অহংকারের একুশে

সানশাইন ডেস্ক : আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি… না, আমরা ভুলতে পারি না। কোনো বাঙালিই ভুলতে পারে না। ভুলতে পারবে না কোনোদিন। কেন ভুলব? সেদিন রাজপথে রক্ত ঝরেছে আমার ভাইয়ের। মায়ের ভাষার জন্য লড়াই করেছেন তারা। প্রাণ দিয়েছেন অকাতরে। সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, শফিউর, আউয়াল, অহিউল্লাহ- বাংলা মায়ের অমর শহীদ ছেলে। বুকের রক্ত দিয়ে তারা লিখেছেন বাঙালির পালটে যাওয়ার নতুন ইতিহাস। সেদিনের বাংলাভাষার দাবি থেকেই আজকের বাংলাদেশ। নিজের ভাষায় কথা বলা। স্বাধীন দেশে পথচলা।
একুশ মানে এগিয়ে চলা। একুশ মানে মাথা নত না করা। একুশ আমাদের চেতনার শেকড়। একুশ আমাদের গর্ব। একুশ আমাদের অহঙ্কার। তাই প্রতি বছর আমরা একুশ পালন করি শোকের শক্তিকে শাণিত করতে। আমাদের মনে রাখতে হবে- শুধু আবেগে দিনটি পালন নয়।
দিনটিতে নয় কোনো আনন্দ উৎসব। এটি মহান শহীদ দিবস। এটা যেমন শোকের দিন, তেমনি শক্তি আর সাহসের অপরাজেয় বরাভয়। খালি পায়ে প্রভাতফেরির দিবস। শহীদ মিনারে ফুলের শ্রদ্ধা নিবেদনের দিন। বাঙালি চেতনায় অনড় শপথের দিন। শুধু একদিন নয়, প্রতিদিন যাপনে একুশকে ধারণের দিন। আর তাই জানতে হবে একুশের ইতিহাস।
অমর কেন একুশ? একুশে ফেব্রুয়ারি? এ দেশ ছিল আগে পাকিস্তানের শাসনে। পশ্চিমা শাসকরা তাদের উর্দু ভাষায় কথা বলাতে চেয়েছিল আমাদের। বাঙালির প্রাণের ভাষা বাংলার টুঁটি চেপে ধরতে চেয়েছিল তারা।
একুশের চেতনা কী? আর তরুণরা সেই চেতনা ধারণ করে কিভাবে? শুধু তরুণ নয়, আমাদের সবাইকে প্রথমেই মনে রাখতে হবে- একুশ কোনো আনন্দ উৎসব নয়। শহীদ ভাইদের রক্তঝরা দিন। একুশের চেতনা মানে সেজেগুজে হাত ধরাধরি করে ঘুরে বেড়ানো নয়।
নেচে-গেয়ে মাতামাতি নয়। শহীদ মিনারে ফুল দিতে গিয়ে হইহুল্লোড় নয়। মজা করে পিঠা-পায়েস আর ফুচকা চটপটি খাওয়ার দিন নয়। বাংলা ইংরেজি হিন্দি মিলিয়ে জগাখিচুড়ি ভাষা নয়। একুশ মানে একদিন নয়। প্রতিদিন। শুদ্ধ বাংলা বলা। শুদ্ধ বাংলার চর্চা। সর্বস্তরে বাংলার প্রচলন। শহীদ দিবস যথাযথ পালন।
বাঙালি জাতির অহংকার এই একুশের চেতনা বুঝতে হলে সঠিক ইতিহাস জানতে হবে। পটভূমি বুঝতে হবে। একটি ভাষা আন্দোলন কিভাবে একটি দেশকে স্বাধীনতার পথ দেখাল তার মর্ম অনুভব করতে হবে। সব তরুণ সমান নয়। কারও কারও বুকে রয়েছে ভাষার জন্য দেশের জন্য তুমুল ভালোবাসা। আর এ তরুণরাই পারবে। সামনে অনেক সম্ভাবনা। আমাদের দেশের তরুণরা অনেক এগিয়েছে নানা ক্ষেত্রে।
লেখাপড়া, ব্যবসা-বাণিজ্য, খেলাধুলা, বিজ্ঞান, সাহিত্য-সংস্কৃতি, আইটি আরও কত জায়গায় তারা ভালো করছে। এই তো কদিন আগে বিশ্বকে নাড়িয়ে দিয়েছে আমাদের কয়েকজন তরুণ। ক্রিকেটে বিশ্বকাপ জিতেছে তারা।
আমাদের আগামী প্রজন্ম নিশ্চয় একুশের চেতনা সঠিকভাবে বুকে ধারণ করবে। আর সেই চেতনায় গেয়ে উঠবে- আমি বাংলায় গান গাই, আমি বাংলার গান গাই। আমি আমার আমিকে চিনি এই বাংলায়।


প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২৪ | সময়: ৭:০৫ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ