ঐতিহ্যের নৌকাবাইচ হারিয়ে যেতে দেয়া যাবে না : শাহরিয়ার আলম

নুরুজ্জামান, বাঘা: আবহমান গ্রাম বাংলার নদ-নদীতে যুগ-যুগ ধরে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে এতিহ্যবাহী খেলা নৌকা বাইচ। এটি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে রাজশাহীর বাঘা উপজেলার নদী তীরবর্তী গড়গড়ি ইউনিয়নের মানুষ এ খেলাটি ধরে রেখেছেন বহুকাল থেকে।
প্রতিবছর অক্টবর মাসের বিকেলে নকআউট পদ্ধতিতে তিনদিন ব্যাপী এ খেলাটি উপলক্ষে এখানে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে নৌকা বাইচ মেলা ও ঘোড়া দৌড় সহ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এ মেলায় এবার প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত হয়ে বক্তব্য রেখেছেন তিন-তিনবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। তিনি জাতির জনকের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে বলেন, বাংলার ঐতিহ্য নৌকা বাইচকে হারিয়ে যেতে দেয়া যাবে না। এই নৌকা ৭১-এর নৌকা। এই নৌকা স্বাধীনতার নৌকা। একই সাথে তিনি বিজয়ী এবং বিজেতাদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন।
শনিবার বিকেলে গড়গড়ি ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম রবির সভাপতিত্বে আয়োজিত এ মেলায় পদ্মার কোল ঘেষে জনস্রোতে পরিনত হয়। নারী-পুরুষ থেকে শুরু করে যুবক-যুবতী এবং আবাল বৃদ্ধ বনিতা সহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের নানা বয়সের মানুষ পদ্মার দুই পাড়ে কানায় কানায় ভরে যায়। আর এতো পরিমান লোক সমাগম দেখে আবেক-আপ্লুত হন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।
তিনি জনতার উদ্দেশ্যে বলেন, শত বছরের ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ এতো সুন্দর হবে জানলে আমি নিজে একটি টিম গঠন করতাম। আমি ধন্যবাদ জানায় এই নৌকা বাইচের আয়োজক কমিটির নের্তৃবৃন্দকে। আমার সবচেয়ে বেশি ভাল লেগেছে এই নৌকা বাইচ উপলক্ষে এ অঞ্চলের হাজার-হাজার মানুষের উল্লাস ও উৎসবের আমেজ। তিনি জাতির জনকের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, এই নৌকা ৭১-এর নৌকা। এই নৌকা স্বাধীনতার নৌকা।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ নদী মাতৃক দেশ। এ দেশের লক্ষ-লক্ষ মানুষ নদ-নদীতে মাছ শিকার করে তাদের জীবন চালাই। এর পাশা-পাশা কৃষি খাতে এখন দেশ পূর্বের যে কোন সময়ের চেয়ে ভাল অবস্থানে রয়েছে। সরকার কৃষকদের নানা রকম বীজ প্রণোদনা ও আর্থিক সুযোগ সুবিধা দিচ্ছে। এটা নিঃসন্দেহে ইতিবাচক।
ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশে এক ইঞ্চি মাটিও যেন অনাবাদি না থাকে। তার মতে, পৃথিবীর ১৯৩ টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ পূর্বের যে কোন সময়ের চেয়ে এখন কৃষি খাতে অনেক এগিয়ে। তবে আমাদের সবাইকে সাশ্রয়ী হতে হবে। পাশা-পাশি প্রত্যেককে তার সন্তানদের সু-শিক্ষায় শিক্ষিত করতে হবে। কারণ উন্নত দেশ গড়তে হলে মান সম্মত শিক্ষার কোন বিকল্প নেই।
শাহরিয়ার আলম বলেন, এ দেশের রাজনীতিতে সীমাবদ্ধ এবং স্থিতিশীলতা রয়েছে। দুর্নীতি গ্রস্থ মানুষের জন্য রাজনীতি প্রজেয্য নয়। এখন যে কোন ইস্যুতে জামাত-বিএনপির কাজ হচ্ছে অপপ্রচার ছড়ানো। আপনারা ওদের কথায় কান দেবেন না। আমরা ক্ষমতায় আসার পর দেশে অভুতপূর্ব উন্নয়ন করেছি এবং করছি। বর্তমানে অনেক গুলো মেগা প্রকল্পের কাজ চলমান।
প্রধানমন্ত্রীর নিজের জন্য কিছু করেন না। তার একটি চাওয়া, পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়ন। আপনারা আর একটিবার সুযোগ দিয়ে নৌকাকে বিজয়ী করলে বঙ্গবন্ধুর আত্না শান্তি পাবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাঘা উপজেলা নির্বাহী অফিসার শারমিন আখতার, উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুর ইসলাম বাবুল ও গড়গড়ি ইউনিয়ন আ’লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ আনিছুজ্জামান।
উপস্থিত ছিলেন, বাঘা উপজেলা আ’লীগের সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম মন্টু, অধ্যক্ষ নছিম উদ্দিন, বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি আনজারুল ইসলাম, বাঘা উপজেলা নারী ভাইস চেয়ারম্যান ফাতেমা খাতুন লতা, সাবেক উপজেলা আ’লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ওয়াহেদ সাদিক কবির, মনিগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম, আড়ানী ইউপি চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন ও আওয়ামী সহযোগী সকল সংগনের নেতা-কর্মী সহ হাজার-হাজার জনতা ও সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ।
মেলা কমিটি সূত্রে জানা গেছে, নকআউট পদ্ধতিতে তিনদিন ব্যাপী নৌকা বাইচ খেলায় বাছাই পূর্বক চুড়ান্ত পর্বে পাঁচটি বড় নৌকা অংশ গ্রহন করে। এতে প্রথম স্থান অধিকার করে জাতির পিতার শেখ মুজিবের জন্মভুমি টুঙ্গিপাড়ার সোনার তরি ৭১ নৌকা। এটির পরিচালক ছিলেন চাঁদ পুর গ্রামের শাহালম। তার হাতে তুলে দেয়া হয়েছে সম্মাননা পুরস্কার হিসাবে একটি হোন্ডা কম্পানীর ১৬০ সিসি এক্সব্লেড মোটর সাইকেল।
দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছেন খুলনা থেকে আগত মযুর পঙ্খী নৌকা, এটির পরিচালক ছিলেন গড়গড়ির হুমায়ন কবির। তিনি পেয়েছেন ১১০ সিসির একটি মোটর সাইকেল এবং তৃতীয় স্থান অধিকার করেছেন সুদুর খুলনা থেকে আগত সোনালী সংঘ্য নৌকা, এটির পরিচালক ছিলেন বামন ডাঙ্গা গ্রামের বিশিষ্ট সমাজ সেবক বুদু মিয়া। মেলায় বসেছিল হরেক রকম মিষ্টির দোকান, খেলনা ঘর ও বিনোদনমূলক খেলার উপকরণ।


প্রকাশিত: অক্টোবর ১৫, ২০২৩ | সময়: ৭:১০ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ