চার জেলায় শৈত্যপ্রবাহ, বৃষ্টির আভাস : কনকনে শীতে কাঁপছে উত্তরাঞ্চল

স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহীতে একদিনের ব্যবধানে কমেছে ৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা। সেই সঙ্গে শুরু হয়েছে শৈত্যপ্রবাহ। ঘন কুয়াশায় দুপুর গড়িয়ে গেলেও দেখা নেই সূর্যের। এমন প্রকৃতিতে কনকনে শীত নেমেছে। এতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। এমন শীতে ফুটপাতে বেড়েছে গরম কাপড় বিক্রি। পাশাপাশি হাসপাতালে বাড়ছে শীতজনিত অসুস্থ রোগির সংখ্যা।
আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রহিদুল ইসলাম জানিয়েছেন, জানুয়ারিতে রাজশাহী অঞ্চলের উপর দিয়ে দুইটি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এখন শৈত্যপ্রবাহের কাছাকাছি অবস্থান করছে তাপমাত্রা। শুক্রবার রাজশাহীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০ দশমিক ৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস। এর আগের দিন বৃহস্পতিবার ছিল ১৩ দশমিক ৩ ডিগ্রী।
এদিকে, জানুয়ারির মাঝামাঝি এ সময়ে দেশজুড়ে জেঁকে বসেছে শীত। দেশের চার জেলায় বয়ে চলেছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। সকাল থেকে ঘন কুয়াশা। বেলা ১টার দিকেও কুয়াশা কাটেনি। শুক্রবার কিশোরগঞ্জের নিকলী ও চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বৃহস্পতিবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল নিকলীতেই ১০ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়া অধিদপ্তর শুক্রবার সকাল ৯টায় আগামী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়া পরিস্থিতি তুলে ধরেছে। সেখানে বলা হয়েছে, অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে পরদিন সকাল পর্যন্ত সারা দেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে এবং এটি কোথাও কোথাও দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে।
দেশের চার জেলায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। সেগুলো হলো কিশোরগঞ্জ, পাবনা, দিনাজপুর ও চুয়াডাঙ্গা। এ অবস্থা অব্যাহত থাকতে পারে। সারা দেশে রাতের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে। দেশের কোথাও কোথাও দিনে ঠান্ডা পরিস্থিতি থাকতে পারে বলেও জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
এদিকে স্টাফ রিপোর্টার, বাঘা থেকে জানান, পৌষের শেষ দিকে জেঁকে বসেছে শীত। কনকনে ঠান্ডা আর ঘন কুয়াশায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। বিশেষ করে দিনমজুর ও খেটে খাওয়া মানুষ কষ্টে দিন পার করছেন। কুয়াশায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বোরো ধানের বীজতলা। হাসপাতাল গুলোতে বাড়ছে ঠান্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা। শুক্রবার সাকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সূর্যের দেখা মেলেনি। সীমান্তবর্তী উপজেলা হওয়ায় বাঘায় অতিকষ্টে জীবন যাপন করছে অসহায় গরীবদুখি মানুষ।
স্থানীয় লোকজন বলছেন, দেশের উত্তরের জনপদগুলির মধ্যে রাজশাহীর সীমান্তবর্তী উপজেলা বাঘা অন্যতম। গত কয়েকদিন যাবত পৌষের মাঝামাঝি ঠান্ডার প্রকোপ বেড়ে নাকাল অবস্থা জনজীবন। সবথেকে বিপদে পড়েছে খেটে খাওয়া দিনমজুর-সহ নিম্ন আয়ের মানুষ। এখানে প্রচন্ড শীতের কারণে বোরো ধানের বীজতলা ও আলু সহ বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। যদি শীতের পাশা-পাশি কুয়াশা না কমে, তাহলে বিভিন্ন ফসলের ব্যপক ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে আতঙ্কে কৃষক।
এ অঞ্চলে শীতজনিত কারণে হঠাৎ করেই বেড়েছে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব। গত এক সপ্তাহে অর্ধশতাধিক ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। তবে এসব আক্রান্তের মধ্যে অধিকাংশই শিশু।
বাঘা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান বলেন, শীতজনিত কারণে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে শিশু ও বয়স্ক মানুষ। এখানে যারা ভর্তি রয়েছে তার মধ্যে সীমান্তবর্তী চরাঞ্চলের রুগীর সংখ্যা বেশি।
বাঘার বিশিষ্ট সমাজসেবক ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান খন্দকার মনোয়ারুল ইসলাম মামুন বলেন, গত দুদিন থেকে মৃদু শৈত্য প্রবাহে অনেকটাই বিপর্যস্ত এখানকার জনজীবন। সূর্যের লুকোচুরিতে শীত নিবারণে পর্যাপ্ত গরম কাপড় না থাকায় নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষেরা পড়ছেন বিপাকে। আয়-রোজগারে শীতের প্রভাব পড়ায় কষ্টে আছেন দিনমজুর ও শ্রমিক-সহ নিম্ন আয়ের মানুষেরা। এই মুহূর্তে শীত নিবারণের জন্য তাদের মাঝে গরম কাপড় হিসাবে কম্বল বিতরণ করা খুবই প্রয়োজন।
বাঘা উপজেলা স্বাস্থ্য ও কমপ্লেক্রের প্রধান কর্মকর্তা ডা. আসাদুজ্জামান জানান, তীব্র শীতের কারণে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা কিছুটা বেড়েছে। কাবু হয়ে পড়ছেন রিকসা ও ভ্যান চালক সহ নিম্ন আয়ের পরিবারের সদস্যরা। এর ফলে ডায়রিয়া, সর্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্টের রোগের প্রাদুর্ভাব অনেক বাড়ছে। জনজীবনে দেখা দিয়েছে দুর্ভোগ। স্বল্প আয় থাকায় গরম কাপড় কেনা তাদের অধিকাংশেরই সামর্থের বাইরে। শীত নিবারণে এসব পরিবার সদস্যরা ঘরের ভেতরে ও বাইরে খড়কুটো দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে শরীরে গরমের ভাপ নিচ্ছেন।
বাঘা উপজেলা নির্বাহী অফিসার তরিকুল ইসলাম জানান, এবছর শীত মৌসুমে আমরা সরকারী ভাবে ৪ হাজার কম্বল পেয়েছি। ইতোমধ্যে এ উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন পরিষদ ও ২টি পৌর সভাকে দুস্থদের জন্য কম্বল দেয়া হয়েছে।
এছাড়াও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গরিব মুক্তিযোদ্ধা, গুচ্ছগ্রাম ও আশ্রায়ন প্রকল্প গুলোতে আমরা কম্বল বিতরণ করেছি। পৌষের শেষে চার জেলায় শৈত্যপ্রবাহের সঙ্গে হিম হাওয়ায় কাঁপছে দেশের বিস্তীর্ণ জনপদ। বিভিন্ন এলাকায় শুক্রবার দুপুর পর্যন্তও দেখা মেলেনি সূর্যের; ঘন কুয়াশা আর ঠান্ডা বাতাসে জবুথবু অবস্থা রাজধানীসহ উত্তরাঞ্চল জুড়ে।
এদিন সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, সারা দেশে মধ্য রাত থেকে সকাল পর্যন্ত মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। কোথাও তা গড়াতে পারে দুপুর পর্যন্তও। বিঘ্ন ঘটতে পারে বিমান, নৌ ও সড়কে যানবাহন চলাচলে। এছাড়া সারা দেশে রাতের তাপমাত্রা কিছুটা বাড়লেও দিনের তাপমাত্রা কমে ঠান্ডা পরিস্থিতি চলতে পারে। আর বর্ধিত পাঁচদিনের পূর্বাভাসে বৃষ্টি অথবা বজ্রবৃষ্টির আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
শুক্রবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে কিশোরগঞ্জের নিকলি ও চুয়াডাঙ্গায়, ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পাবনার ঈশ্বরদীতে ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি ও দিনাজপুরে ১০ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। বড় এলাকাজুড়ে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে গেলে তাকে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ ধরা হয়; ৬ থেকে ৮ ডিগ্রির মধ্যে থাকলে মাঝারি এবং ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে তাকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়। সেই হিসেবে চার জেলায় এখন মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।
তবে এই শৈত্যপ্রবাহের ব্যাপ্তি ধীরে ধীরে কমে আসবে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক। তিনি বলেন, “শৈত্যপ্রবাহ যেটা আছে, আস্তে-আস্তে কমবে। কারণ তাপমাত্রা বাড়বে, দুই-এক দিনের মধ্যে শৈত্যপ্রবাহ কমে আসবে। “তবে দিনের কুয়াশাচ্ছন্ন অবস্থা আরও দুই-তিনদিন অব্যাহত থাকতে পারে, যার কারণে শীতের অনুভূতি থাকবে।”


প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৩, ২০২৪ | সময়: ৫:৫৫ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ

আরও খবর