রবিবার, ২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি :
একটি ২৪ বছরের নিমগাছকে ঘিরে রেখেছে গ্রামের মানুষ। এই গাছ থেকে তিতা রসের পরিবর্তে মিষ্টি রস পড়ছে এমন খবরে নিমগাছকে ঘিরে কৌতূহল মানুষের। সেই সাথে গ্রামের অনেকেই বিভিন্ন পাত্র গাছে ঝুলিয়েছেন রস সংগ্রহ করতে।
এমনটা ঘটেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়নের গড়াইপাড়া গ্রামের নাসির আলীর বাড়িতে। তার বাড়ির গলিতে থাকা নিমগাছ থেকে পড়ছে খেজুরের রসের মতো মিষ্টি রস। এ সময় বিভিন্ন রোগবালাই থেকে মুক্তির আশায় এই গাছ থেকে রস সংগ্রহে হিড়িক পড়েছে গ্রামবাসীর।
স্থানীয়রা জানান, গেল ১০ থেকে ১২ দিন ধরে গাছ থেকে অল্প অল্প রস বের হলেও তিন দিন থেকে অনেক বেশি পরিমাণ বেড়েছে। নিমগাছের পাতা, কাঁচা ফল, বীজ, কাণ্ড ও রস স্বাভাবিকভাবে তিতা হলেও এক ব্যক্তি মুখে নিয়ে এই গাছের রস মিষ্টতা পান। এ খবর ছড়িয়ে যায় পুরো গ্রামে। এরপর থেকেই গাছ দেখতে ছুটে আসছে উৎসুক জনতা।
ষাটোর্ধ্ব মোবারক আলী বলেন, ‘আমার জীবনে কখনো এমন ঘটনা কোন দিন দেখিনি। নিমগাছের পাকা ফল ছাড়া বাকি সবকিছুই তিতা। কিš‘ কাকতালীয়ভাবে গত কয়েকদিন থেকে আমাদের গ্রামের একটি নিমগাছ থেকে অতিরিক্ত পরিমাণে রস বের হ”েছ, এর স্বাদ মিষ্টি। আমি নিজেও খেয়ে দেখেছি।’
কলেজছাত্র ওসমান আলী বলেন, ‘শুধু স্বাদই নয়, নিমগাছটি থেকে বের হওয়া রসের গন্ধও খেজুরের রসের মতো। খেলে রোগবালাই ভালো হবে এই বিশ্বাস করে অনেকেই গাছের বিভিন্ন স্থানে বোতল লাগিয়ে রেখেছে রস সংগ্রহের জন্য। এমনকি রস বের হওয়ার ধরনটিও খেজুরের গাছের মতোই ফোঁটা ফোঁটা করে পড়ছে। তবে দিনের থেকে রাতে বেশি পরিমাণে রস বের হচ্ছে।’
গাছের মালিক নাসির আলী বলেন, গত কয়েকদিন আগে মৃত বাবা-মায়ের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে গ্রামের মসজিদে প্রায় ২৪ বছরের নিমগাছটি দান করি। তবে এর আগে থেকেই রস বের হচ্ছে এমনকি মসজিদ কমিটিও গাছটি বিক্রি করেছে। কখন কাটা হবে তা জানা নেই। এরমধ্যেই গাছ থেকে রস বের হওয়ার পরিমাণ বেড়েছে এবং তা সংগ্রহ করার হিড়িক পড়েছে।’
বড়াইপাড়া জামে মসজিদের ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য মো. মহসীন আলী বলেন, ‘গাছটি দান পাওয়ার পর মসজিদ কমিটি ৯ হাজার টাকায় বিক্রি করেছে। ক্রেতা ২ হাজার টাকাও দিয়েছে। গাছ যেদিন কাটবে, সেদিন বাকি টাকাও পরিশোধ করার কথা রয়েছে। এরমধ্যেই এই গাছ নিয়ে অবাক কাণ্ড ঘটে । রস সংগ্রহ করতে গাছের যেকোনো অংশে বোতল লাগাতে রীতিমতো প্রতিযোগিতা চলছে।’
চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘দুই সপ্তাহ থেকেই হঠাৎ করেই গাছটি দিয়ে ফেনাযুক্ত রস বের হতে দেখা যায়। কিš‘ গত তিনদিন ধরে এর পরিমাণ বেড়েছে। কেউ একজন মুখে মিষ্টি বলার পর সবাই এসে মুখে নিয়ে বিশ্বাস করছে। কেউ কেউ আবার দূর দূরান্ত থেকে নিমগাছের এমন অদ্ভুত কার্যক্রম দেখতে সরেজমিনে আসছেন। কেউ কেউ এসে ছবিও তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছাড়ছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘গ্রামের অনেক মানুষের মনে বিশ্বাস, এটি মহান সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত অলৌকিক ক্ষমতা সম্পন্ন গাছ। তাই নিমগাছটির রস খেলে বিভিন্ন রোগবালাই থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে, এমন বিশ্বাস থেকে রস সংগ্রহ করে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে খাচ্ছেন। তবে গ্রামে এখন পর্যন্ত এই রস খেয়ে কেউ সুস্থ হয়েছেন বলে জানা যায়নি।’
নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান ও অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ প্রফেসর দাউদ হোসেন বলেন,’ নিমগাছে আঠা রস বের হয়, সেটা তিতা। এমন ঘটনা কোন দিন শুনিনি, যে নিমগাছে রস মিষ্টি হয়। এটা হরমোনজনিত কারণে হতে পারে। এই রস পরীক্ষার মাধ্যেমে নিশ্চিত না হয়ে খাওয়া ঠিক হবেনা বলও জানান এই শিক্ষক’।
সানশাইন / শামি