রাজশাহীতে নতুন কমিটি না হওয়ায় হতাশ যুবলীগ

স্টাফ রিপোর্টার: অবশেষে দীর্ঘ সাত বছর পর রাজশাহী মহানগর ও জেলা যুবলীগের সম্মেলন হয়েছে। প্রত্যাশা ছিল এই সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব নিয়ে কমিটি হবে। কিন্তু দেড় মাসেও নতুন কমিটি ঘোষণা হয়নি। এতে হতাশ অনেক নেতাকর্মীই। ফলে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি পালনের ঘটনাও ঘটছে।
গত ২৬ সেপ্টেম্বর সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় রাজশাহী জেলা ও মহানগর যুবলীগের। এই সম্মেলন ঘিরে যুবলীগ নেতাকর্মীর মধ্যে ছিল ব্যাপক উচ্ছ্বাস-উদ্দীপনা। সম্ভাব্য প্রার্থীদের সমর্থিত নেতা-কর্মীদের উপস্থিতি সম্মেলন ছিল উৎসবমুখর। নেতা-কর্মী-সমর্থকদের গায়ে শোভা পাচ্ছিল স্থানীয় এমপিসহ বিভিন্ন নেতাদের নামের লগো।
এর আগে ২০০৩ সালে মহানগর যুবলীগের সভাপতি হন রমজান আলী ও সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন বাচ্চু। আবার ২০১৬ সালের সম্মেলনে একই নেতৃত্ব বহাল থাকে। অর্থাৎ টানা ২০ বছর রাজশাহী মহানগর যুবলীগের নেতৃত্বে একই ব্যক্তি। নানা নাটকীয়তার পর অবশেষে চলতি বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর হয় সম্মেলন। বিলুপ্ত করা হয় বর্তমান কমিটি। কিন্তু নতুন কমিটি ঘোষণা না করে মঞ্চ ত্যাগ করেন কেন্দ্রীয় নেতারা। এরপর দেড় মাস চলে গেছে নতুন কমিটি ঘোষণা হয়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পদপ্রত্যাশী এক নেতা বলেন, ‘সম্মেলনে অনেক খরচ করেছি। প্রচুর লোক তুলেছিলাম, সবারই আশা ছিল আমাকে নেতৃত্বে দেখবে। কিন্তু দেড় মাসেও কমিটি হলো না।’ নেতৃত্ব না থাকায় সংগঠনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আলাদা আলাদা যে যার মত কর্মসূচি পালন করেছে বলে মনে করেন তিনি। মহানগর যুবলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য আগ্রহী অন্তত ৩০ জন। সম্মেলনে তারা লোক সমাগম বাড়ানোর চেষ্টা করেন। এই তালিকায় রয়েছেন মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি রাসিকের ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবদুল মোমিন, মহানগর যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ঠিকাদার তৌরিদ আল মাসুদ রনি, আমিনুর রহমান খান রুবেল, নগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শফিকুজ্জামান শফিক, যুবলীগ নেতা মাহমুদ হাসান খান চৌধুরী ইতু, আশরাফুল আলম, অ্যাডভোকেট কাওসার রহমান নাইজার, ইউসুফ আলী ও রবিউল ইসলাম রুবেল।
অপরদিকে, সাধারণ সম্পাদক হতে চান নগর যুবলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক নাহিদ আকতার নাহান, সাংগঠনিক সম্পাদক রায়হানুর রহমান রয়েল, মনিরুজ্জামান খান মনির, মুকুল শেখ, মাজেদুল আলম শিবলী, রেজাউর রহমান রাজীব, রমজান আলী জনি, জয়নাল আবেদীন, পিয়ারুল ইসলাম পাপ্পু, আরকান বাপ্পী, শাহাদাত হোসেন সুজন শেখ, মোরসালিন হক রাবু, আশিকুর রহমান অদ্বিত, মামুনুর রশিদ মাহবুব, প্রভাত রায় মনা, প্রণব সরকার, জাহিদ হাসান ও ১৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর তৌহিদুল হক সুমন।
নাহিদ আক্তার নাহান বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলনের নামে নাশকতা চলছে। আমরা মাঠে আছি, কাজ করছি। এই সময় কমিটি প্রয়োজন। কমিটি থাকলে সবাই একসঙ্গে কাজ করতে পারতাম।’ মহানগর যুবলীগের সদ্য সাবেক সভাপতি রমজান আলী বলেন, ‘আমরা দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছি। নতুনরা দায়িত্ব নিতে চান। তাই এখন কেন্দ্রের উচিত হবে দ্রুত যোগ্য নেতৃত্বকে দায়িত্ব দেওয়া। আন্দোলন-সংগ্রামে যুবলীগ ভালো ভূমিকা রাখে। এখন কমিটি খুবই প্রয়োজন।’
এদিকে ২০০৩ সাল থেকে রাজশাহী জেলা যুবলীগের সভাপতি ছিলেন আবু সালেহ। ২০১৬ সালে তিনি আবারও সভাপতি হন। তবে সাধারণ সম্পাদকের মৃত্যু হওয়ায় ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ছিলেন আলী আযম সেন্টু। ২৬ সেপ্টেম্বরের সম্মেলনে জেলা যুবলীগে নতুন কমিটি আশা করেছিলেন অনেকে। কিন্তু দেড় মাসেও সেই কমিটি হয়নি।
জেলা যুবলীগ সভাপতি হতে আগ্রহী এমদাদুল হক এমদাদ। তিনি বলেন, ‘দায়িত্ব পেলে যুবলীগের প্রতিটি ইউনিট আগের যে কোন সময়ের চেয়ে বেশী শক্তিশালী করা হবে। আসন্ন সংসদ নির্বাচনে দলের জন্য নৌকার পক্ষে ইউনিটগুলো ভূমিকা রাখতো।’ এ ছাড়া সভাপতি হতে চান বর্তমান সহসভাপতি মোজাহিদ হোসেন মানিক, আনোয়ার হোসেন, তাসিকুল ইসলাম, আরিফুল ইসলাম রাজা, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আলী আযম সেন্টু, মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জোবায়ের হোসেন রুবন ও রেজাউন নবী আল মামুন।
জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী মোবারক হোসেন মিলন বলেন, ‘নেতৃত্বে আসার জন্য যুবলীগকে সংগঠিত করেছি। প্রায় সব উপজেলায় আমার নেতৃত্বে সভা সমবেশ ও মিছিল হয়েছে। নেতৃত্ব পেলে একটি সুসংগঠিত শক্তিশালী স্মার্ট ইউনিট হিসেবে জেলা যুবলীগকে প্রতিষ্ঠিত করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। তবে এত দিনেও কমিটি না হওয়া হতাশাজনক। নেতৃত্বে যিনিই আসুক তাকেই সাধুবাদ জানাব’। এখন প্রতিনিয়তই বিএনপি-জামায়াতের অবরোধ-হরতাল চলছে। জেলা যুবলীগের কমিটি দরকার বলে মনে করেন তিনি।
এ ছাড়া সাধারণ সম্পাদক হতে চান মেরাজুল ইসলাম মেরাজ, সামাউন ইসলাম, ওয়াসিন রেজা লিটন, প্রচার সম্পাদক রফিকুজ্জামান রফিক, বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক কামরুল হাসান মিঠু, সদস্য জৌলুস মাহমুদ জেমস, বাঘা উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মোকাদ্দেস আলী, জেলা যুবলীগের সদস্য মুক্তার হোসেন, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি হাবিবুর রহমান, জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সেজানুর রহমান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি মামুন আর রশিদ, ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সদস্য হাসিনুর রহমান সজল, মোহনপুর উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন প্রমুখ।
এ বিষয়ে যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল বলেন, ‘নতুন নেতৃত্ব যাচাই-বাছাই চলছে। শিগগির কমিটি দেওয়া হবে।’


প্রকাশিত: নভেম্বর ২০, ২০২৩ | সময়: ৬:২২ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ