সর্বশেষ সংবাদ :

স্কুল খোলা না কি বন্ধের জগাখিচুড়ি সিদ্ধান্ত : শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের ক্ষোভ

স্টাফ রিপোর্টার: সকাল ১০টায় ক্লাস শুরু হবে, না কি বিদ্যালয় বন্ধ থাকবে? রাত থেকেই অভিভাবকদের চোখ মোবাইলে। কোন ম্যাসেজ এলো না। সকালে বিপাক আরো বাড়লো। কোন ম্যাসেজ না পেয়ে কেউ বসে রইলেন বাড়িতে আবার কেউ সন্তানদের তৈরি করে নিয়ে ছুটলেন বিদ্যালয়ে। যার বিদ্যালয়ে উপস্থিত হলেন সেখানেও বিড়ম্বনা। কোথাও বিদ্যালয় খোলা, আবার কোথাও বিদ্যালয় থেকে ফেরত পাঠানো হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। নির্দেশনা অনুসরণ না করা, বিদ্যালয় খোলা না বন্ধ থাকবে তা নিয়ে শিক্ষা কর্মকর্তাদের সিদ্ধান্ত জানাতে অবহেলায় চরম বিপাকে পড়েছে শিক্ষার্থীরা। এ নিয়ে অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভও দেখা দিয়েছে।
ঢাকা, রাজশাহী, রংপুর ও খুলনা বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। রাজশাহীতে মঙ্গলবার সকাল ৯ টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৭.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াম। ৬ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে তাপমাত্রা থাকলে মৃদ্যু শৈত্য প্রবাহ ধরা হয়। সেই হিসেবে রাজশাহী জেলায় মৃদু শৈত্য প্রবাহ চলছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিন্ধান্ত মোতাবেক তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে থাকলে মাধ্যমিক ও প্রাথমিকের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। তবে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার আদেশ জারির হটকারি সিদ্ধান্তে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন রাজশাহী জেলার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অভিভাবকগণ।
২০ জানুয়ারী রাজশাহীতে তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রী নিচে নেমে আসায় হঠাৎ রাত ১০টার দিকে রাজশাহী অঞ্চলের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. শরমিন ফেরদৌস চৌধুরী সই করা বিজ্ঞপ্তিতে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের চিঠি দিয়ে ২১ ও ২২ জানুয়ারী পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রাখার সিন্ধান্তের কথা জানান। একই ভাবে শুধুমাত্র ২১ জানুয়ারী একদিনের জন্য পাঠদান বন্ধের নির্দেশনা প্রদান করেন রাজশাহী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সাইদুল ইসলাম।
ওই রাতেই তাড়াহুড়ো করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানরা স্কুলের ফেসবুক পেজে বা ব্যাক্তিগত আইডি থেকে পাঠদান বন্ধর কথা জানানো হয়। তবে রাতে এই নির্দেশনা দেয়ায় অধিকাংশ শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা না জানতে পারাই তীব্র শীত উপেক্ষা করে স্কুলে এসে উপস্থিত হয়।
রাজশাহী মহানগরীর একটি কিন্ডার গার্ডেনের প্রধান শিক্ষক জানান, আমরা ছুটির বিষয়টি আগে জানতে পারিনি। স্কুলে আসার পর বেলা ১১টার দিকে ই-মেইলে নির্দেশনাটি পেয়েছি। ততক্ষণে সকল শিক্ষার্থী ক্লাসে এসে উপস্থিত। তাই আর ছুটি দেওয়া হয়নি। তিনি এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিলে আগেই জানিয়ে দেওয়ার অনুরোধ জানান কর্তৃপক্ষকে।
রাজশাহী মহানগরীসহ জেলার বিভিন্ন স্কুল ঘুরে দেখা যায় স্কুলে শিক্ষার্থীরা উপস্থিত হয়ে গেছে। পরে পাঠদান বন্ধর নির্দেশনা দেওয়ায় তারা বিরক্ত হয়ে বাড়ী ফিরে যাচ্ছে। মঙ্গলবার সকাল ৯টায় রাজশাহীর তাপমাত্রা ৭.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে আসার পর রাজশাহী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সাইদুল ইসলাম সকাল সাড়ে ৯ টার দিকে স্কুলে পাঠদান বন্ধ রাখার কথা জানান। এরই মধ্যে শিক্ষার্থীরা স্কুলে গিয়ে উপস্থিত হয়ে যায়। পরে এই নির্দেশনা জানার পর তড়িঘরি করে শিক্ষার্থীদের বাড়ী ফিরে যাওয়ার কথা জানান। তবে মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুলে পাঠদান মঙ্গলবার অব্যাহত আছে।
রাজশাহী জেলার মাধ্যমিক ও প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের এমন হটকারি সিদ্ধান্তে ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া জানান শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে শিক্ষকরা জানান, স্যারদের এমন হটকারি সিন্ধন্তে আমরা বিভ্রান্তিতে পড়েছি। প্রচন্ড ঠান্ডায় শিক্ষার্থীরা সকালে স্কুলে আসার পর জানতে পারছি স্কুলে পাঠদান বন্ধ করা হয়েছে। এতে করে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। কোন কোন অভিভাবক আমাদের কটু কথাও শুনিয়ে দিচ্ছে। এমন সিন্ধান্ত পরিকল্পনা মাফিক আগের দিন জানানোর অনুরোধ করেন তারা।
এসব শিক্ষকরা শিক্ষা কর্মকর্তাদের হয়রানি ও বদলির ভয়ে তাদের নাম গণমাধ্যমে প্রকাশ না করারও অনুরোধ জানান।
এদিকে গোদাগাড়ী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক মর্জিনা খাতুন জানান, আমার বাচ্চাটি এ্যাজমা, টনসিলসহ বিভিন্ন ঠান্ডা জনিত রোগে আক্রান্ত। রাতে খবর নিয়েছিলাম আজ স্কুল বন্ধ থাকবে কিনা তবে বন্ধ না থাকার কথা জানতে পেরে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে আমার মেয়ে স্কুলে চলে গেছে। তার আগে আমার ছোট ছেলে নার্সারী ক্লাসে পড়ে তাকেও স্কুলে রাখতে যেতে হয়েছে।
তিনি আরো জানান, খুব সকালে নিজেরা ও তাকে উঠিয়ে নাস্তা বানিয়ে খাওয়ে পাঠানোর প্রস্তুতি নিতে হয়। এখন জানতে পারছি স্কুল বন্ধ। হঠাৎ এমন নির্দেশনায় মেয়েকে আবার স্কুল থেকে আনতে হয়েছে। এই অভিভাবক চান স্কুলে পাঠদান বন্ধর নির্দেশনা দেওয়া হলে আগেই জানাতে ফলে এই দুর্ভোগ থেকে বাঁচবেন।
এসব বিষয় নিয়ে রাজশাহী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সাইদুল ইসলাম বলেন, আসলে আবহাওয়ার বিষয়টি কখনো বেশী হচ্ছে আবার কখনো কমে যাচ্ছে তাই সিন্ধান্ত নেওয়া কঠিন হয়ে যাচ্ছে। এছাড়াও আমরা আমাদের নিজেদের মত সিদ্ধান্ত নিতে পারিনা। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ মোতাবেক সিদ্ধান্ত নিতে হয়। সোমবার আমরা আবহাওয়া অফিসের সাথে কথা বলেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম পাঠদানের জন্য কিন্তু সকালে তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় হঠাৎ করেই ডিডি স্যারের নির্দেশনায় এই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। আমরা চেষ্ঠা করছি আগের দিনে এসব বিষয় গুলো সিদ্ধান্ত নিয়ে জানিয়ে দেয়ার।
রাজশাহী জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার নাসির উদ্দিন বলেন, আমরা সোমবার আবহাওয়া অফিসের সাথে কথা বলেছিলাম তারা বলেছিলো ১০ ডিগ্রির নিচে তাপমাত্রা নামবে না তাই পাঠদান বন্ধর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। তারা যেভাবে আমাদের বার্তা দিচ্ছে সেই ভাবে সিন্ধান্ত নিচ্ছি বলে জানান।


প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৪, ২০২৪ | সময়: ৫:০৭ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ

আরও খবর