নাইট্রোজেন গ্যাস দিয়ে প্রথম মৃত্যুদণ্ড কার্যকর যুক্তরাষ্ট্রে

সানশাইন ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের অ্যালাবামা অঙ্গরাজ্য নাইট্রোজেন গ্যাস ব্যবহার করে দোষী সাব্যস্ত এক খুনির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে।
প্রাণঘাতী ইঞ্জেকশন ব্যবহার করে সর্বোচ্চ সাজা কার্যকর করার পদ্ধতি চালু হওয়ার চার দশক পর বৃহস্পতিবার নতুন আরেকটি পদ্ধতি ব্যবহার করল যুক্তরাষ্ট্র। এদিন আদালত কর্তৃক দোষী সাব্যস্ত খুনি কেনেথ স্মিথের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। ভাড়াটে খুনি স্মিথকে ১৯৮৮ সালে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। কিন্তু তার মৃত্যুদণ্ড একবার কার্যকর করার চেষ্টা করা হলেও সে বেঁচে যায়। বিরল ওই ঘটনাটি ঘটে ২০২২ সালের নভেম্বরে। ওই সময় তার দেহের শিরায় একটি সুই ঢোকানোর জন্য কয়েক ঘণ্টা চেষ্টা করা হলেও তা প্রবেশ করানো যায়নি। এ ঘটনার পর অ্যালবামার কর্মকর্তারা প্রাণঘাতী ইঞ্জেকশন দিয়ে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা বাতিল করেন।
এরপর অঙ্গরাজ্যটি নাইট্রোজেন গ্যাস প্রয়োগে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার পদ্ধতি ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেয়। নতুন এই পদ্ধতিকে ‘মানুষের জানা মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের সবচেয়ে কম যন্ত্রণাদায়ক ও মানবিক উপায়’ বলে অভিহিত করেছিল তারা। কর্তৃপক্ষের ধারণা ছিল নাইট্রোজেন গ্যাস প্রয়োগের এক মিনিটের মধ্যেই স্মিথ জ্ঞান হারাবে ও মারা যাবে। কিন্তু বৃহস্পতিবার ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, এতে আরও কয়েক মিনিট লেগেছে বলে মনে হয়েছে।
মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার জন্য হয় শিরা নয় তো প্রাণাঘাতী ইঞ্জেকশনের খোঁজে হন্যে হয়ে থাকা কারাগারগুলোর জন্য শ্বাসরোধ একটি সহজ বিকল্প বলে দাবি করেছে অ্যালাবামা। রয়টাসর্ জানিয়েছে, জাতিসংঘের নির্যাতন বিশেষজ্ঞ ও স্মিথের আইনজীবীরা মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের এই পদ্ধতির বিরুদ্ধে ছিল। তাদের বক্তব্য ছিল, এই পদ্ধতি ঝুঁকিপূর্ণ, পরীক্ষামূলক এবং এটি যন্ত্রণাদায়ক মৃত্যু বা আঘাতের কারণ হতে পারে।
বৃহস্পতিবার স্মিথ দ্বিতীয় কিন্তু শেষবারের মতো জল্লাদখানায় যান। জল্লাদরা তাকে একটি চাকা ওয়ালা স্ট্রেচারে আটকে রেখে তার মুখে কল-কারখানায় ব্যবহার করা হয় এমনটি একটি মানসম্মত মুখোশ বেঁধে দেন। এরপর ওই মুখোশে বিশুদ্ধ নাইট্রোজেন ভরা একটি ক্যান আটকে দেন। এই নাইট্রোজেনের প্রবাহ স্মিথকে অক্সিজেন নেওয়া থেকে বঞ্চিত করে। কারা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টা ৫৩ মিনিটে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর শুরু হয়, এরপর রাত ৮টা ২৫ মিনিটে স্মিথকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
গণমাধ্যমের প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে পাঁচজন সাংবাদিক এ মৃত্যুদণ্ড দেখার অনুমতি পেয়েছিলেন। তারা জানিয়েছেন, নাইট্রোজেন প্রয়োগ শুরু করার পরও স্মিথ বেশ কয়েকটি মিনিট সজাগ ছিলেন। এরপর তিনি তার মাথা ঝাঁকাতে থাকেন আর প্রায় দুই মিনিট ধরে মোচড়ামোচড়ি করেন, তারপর বেশ কয়েক মিনিট ধরে গভীরভাবে শ্বাস নিতে থাকেন, একপর্যায়ে শ্বাসপ্রশ্বাস ধীর হয়ে আসে যা পরে আর দৃষ্টিগোচর হয়নি। মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার পর এক সংবাদ সম্মেলনে অ্যালাবামার সংশোধন কমিশনার জন হ্যাম বলেন, “মনে হয়েছে স্মিথ যতক্ষণ সম্ভব তার নিশ্বাস ধরে রেখেছিলেন।”


প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৭, ২০২৪ | সময়: ৩:৫৪ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ