) কে পুকুর খনন দায়ে আটক করেন। পরে ভ্রাম্যমান আদালতে নেন। সেখানে নিজের অপরাধের দায় শিকার করায় অভিযুক্ত সহেলকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। ভ্রাম্যমাণ আদালতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব পালন করেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুমন চৌধুরী।
এছাড়া গত সোমবার ও মঙ্গলবার বাগমারায় পৃথক অভিযান কালে পুকুরের মালিক ও ভেকু চালককে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে জরিমানা করা হয়। ওই দিন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার উজ্জল হোসেন উপজেলার গোয়ালকান্দি রামরামা বিলে পুকুর খননের ভেকুর ড্রাইভার রাশেল চৌধুরী (২৯) কে হাতে নাতে ধরে ফেলেন। রাশেল বগুড়ার দুপচাচিয়ার মোজাহার চৌধুরীর ছেলে। তাকে ভ্রাম্যমান আদলতে হাজির করা হলে সে নিজের দোষ স্বীকার করে। অবৈধ ভাবে ফসলি জমিতে পুকুর খননে বালুমহল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন ২০১০ এর ৪(খ) এর ১৫ ধারায় ভ্রাম্যমাণ আদালতে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
একই ভাবে ওই এলাকার জামাল মন্ডলের ছেলে মিলন মন্ডল (২৩) কে পুকুর খননের দায়ে আটক করে ১ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়। এছাড়া পুকুর খননের সময় ভেকুর ড্রাইভার সিরাজগঞ্জ সদরের মৃত সমসের আলীর ছেলে আব্দুল আজিজকে ভ্রাম্যমান আদালতে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
একই দিনে উপজেলার সেনপাড়া এলাকায় ফসলি জমিতে পুকুর খননের অভিযোগে পুকুরের মালিক মিলন মন্ডল (৩৮) ভ্রাম্যমাণ আদালতে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
এ ব্যাপারে ভ্রাম্যমাণ আদালতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উপজেলা নির্বাহী অফিসার উজ্জল হোসেন ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুমন চৌধুরী বলেন, উপজেলায় অবৈধ ভাবে কোন পুকুর খনন করা যাবে না। অবৈধ ভাবে কোথাও ফসলি জমিতে পুকুর খনন করা হলে তাদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ ১০ লক্ষ টাকা জরিমান বা দুই বছরের কারাদন্ড প্রদান করা হবে। ফসলি জমিতে পুকুর খননের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রাখা হবে বলেও জানান প্রশাসনের এই দুই কর্মকর্তা।


প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২৪ | সময়: ৫:৫৪ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ