নেদারল্যান্ডস, যুক্তরাজ্য ও আজারবাইজান থেকে বড় বিনিয়োগ আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

সানশাইন ডেস্ক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেদারল্যান্ডস, যুক্তরাজ্য এবং আজারবাইজানের কাছে আরও বড় বিনিয়োগ প্রত্যাশা করেছেন। নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুটে, যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং বর্তমান পররাষ্ট্র, কমনওয়েলথ ও উন্নয়ন বিষয়ক সচিব ডেভিড ক্যামেরন এবং আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পৃথক দ্বিপাক্ষিক বৈঠককালে তিনি এ আহ্বান জানান।
মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলন (এমএসসি) ২০২৪-এর ফাঁকে কনফারেন্স ভেন্যু হোটেল বেইরিশার হফ-এ সব বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকের পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান। নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে শেখ হাসিনা নেদারল্যান্ডসকে অন্যতম প্রধান উন্নয়ন অংশীদার হিসেবে বর্ণনা করে বাংলাদেশে আরও বিনিয়োগের অনুরোধ জানিয়েছেন।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, নেদারল্যান্ড বাংলাদেশে ‘ডেল্টা প্ল্যান-২১০০’ বাস্তবায়ন এবং ড্রেজিংয়ের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। প্রধানমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “বাংলাদেশের উন্নয়নে নেদারল্যান্ডস ব্যাপক অবদান রেখেছে।” বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাজ্যকে বাংলাদেশে আরও বেশি পরিমাণে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন। শেখ হাসিনা এবং যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এবং দেশ দুটির মধ্যে সম্পর্ক কীভাবে উন্নত করা যায় সে বিষয়ে আলোচনা করেছেন বলে জানান ড. হাছান মাহমুদ।
প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের উন্নয়নে যুক্তরাজ্যের অবদানের প্রশংসা করে দেশটিকে বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান উন্নয়ন অংশীদার হিসেবে বর্ণনা করেন। শেখ হাসিনা ক্যামেরনকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। আজারবাইজানের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন। এ সময় আজারবাইজানের রাষ্ট্রপতি বিদ্যমান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বৃদ্ধির জন্য একটি যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি আগামী নভেম্বরে আজারবাইজানে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া কপ২৯-এর আগে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। তারা যুদ্ধ বিশেষ করে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং গাজা আক্রমণের অবসানের বিষয়েও আলোচনা করেন। সিনিয়র পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন এবং জার্মানিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
গাজায় হামলা বন্ধে প্রধানমন্ত্রী ও জার্মানির চ্যান্সেলরের আলোচনা: এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শ্লোজ মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনের ফাঁকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ অবসানের এবং গাজায় আক্রমণ বিষয়ে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা করেছেন।
বৈঠকের পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেন, “যুদ্ধ অবসানের, বিশেষ করে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং গাজায় হামলা বন্ধের বিষয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এবং জার্মানির চ্যান্সেলরের মধ্যে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।” স্থানীয় সময় শনিবার বিকালে কনফারেন্স ভেন্যু হোটেল বেইরিশার হফ-এ বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। যুদ্ধের মাধ্যমে কোনও পক্ষই লাভবান হবে না— বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এবং জার্মানির চ্যান্সেলর উভয় নেতা একমত পোষণ করেন।
জার্মানির চ্যান্সেলরকে উদ্ধৃত করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘শান্তি প্রতিষ্ঠার একমাত্র প্রক্রিয়া হলো যুদ্ধ বন্ধ করা।’ প্রধানমন্ত্রী জার্মান চ্যান্সেলরকে বাংলাদেশে বিভিন্ন খাতে বিশেষ করে তথ্য-প্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগের আহ্বান জানান। বাংলাদেশ সারাদেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “জার্মানি বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে পারে।”
প্রধানমন্ত্রী জার্মান চ্যান্সেলরকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান এবং তিনি আমন্ত্রণ গ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধের পর স্বাধীন বাংলাদেশ পুনর্গঠনে জার্মানির অবদানের কথা স্মরণ করেন শেখ হাসিনা। ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সদস্য দেশের পাশাপাশি বাংলাদেশ থেকে সর্বোচ্চ পণ্য রফতানিকারক দেশ হওয়ায় জার্মানিতে আরও বাংলাদেশি পণ্য রফতানির বিষয়েও দুই নেতা আলোচনা করেন। তারা জার্মানিতে দক্ষ বাংলাদেশি জনশক্তি পাঠানোর বিষয়েও কথা বলেন।
দীর্ঘদিন পর অত্যন্ত আন্তরিক পরিবেশে অনুষ্ঠিত দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে ওলাফ শ্লোজ আবারও শেখ হাসিনাকে পঞ্চম ও টানা চতুর্থবারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ায় অভিনন্দন জানান। এর আগে সকালে, জার্মানির ফেডারেল অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়নমন্ত্রী সম্মেলনস্থলে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাসুদ বিন মোমেন এবং জার্মানিতে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।


প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২৪ | সময়: ৭:০৩ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ