সর্বশেষ সংবাদ :

ভোজন রসিকরা মজেছেন কালাই রুটিতে 

স্টাফ রিপোর্টার : 

যুগ যুগ থেকে রাজশাহী চাঁপাইনবাবগঞ্জের মানুষের পছন্দের খাবারের তালিকায় “কালাই এর রুটি” কদর রয়েছে। এর কদর এতো বেশি যে গ্রাম-গঞ্জের বাড়িতে,রাস্তার ধারে মোড়ে মোড়ে এই কালাই এর রুটিম দেখে মেলে। শহর থেকে মানুষরা গ্রাম-গঞ্জের কালাই রুটি খেতে যেতেন। কিন্তু দিন যত যাচ্ছে দেশি-বিদেশিদের এখন পছন্দের খাবার রাজশাহীর কালাই রুটি। অনেকে কালাই রুটি বিক্রি করে মাসে আয় করছেন লাখ লাখ টাকা। রাজশাহীতে এখন ছোট বড় মিলে শতাধিক কালাই রুটির দোকান গড়ে উঠেছে। বিকেল হলেই মানুষ ছুটে আসেন পছন্দের কালাই রুটি খেতে।

 

 

রাজশাহী নগরীর উপশহর এলাকায় কালাই হাউস, ‘কালাই ঘর’ ‘হাঁরঘে কালাই’ সহ বিভিন্ন নামে গড়ে উঠেছে কালাই রুটির রেস্তোরা। রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের আঞ্চলিক ভাষার সাথে মিল রেখে গড়ে তোলা হয়েছে এসব কালাই রুটির দোকান। কারণ, চাঁপাইনবাবগঞ্জে দেশের উত্তরাঞ্চলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কালাই চাষ হয়ে থাকে। আমের পাশাপাশি চাঁপাইনবাবগঞ্জ কালাইয়ের জন্যও প্রসিদ্ধ। আবার সেখানকার কালাইও দেশসেরা। এই কালাইয়ের সুনামকে কাজে লাগিয়ে ভালো ব্যবসায়ের উদ্দেশ্যে রাজশাহী শহরে গড়ে উঠেছে কালাই রুটির দোকান’। বলার অপেক্ষা রাখে না যে এই দোকানগুলোতে কালাইয়ের রুটি প্রচুর বিক্রি হয়।

 

রাজশাহী শহরের ফুটপাত থেকে শুরু করে অভিজাত রেস্তোরাতেও পাওয়া যায় কালাইয়ের রুটি। সব মিলিয়ে শহরে এখন এই রুটির প্রায় শতাধিক দোকান রয়েছে। এসব দোকানে কালাইয়ের রুটির সঙ্গে থাকে বেগুনভর্তা, মরিচভর্তা, হাঁসের মাংস, গরুর মাংসসহ মুখরোচক আরও অনেক উপকরণ। ‘কালাই ঘর’ নামে রাজশাহী নগরের উপশহর নিউ মার্কেট রোডে একটি অভিজাত কালাই রুটির দোকান। এখানে রাজশাহীর ঐতিহ্যবাহী কালাই রুটি বিক্রি করা হয়। এখানে ৮-১০ জন কর্মচারী রুটি তৈরী ও ক্রয়-বিক্রয়ের সাথে জড়িত। তারা চুলা থেকে গরম রুটি তৈরী করে বিক্রির হিড়িক লাগিয়ে ফেলেন।

 

 

কালাই ঘরের স্বত্বাধিকারী মো. সাদিকুল ইসলাম বলেন, আমার এখানে প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ জন লোক এই রুটি তৈরীর সাথে জড়িত থাকে। তারা প্রতিনিয়ত রুটি তৈরী করে বিক্রি করেন। প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ হাজার টাকা বেচা-বিক্রি হয়। সেই হিসেবে মাসে তার প্রায় ৯ লাখ টাকার বেচা- বিক্রি হয়। এতে তার প্রায় লক্ষাধিক টাকা আয় হয়। সন্ধ্যা থেকে শুরু করে রাত আড়াইটা পর্যন্ত বেচাবিক্রি চলে। রাজশাহীতে বসবাসকারী ও দেশের বিভিন্ন জেলা ও অঞ্চল ও বিদেশিরা রাজশাহীতে এসে এখানে কালাই রুটি খান। ব্যবসা ভালোই চলে। তিনি বলেন, তাঁরা এই শহরে উৎকৃষ্ট মানের কালাইয়ের রুটি সরবরাহ করে থাকেন। তাঁরা খোদ চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট থেকে আটা নিয়ে এসে রুটি তৈরি করেন।

 

 

রাজশাহীতে ১৫-২০ বছর আগে ফুটপাতের দোকানগুলোতে কালাইয়ের রুটি বিক্রি শুরু হয়। ধীরে ধীরে এই রুটির জনপ্রিয়তা দেখে রাজশাহীর অভিজাত দোকানগুলোতে নানরুটির পাশাপাশি কালাইয়ের রুটির প্রচলন শুরু হয়েছে। দেখতে দেখতে খাবারের দোকানকেন্দ্রিক অর্থনীতির একটা বড় জায়গা দখল করে নিয়েছে কালাইয়ের রুটি।

 

রাজশাহীতে বাইরে থেকে কোনো অতিথি এলেই তাঁকে কালাইয়ের রুটি দিয়ে আপ্যায়ন করার একটা চল শুরু হয়েছে। আসাদুজ্জামান নামে নগরবাসী জানান, বাইরে থেকে কেউ রাজশাহী শহরে এলেই বলেন, এখানে নাকি কালাইয়ের রুটি পাওয়া যায়। তাই তিনি অতিথিদের নিয়ে এসেছিলেন। শেলী জামান বললেন, তিনি বাইরে থেকে এসেছেন। বরাবরই তাঁর রুটি পছন্দ। তবে এই রুটিটা ছিল ব্যতিক্রমী। গরম গরম চুলা থেকে তুলে দি”েছন। তাঁরা আবার আসবেন। রাজশাহীতে এসে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও কালাইয়ের রুটি খেয়েছিলেন। এ নিয়ে গণমাধ্যমে তাঁর ছবিও ছাপা হয়েছিল।

 

২০১৯ সালে ২৮ মার্চ রাজশাহী সফরে গিয়ে সেখানকার ঐতিহ্যবাহী কলাই রুটি নিজ হাতে সেঁকেছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলার। পরে সঙ্গীদের নিয়ে রাস্তার পাশে বসেই কালাই রুটির স্বাদ নেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। রাজশাহী নগরীর উপশহর নিউ মার্কেট এলাকার রাস্তার পাশের একটি কালাই রুটির দোকানে গিয়েছিলেন তিনি। এ সময় স্ত্রী মিসেলসহ অন্য সফর সঙ্গীরাও ছিলেন। ওই সময় নানান ইস্যুতে স্থানীয়দের সঙ্গে প্রাণ খুলে কথা বলেন। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে জেনে নেন এখানকার ইতিহাস ও ঐতিহ্য। সেখানেই জানতে পারেন ঐতিহ্যবাহী কালাই রুটির কথা। দিন শেষে তাই গিয়ে ওঠেন সোজা কালাই রুটির দোকানে। স্বচক্ষে দেখেন রুটি বানানো। রুটি বানানোর খুঁটিনাটি সম্পর্কে কারিগরদের জিজ্ঞেস করেন তিনি। তাদের সঙ্গে সেলফিও তোলেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত।

সানশাইন / শামি


প্রকাশিত: নভেম্বর ২০, ২০২৩ | সময়: ৬:১৪ অপরাহ্ণ | Daily Sunshine