সর্বশেষ সংবাদ :

জীবনে কখনো এত দামে আলু বিক্রি করিনি

সানশাইন ডেস্ক: ভরা মৌসুম, অথচ আলুর দাম এখন অন্য সময়ের থেকে সর্বোচ্চ। এতে যেমন বিরক্ত ক্রেতা, তেমনি বিক্রেতারাও। যেন কোন এক অদৃশ্য কারণে এ পণ্যটি নাগালের মধ্যে আসছে না। আলুর এ দামকে অযৌক্তিক বলছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
শুক্রবার রাজধানীর শান্তিনগরসহ আশপাশে সেগুনবাগিচা ও ফকিরাপুল বাজার ঘুরে দেখা যায় আলুর বাড়তি দাম। অর্থাৎ ৭০ টাকার নিচে এখন কোনো আলুই মিলছে না। ভালো (বাছায় করা) আলুর দাম ৮০ টাকা প্রতিকেজি। এতে করে দেখা যায়, গত বছরের একই সময়ের চেয়ে এখন আলু চারগুণ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বাজারদরের তালিকানুযায়ী, গত বছর এসময় আলু ১৬-২২ টাকার মধ্যে ছিল।
চলতি বছর সেপ্টেম্বর থেকে হঠাৎ বাড়তে শুরু করে আলুর দাম। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজিতে আলুর দাম ৩৫-৩৬ টাকা (হিমাগার পর্যায়ে ২৬-২৭) বেধে দেয়। সেই সঙ্গে আমদানির অনুমতি এবং দাম স্থিতিশীল রাখতে অভিযান শুরু করে প্রশাসন। জেলায় জেলায় হিমাগার পর্যায়েও তদারকি করা হয়। কিন্তু বাজারে এর কোনো প্রভাব দেখা যায়নি। উল্টো দাম আরও বেড়েছে। ৫০ টাকার নিচে নামেনি আলু।
শান্তিনগর বাজারের ব্যবসায়ী জহির মিয়ায় সঙ্গে কথা হয়। তিনি সেখানে ২০ বছরের বেশি সময় সবজি বিক্রি করছেন। আলুর বাড়তি দামে বিব্রত তিনিও। আগে কখনো ভরা মৌসুমে এত দামে আলু বিক্রির রেকর্ড নেই তার। এ ব্যবসায়ী বলেন, ‘মৌসুমের সময় জীবনে কখনো এত দামে আলু বিক্রি করিনি। ভালো লাগে না। খালি খালি কাস্টমারের সঙ্গে তর্ক হয়। কী করবো বলেন? বেশি দামে কিনে কমে বিক্রি করবো কীভাবে?’
তিনি আরও বলেন, আলু যখন নতুন আসে, তখনকার কথা ভিন্ন। এখন তো ভরা সিজন। এত দাম কেন, আমার নিজেরই মাথায় খেলে না। সেগুনবাগিচা বাজারের বিক্রেতা অনিস বলেন, এক বস্তা (৭০ কেজি) নতুন আলুর দাম এখন চার হাজার ৮০০ টাকায় কেনা। এরপর পরিবহন ও খাজনাসহ দাম পড়ে ৭২ টাকা কেজি। এরমধ্যে প্রায় ১০ কেজি আলু থাকে একদম ছোট ও খারাপ মানের। যেগুলো আলাদা করে কম দামে বিক্রি করতে হয়। যে কারণে ৮০ টাকার নিচে আলু বিক্রি করলে লাভ হবে না।
আলুর দামের বিষয়ে কথা হয় কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এখন বাজারে কোনো ব্যালেন্স নেই। কোথাও সিন্ডিকেট কাজ করছে, কোথাও মুদ্রাস্ফীতির পরিবেশ কাজে লাগিয়ে অতি মুনাফালোভীদের সক্রিয় করা হয়েছে। আলুর ক্ষেত্রে যতটা সমস্যা রয়েছে, তার চেয়ে বেশি সমস্যাকে কাজে লাগিয়ে অবৈধ মুনাফা করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, ‘এ আলু নিয়ে সরকার কিছুদিন হৈচৈ করেছে। কিন্তু ক্রেতা প্রতারণার নানা ক্ষেত্র এখন বাজারে। সেই ক্ষেত্রে আইন আরও কার্যকর প্রয়োজন। কঠোর প্রয়োগ প্রয়োজন। ওই দুর্বলতার করণে ব্যবসায়ীরা তোয়াক্কাহীন হয়ে পড়েছেন।’ গোলাম রহমান বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা ভালো করে জানেন, আমাদের আইনি দুর্বলতা ও জটিলতা রয়েছে। তারা সেটার সুযোগ নিচ্ছে। আমাদের আইনের প্রয়োগ আরও কার্যকর করা দরকার। বাজার নিয়ন্ত্রণে চলমান কার্যক্রম একদমই যথেষ্ট নয়।’


প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৩০, ২০২৩ | সময়: ৬:৪৯ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ