সর্বশেষ সংবাদ :

রাতে ৮০ সকালে ১৮০ টাকা : পেঁয়াজের বাজার ফের অস্থির

সেলিম সানোয়ার পলাশ, গোদাগাড়ী: রাতেই পেঁয়াজের বাজার ছিল ৮০ থেকে ১০০ টাকা। কিন্তু রাত পোহাতেই দাম দ্বিগুনের বেশি। শনিবার সকাল থেকে পেঁয়াজের দাম প্রতি কেজি ১৬০ টাকা থেকে ১৮০ টাকা। রাতেই সংবাদ প্রচার হয় যে ভারত রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দেওয়ার পরই রাজশাহীসহ আশেপাশের উপজেলার বাজারে বাড়ছে পেঁয়াজের দাম। শুক্রবার রাতে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৮০ টাকা থেকে ১০০ টাকা দরে বিক্রি হলেও শনিবার সকালে কেজি প্রতি বেড়ে ১৬০ টাকা থেকে ১৮০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। এক রাতের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম কেজিতে বেড়েছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা।
শনিবার সকালে রাজশাহীসহ আশেপাশের উপজেলাগুলোতে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে খুচরা বাজারে এখন এ পেঁয়াজের কেজি ১৬০ টাকা থেকে ১৮০ টাকা। ভারত আগামী বছরের মার্চ পর্যন্ত পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়ার পর বাংলাদেশে এর দাম রাতারাতি বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে গেছে। এক রাতের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম এমন বৃদ্ধিতে ক্রেতারা হতাশ হয়ে পড়েছে।
গোদাগাড়ীতে কোন কারন ছাড়াই খুচরা ব্যবসায়ীরা নিজেদের খেয়াল খুশিমত বৃদ্ধি করেছেন পেঁয়াজের দাম। সিন্ডকেট তৈরী করে প্রকাশ্যে ইচ্ছামত দোকানদারগণ পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি করেছেন। বিষয়টি গোদাগাড়ী টক অফ দ্যা টাউনে পরিনত হয়েছে।
ক্রেতা সাধারন বলছেন, ভোক্তা অধিকারের লোকজন কোথায়? তারা কেন অভিযান পরিচালনা করছেন না। সাপ্তহিক ছুটির দিনের সুযোগে মহিশালবাড়ী, রেলওয়ে বাজার, হাটপাড়া, গোদাগাড়ী, পিরিজপুর, ভাটোপাড়া, হরিশংকরপুর, বিদিরপুর, প্রেমতলী, রাজাবাড়ীসহ উপজেলার বিভিন্ন বাজারের ব্যবসায়ীগণ এ অবৈধ কারবারটি করে এক দিনে লাখ লাখ টাকা ক্রেতা সাধারনের নিকট হতে হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। ক্রেতা সাধারনের দাবি এদের বিরুদ্ধে ঘন ঘন অভিযান পরিচালনা করে ১০ থেকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা প্রয়োজন। তা না হলে এরা নিজেদের ইচ্ছামত পুন্যের মূল্য বৃদ্ধি করতে থাকবেন বলে সচেতন মহল মনে করেন।
এদিকে বাজার মনিটারিং না থাকাকেই দায়ি করেছে ভুক্তভোগি ক্রেতারা। বাজার করতে আসা ক্রেতারা বলছেন, ব্যাবসায়িরা দ্রব্যমূল্যের ইচ্ছেমত দাম হাকছে। তাদের বলার কেই নেই। নেই কোন প্রশাসনের নজরদারী। প্রশাসন যেন নিরব দর্শকের ভুমিকা পালন করছে। ব্যাবসায়িদের দামের বিষয়ে কিছু বলতে গেলে তার বলছে ইচ্ছে হলে লেন, তা না হলে চলে যান। বাজারে ক্রেতার অসহায়।
বাজার করতে আসা ৬০ বছরের বৃদ্ধ হাকিম বলেন, আমি গরিব মানুষ। বাজারে এসে দাম শুনে খালি ব্যাগ নিয়ে বাড়ী ফিরতে হচ্ছে। শুক্রবার রাতে উপজেলার পিরিজপুর বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৮০ টাকা দরে বিক্রি হলেও শনিবার সকালে কেজি প্রতি বেড়ে ১৬০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
আবার শুক্রবার সকালে মহিশালবাড়ী বাজার, রেলওয়ে বাজার, রেলগেট, গোদাগাড়ীসহ বিভিন্ন স্থানে ভারতীয় পেঁয়াজর বিক্রি হয়েছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকা কেজি দরে। কিন্তু সেই পেঁয়াজ বিকালে বিক্রি হয়েছে ১২০ কেজি দরে। শনিবার সকালে ১৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। এ দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে খুচরা ব্যবসায়ীরা পাইকারী ব্যবসায়ীদের উপর দোষ চাপাচ্ছেন।
গত সপ্তাহে পেঁয়াজ ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও কেন কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে পেঁয়াজ সিন্ডিকেট লাগাহীন মূল্যবৃদ্ধি করলো, এদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। শুক্রবার সন্ধ্যার পর মহিশালবাড়ী বাজারে এ প্রতিবেদক পেঁয়াজের দাম সম্পর্কে জানতে বিভিন্ন দোকানে গিয়ে জানার চেষ্টা করেন। এসময় কয়েকজন দোকান মালিক বলেন, পেঁয়াজ নেই, শেষ হয়ে গেছে, কোন কোন দোকান মালিক পেঁয়াজ সরিয়ে ফেলেছেন। সামান্য কিছু পেঁয়াজ বস্তায় রেখে বিক্রি ১৩৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন।
মহিশালবাড়ী বাজরের সোয়েব এর দোকানে সকালে যে পেঁয়াজ ৯০ থেকে ৯৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছেন সেই একই বস্তার পেঁয়াজ বিকাল থেকে বিক্রি করছেন ১২০ থেকে ১৩০ টাকা কেজি দরে। এসময় ১২০ টাকা কেজি দরে সাড়ে ৩ কেজি পেঁয়াজ কিনে ছিলেন সাবেক সেনা কর্মকর্তা সাদিকুল ইসলাম। এ প্রতিবেদক দোকান মালিক সোয়েবকে সকালে এককই পেঁয়াজ ৯০ টাকা কেজি বিক্রি করলেও বিকালে একই বস্তার পেঁয়াজ কেন ১২০ থেকে ১২৫ টাকা কেন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, রেলবাজের পাইকারী ব্যবসায়ী রবিউল ও রুহুল দাম বৃদ্ধি করেছেন তাই আমি বৃদ্ধি করেছি। তোমার তো এটা আগের কেনা কেন বেশী দাম রাখছো। এমন প্রশ্নের উত্তরে সে বলে দাম এটাই লাগবে বলে জানান। রেলবাজারের বিভিন্ন দোকানে পেঁয়াজ ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা কেজি বিক্রি করছেন বলেও সে জনায়। এসব দোকান গুলিতে সরকারের নির্ধারিত দ্রব্যের মূল্য তালিকা ঝুলানো রাখার কথা থাকলেও তা নেই, বিক্রিত মালের ক্যাশ মেমো দেয়া হয় না। মূল্য সংযোজক কর কি সেটা তারা বুঝে না, দেনও না।
তিনি আরো বলেন, আমাদের মতো সাধারণ জনগণের কথা কেউ ভাবে না। এই যে দাম বাড়ছে, কিন্তু আমাদের আয় রোজগার তো বাড়ছে না। বেতনের বেশিরভাগ টাকা যদি এখানেই যায়, তাহলে চলব কী করে?
গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আতিকুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, পেঁয়াজের বাজার অস্তির করার চেষ্টা করছেন ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। কোন ভাবে ছাড় দেয়া হবে না।


প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১০, ২০২৩ | সময়: ৬:৩৫ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ