গণশুনানিতে তাৎক্ষণিক সমাধান দিলেন বিআরটিএ চেয়ারম্যান

স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহীতে গণশুনানিতে চালকদের নানা সমস্যার তাৎক্ষণিক সমাধান করে দিয়েছেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার। জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল কর্মপরিকল্পনা ২০২৩-২৪ এর আওতায় বিআরটিএর রাজশাহী সার্কেলে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এই গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়। এতে চালক, হেলপার, গাড়ির মালিক ও শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা অংশ নেন। গণশুনানিতে নানা অভিযোগ উঠে আসে।
গণশুনাতিতে রাজশাহী জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) সাবিহা সুলতানা, বিআরটিএর রাজশাহী সার্কেলের উপপরিচালক এস এম কামরুল হাসান ও সহকারী পরিচালক মোশাররফ হোসেনও উপ¯ি’ত ছিলেন। তারাও বিভিন্ন সমস্যার সমাধান দেন।
গণশুনানিতে জনি নামের এক ট্রাকচালক নিজের ই-ড্রাইভিং লাইসেন্স দেখিয়ে বলেন, ‘স্যার, এই কার্ডটা আমি পেয়েছি ৬ আগস্ট। এখনও স্মার্টকার্ড পাইনি। এটা ই-ড্রাইভিং লাইসেন্স। সার্জেন্টকে দেখালে বলে, এটা দিয়ে গাড়ি চালানো যাবে না। সার্জেন্টের সাথে কথা বলা যায় না স্যার। সার্জেন্ট বলে, যতটা কথা বলব, তত ২০০ টাকা করে জরিমানা বাড়বে। মামলা লাগিয়ে দেয়, তা না হলে রাস্তায় টাকা নেয়। রাস্তায় আমরা অসহায় হয়ে পড়েছি স্যার।’
এ সময় বিআরটিএ চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার জানতে চান, কোন সার্জেন্ট ই-ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকলেও মামলা দেন। জনি বলেন, কেউই মানে না স্যার। চেয়ারম্যান বলেন, ‘এই ই-ড্রাইভিং লাইসেন্স চালু করেই আমরা আইজিপিকি চিঠি দিয়েছি। সারাদেশের পুলিশ ইউনিটে চিঠি দিয়েছি যেন মামলা দেওয়া না হয়। এই কার্ডে কিউআর কোড আছে। সার্জেন্ট এটা যাচাই করতে পারবে। তারপরেও মামলা দায়ের করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
এ সময় তিনি রাজশাহী জেলা পুলিশের ট্রাফিক পরিদর্শককে ডেকে পাঠান। ট্রাফিকের পরিদর্শক আনোয়ার হোসেন এসে জানান, ই-ড্রাইভিং লাইসেন্স সম্পর্কে তিনি অবগত। কোন সার্জেন্ট যদি এটা থাকার পরেও মামলা দেন, তাহলে সেটা ওই সার্জেন্টের অজ্ঞতা। এ সময় বিআরটিএ চেয়ারম্যান এই লাইসেন্সের বিষয়টি সব ট্রাফিক সার্জেন্টকে জানানোর নির্দেশনা দেন।
আবদুল মমিন নামের এক বাসচালক লাইসেন্স নিয়ে হয়রানির কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন। মমিন বলেন, ‘আমার বাড়ি নাটোর থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে। আসা যাওয়া করতে ৩০০ টাকা খরচ হয়। প্রথম লাইসেন্স করি ২০১৪ সালে। আমার লাইসেন্সের বয়স ১০ বছরের বেশি। এখন আমার হেভি লাইসেন্স প্রয়োজন। দুইমাস আগে ব্যাংক ড্রাফট করি। সব প্রসেস শেষ হলো। লাইসেন্স করতে গেলাম। আমাকে বলল, লাইসেন্স অনলাইন হয়নি। লাইসেন্স আমার জিরো হয়ে গেছে। আবার নতুন করে লাইট লাইসেন্স নিতে হবে। এতে আমি ভারি গাড়ি চালাতে পারব না। সে জন্য চার মাস হলো আমার চাকরি চলে গেছে।’
মমিন বলেন, ‘আমার সংসারের অব¯’া কঠিন খারাপ স্যার। আমার স্যার এক লাখ টাকা ঋণ। তিনটা মেয়ে। এই লাইসেন্স নিয়ে যে হয়রানির মধ্যে পড়েছি স্যার, আমার লাইসেন্স জিরো হয়ে গেছে। অথচ আমরা সব কাগজপত্র আছে। অফিসের ইনাদের (কর্মকর্তাদের) সঙ্গে কথা বলা যায় না স্যার। বড় অফিসারদের সামনে সালাম দিয়ে দুইটাও কথা বলা যায় না। বলে যে বেরিয়ে যান।’ এ সময় অন্য চালক হেলপাররা হাততালি দিয়ে মমিনকে সমর্থন করেন। বিআরটিএ চেয়ারম্যান এই চালককে একদিনের মধ্যেই লাইসেন্স প্রদানের নির্দেশনা দেন।
গণশুনানিতে কয়েকজন চালক জানান, তারা ২০১৯ সালে লাইসেন্স করতে দিয়েছেন। কিš‘ এখনও লাইসেন্স পাননি। দুই-তিনমাস পর পর বিআরটিএ অফিসে আসেন। তখন হাতে লেখা লাইসেন্সের মেয়াদ বাড়িয়ে দেওয়া হয়। দীর্ঘ সময় ধরে তারা এই ভোগান্তির মধ্যে রয়েছেন।
এ সময় বিআরটিএ চেয়ারম্যান এ সমস্যার কারণ জানতে চান। বিআরটিএর রাজশাহী সার্কেলের কর্মকর্তারা জানান, লাইসেন্স কার্ড প্র¯‘তের দায়িত্বে থাকা আগের প্রতিষ্ঠান টাইগার আইটির কারণে রাজশাহীর প্রায় ৩৫০ জন চালক এমন দুর্ভোগের মধ্যে রয়েছেন। এ সময় বিআরটিএ চেয়ারম্যান জানান, টাইগার আইটি কালো তালিকাভুক্ত হয়ে পরে আর কাজ পায়নি। তখন সারাদেশেরই কিছু ড্রাইভিং লাইসেন্সের কাজ তারা শেষ করে যায়নি। কোন ডাটাবেজও দিয়ে যায়নি। ফলে এই চালকদের লাইসেন্স দেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে এবার তিনি উদ্যোগ নেবেন। আগের জমা দেওয়া টাকাতেই এই চালকদের নতুন করে লাইসেন্স দেওয়া হবে।
গণশুনানিতে রাজশাহী বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মতিউল হক টিটো, রাজশাহী মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মাহাতাব হোসেন চৌধুরী, রাজশাহী ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, রাজশাহী ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ফরিদ আলী প্রমুখ বক্তব্য দেন। তারা সহজে গাড়ি চালকদের লাইসেন্স দেওয়া, গাড়ির ফিটনেস পরীক্ষা করা ও গাড়ির মালিকানা পরিবর্তনের ব্যব¯’া করার দাবি জানান।


প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২২, ২০২৩ | সময়: ৫:৪৭ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ