আরেক ধাপ এগিয়ে গেল শিক্ষানগরী রাজশাহী

স্টাফ রিপোর্টার: দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটার তৈরি করা হয়েছে রাজশাহী নগরীতে। আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন এই নভোথিয়েটারটি ভিডিও কনফারেন্সে উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পাশাপাশি রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (আর.এম.ইউ) স্থাপন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্ত ও রাজশাহী ও শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের আওতাধীন ৩টি প্রকল্পের অধীন নির্মিত ১২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উদ্বোধন করা হয়েছে।
এসবের পাশাপাশি সারাদেশের ১৫৭টি প্রকল্পের, ১০ হাজার ৪১টি অবকাঠামোর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ও উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার সকালে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এসব প্রকল্পের উদ্বোধন করেন তিনি।
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটার তৈরি করা হয়েছে রাজশাহী নগরীতে। আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন এই নভোথিয়েটারটি ভিডিও কনফারেন্সে উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বেলা ১১টার দিকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে নভোথিয়েটার উদ্বোধন করেন সরকার প্রধান। এসময় রাজশাহী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সভা কক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রাজশাহী সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
উদ্বোধনের পর নভোথিয়েটারে গিয়ে ফলক উন্মোচন, বেলুন-ফেস্টুন ও পায়রা উড়ান সিটি মেয়র। এর পর শিক্ষার্থীদের নিয়ে দুইটি শো উপভোগ করেন তিনি। পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রত্যান্ত অঞ্চল থেকেও যেন শিক্ষার্থীরা এসে জ্ঞান অর্জনের সুযোগ পায় নগর পিতা হিসেবে তার ব্যবস্থা করার কথা জানিয়েছেন মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন।
খায়রুজ্জামান লিটন সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের বহুল কাঙ্খিত বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটারের উদ্বোধন হয়েছে। পুরো উত্তরাঞ্চলের নতুন প্রজন্ম যারা মহাকাশ ও সৃষ্টির ব্যাপারে জানতে আগ্রহী, যারা বিশেষত শিক্ষার্থী, তারা এখান থেকে অনেক কিছু জানতে পারবে, অনেক উপকৃত হবে। এছাড়া শহরের বাইরে জেলা-উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষার্থীরা দলে দলে আসবেন ও জ্ঞান অর্জন করবেন।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আলী হোসেন বলেন, ঢাকার চেয়েও আরও আধুনিক এই নভোথিয়েটারটি। এখানকার অডিটোরিয়ামটির মূল আকর্ষণ প্লানেটেরিয়াম স্থাপন। একসঙ্গে ১৬০ জন বসে অসীম মহাকাশের গ্রহ নক্ষত্রের খুঁটিনাটি সম্পর্কে জানতে পারবেন। নভোথিয়েটারটিতে মহাকাশ গবেষণার জন্য স্থাপন করা হয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে আধুনিক অবজারভেটরী টেলিস্কোপ। বিজ্ঞানমনস্ক জ্ঞানপিপাসুরা আধুনিক টেলিস্কোপের মাধ্যমে নভোমণ্ডল প্রত্যক্ষ ও গবেষণায় যুক্ত হতে পারবে।
এছাড়াও ডিজিটাল সায়েন্টিফিক এক্সিবিট, রোবট, সৌরজগতের তথ্যসহ গ্রহগুলির মডেল, ফাইভ-ডি সিম্যুলেশন থিয়েটার, ইমারসিভ রাইড সিম্যুলেটর, বঙ্গবন্ধু কর্ণার, শেখ রাসেল এক্সিবিটস গ্যালারী, ২০০ আসনের মাল্টিপারপাস হল, অত্যাধুনিক পার্ক ও ৮০ আসনের ক্যাফেটারিয়া এবং ৮৫টি গাড়ির পার্কিং ব্যবস্থা রয়েছে এই নভোথিয়েটারে।
আলী হোসেন বলেন, এক লাখ ৪০ হাজার ফুটের চারতলা বিশিষ্ট ভবনসহ ২৩২ কেটি টাকা ব্যয়ে এই নভোথিয়েটার নির্মাণ করা হয়েছে রাজশাহীর শহীদ কামারুজ্জামান উদ্যানের সামনে। প্রতিদিন ছয়টি শো দেখানোর কথা জানিয়ে বিশেষ দিবসগুলোতে ফ্রি প্রবেশ করতে পারবে শিক্ষার্থী বলে জানান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের এই কর্মকর্তা।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, রাজশাহী সদর আসনের এমপি ফজলে হোসেন বাদশা, রাজশাহী-৩ আসনের এমপি আয়েন উদ্দিন, বিএমডিএ চেয়ারম্যান আখতার জাহান, বিভাগীয় কমিশনার ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর, রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি আনিসুর রহমান, মেট্রোপলিটন পুলিশের পুলিশ কমিশনার বিপ্লব বিজয় তালুকদার, জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ।
২০১২ সালের ৯ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) তৎকালীন মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন রাজশাহীতে নভোথিয়েটার স্থাপনে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে ডিও দেন। মূলত এরপর থেকেই শুরু নভোথিয়েটারের স্বপ্নযাত্রা। নভোথিয়েটার স্থাপনে ভূমি অধিগ্রহণের বরাদ্দ না থাকায় শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানার ভেতরে নভোথিয়েটার স্থাপনের প্রস্তাব দেন রাসিক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। এরপর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান সম্মতি দিলে ২০১৮ সালে ২৩২ কেটি টাকা ব্যয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটার নির্মাণকাজ শুরু হয়। করোনা মহামারি এবং ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে কাজ কিছুটা বিলম্বিত হয়। অবশেষে আনুষ্ঠানিকভাবে বহুল আকাঙ্খিত বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটারের যাত্রা শুরু হলো।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটার, রাজশাহীতে রয়েছে ১৫ মিটার ব্যাসের ১৬০ আসন বিশিষ্ট অত্যাধুনিক প্লানেটারিম, ডিজিটাল সায়েন্টিফিক এক্সিবিট, রোবট, সৌরজগতের তথ্যসহ গ্রহগুলির মডেল, ফাইভ-ডি সিম্যুলেশন থিয়েটার, ইমারসিভ রাইড সিম্যুলেটর, অবজারভেটরী টেলিস্কোপ, বঙ্গবন্ধু কর্ণার, শেখ রাসেল এক্সিবিটস গ্যালারী, দুইশ আসনের মাল্টিপারপাস হল, অত্যাধুনিক পার্ক ও ৮০ আসনের ক্যাফেটারিয়া, ৮৫টি গাড়ির পার্কিং, ২০০০ কেভিএ সাবস্টেশন, ৫০০ কেভিএ জেনারেটর, স্পিংকলার টাইপ অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা, সিসিটিভি পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা, কনফারেন্স হল, ৩টি ২০ অশ্বশক্তির সাবমার্সিবল পাম্প, ২শ টনের ৩টি চিল্ড ওয়াটার কেন্দ্রীয় শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, ২টি চলন্ত সিড়ি, ১২৫০ কেজি উত্তোলনের ক্ষমতাবিশিষ্ট ৩টি লিফট ও ৪টি সিড়ি। অত্যাধুনিক স্থাপত্যশৈলির এই স্থাপনা রাজশাহী গণপূর্ত বিভাগ-১২ রাজশাহীর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে নির্মিত।
এর আগে, বহুল প্রতিক্ষিত রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (রামেবি) অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্পের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেছেন প্রধান শেখ হাসিনা। সকাল ১০টায় গণবভন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজশাহী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আয়োজিত ভিত্তি প্রস্তর অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে তিনি এ ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনের শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন।
এসময় গণভবন প্রান্তে পরিকল্পনা মন্ত্রী এমএ মান্নান, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন, প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও রামেবির একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ্, আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
রাজশাহী প্রান্তে ছিলেন, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা ও আয়েন উদ্দিন, সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল ওদুদ দারা ও বেগম আখতার জাহান, রামেবি উপাচার্য অধ্যাপক ডা. এজেডএম মোস্তাক হোসেন, বিভাগীয় কমিশনার ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর, জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ, রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি আনিসুর রহমান, পুলিশ কমিশনার বিপ্লব বিজয় তালুকদার, রাজশাহী মহানগর আ’লীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলী কামালসহ রাজশাহীস্থ বিভিন্ন সরকারী দপ্তরের উর্দ্ধত্বন কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নের্তৃবৃন্দ, বিভিন্ন শ্রেণিপেশার নেতৃবৃন্দ ও গণমাধ্যম কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে গত ১১ নভেম্বর একনেক সভায় রামেবির ভূমি অধিগ্রহণ ও অবকাঠামে নির্মাণ খাতে ২ হাজার ২৫৭ কোটি ৯৪ লাখ টাকার প্রথম সংশোধিত ডিপিপি অনুমোদিত হয়।
রাজশাহী মহানগরীর বড় বনগ্রাম এবং পবা উপজেলার বারইপাড়া ও বাজে সিলিন্দা মৌজার প্রায় ৬৮ একর জায়গায় রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণ করা হবে। রাজশাহী অঞ্চলের মানুষের স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের লক্ষ্যে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকবে ১২ শ’ শয্যার একটি বিশেষায়িত হাসপাতাল। ১১টি চিকিৎসা অনুষদের অধীনে ৬৯টি বিভাগে প্রতিবছর ৭৮০জন শিক্ষার্থী পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন ডিগ্রি অর্জনের জন্য এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাবে। এছাড়া চিকিৎসা সেবার মানকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উন্নীতকরণের লক্ষ্যে গবেষণা কার্যক্রম চলবে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্রথম ধাপে জমি অধিগ্রহণসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের হাসপাতাল, নন-ক্লিনিক্যাল ফ্যাকাল্টি ভবন, ডরমেটরি ভবন, উপাচার্য ও উপ-উপাচার্য ভবন, সিনেট হল, স্কুল ও ডে-কেয়ার সেন্টার, ডাক্তার ও নার্সিং হোস্টেল, মসজিদ, মর্গ বভন. এন্ট্রি-এক্সিট গেট ও সীমানা প্রাচীরসহ গুরুত্বপূর্ণ ২০টি স্থাপনা নির্মাণ করা হবে।
এদিকে, রামেবির অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্পের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করায় উপাচার্য ও প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক ডা. এজেডএম মোস্তাক হোসেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সহ সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।


প্রকাশিত: নভেম্বর ১৫, ২০২৩ | সময়: ৪:৫০ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ