হাঁসের খামারের ভাগ্য বদলাচ্ছে তরুণরা

তাড়াশ প্রতিনিধি: হাঁসের খামার করে লাভবান হচ্ছেন সিরাজগঞ্জ তাড়াশের খামারিরা। প্রতিবছর এ উপজেলায় প্রায় ২০ থেকে ৩০ লাখ হাঁস পালন করে মাংস ও পুষ্টির চাহিদা পূরণের পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল হচ্ছেন অনেকে।
এ অঞ্চলে হাঁসের মাংসের চাহিদাও রয়েছে ব্যাপক। চাহিদার কথা মাথায় রেখে খামারিরা প্রতি বছর ব্যাপকভাবে হাঁস পালন করে এ অঞ্চলের মাংসের চাহিদা মিটিয়ে বাণিজ্যিকভাবে সিরাজগঞ্জ শহরসহ বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় বিক্রি করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন।
‘এগুলো হাঁসের ছানা নয়, যেন আমার লালিত সন্তান! ক্ষুদ্র আকার থেকে শুরু করে এখন নিজ যত্নে এত হাঁসের খামার। তাদের নিজ হাতে বড় করি। এরাই আমার স্বপ্নপূরণের সিঁড়ি। মহেশরৌহালী গ্রামের রাশিদুল ইসলাম এভাবেই বলছিলেন নিজের স্বপ্ন বুননের কথা।
তিনি বলেন, ‘এ খামারটির মালিক খাইরুল ইসলাম তার ২ থেকে ৩ বিঘা জমির মধ্যে এক বছর আগে ১২০০ ডিমপাড়া হাঁস দিয়ে এ খামার শুরু হয়। তিনি এ খামারে ম্যানেজার হিসেবে রয়েছেন। এখান থেকে তারও স্বপ্নপূরণ হচ্ছে।
এ খামারে বর্তমানে ২০০০ হাজার হাঁস রয়েছে। যা দল বেঁধে চলন বিলের মাঠ ঘাট ও পুকুরে ছোটাছুটি করে। প্রাণবন্ত ও উন্মুক্ত পরিবেশে হাঁসছানারা পুকুরের পানিতে সাঁতার কেটে খেলে। হাঁসের প্যাক প্যাক ডাকাডাকিতে এক অন্যরকম পরিবেশের সৃষ্টি হয়।’ এভাবে নিজের স্বপ্নসিঁড়িতে পৌঁছে যাচ্ছেন খামারির সঙ্গে সাইফুল ইসলামও। তিনি বড় বালতি ভরে ভরে হাঁসদের খাবার নিয়ে প্রতিদিন যত্ন নেন হাঁসগুলোর।
ব্যাপকভাবে হাঁস পালন করছেন তাড়াশের খামারিরা উপজেলার মহেশরৌহালীর খামারে, মান্নান নগর বাজারে, তাড়াশের বিভিন্ন সাপ্তাহিক হাট-বাজারে খামারি হাঁস কেটে বিক্রি হচ্ছে কেউবা আবার ১ হাজার কেউবা আবার ২ হাজার দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে খামারের সমস্ত হাঁস দেদারছে কিনে নিয়ে যাচ্ছে।
প্রতিটি হাঁস কেটে বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৪শ’ থেকে ৫শ’ টাকায় এবং মাংস প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৫শ’ থেকে ৬শ’ টাকা।
নওগাঁ ইউনিয়নের মহেশরৌহালী গ্রামের হাঁসখামারি শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদফতর থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে হাঁসের চাষ করছি। হাঁসের বাচ্চা ও খাদ্যসামগ্রীর মূল্য অধিক হওয়ায় উৎপাদন খরচ বেশি। তাই আশানুরূপ লাভ হচ্ছে না। ওই দফতর যদি আর্থিক ও ওষুধ সহায়তা প্রদান করে তাহলে খামারিরা আরও বেশি লাভবান হতে পারবেন।’
তাড়াশ উপজেলার প্রাণিসম্পদ দফতর ভেটেরিনারি সার্জন ডাক্তার বলেন, ‘এ উপজেলায় প্রতি বছর চাহিদা অনুযায়ী হাঁস উৎপাদন হয়ে আসছে। চাহিদার কারণে হাঁস পালন প্রতি বছরই বৃদ্ধি পাচ্ছে। কোনও হাঁস খামারি কোনও সমস্যার কথা বললে তাৎক্ষণিক খামার পরিদর্শন করে ওষুধ সহায়তার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় করণীয় বিষয়ে পরামর্শ প্রদান করছি।’
তাড়াশ উপজেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা বলেন, তাড়াশ উপজেলায় হাঁসের খামার থাকলেও কোনও খামারের নিবন্ধন নেই। বড় ধরনের (শতাধিকেরও বেশি হাঁসের) খামার আছে আর প্রতি বাড়িতেই ৪০-৫০টি করে হাঁস পালন করা হয়। বর্তমানে হাঁসের খামার নিবন্ধন করার ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করা এবং সচেতনতা তৈরিতে কাজ চলছে। এর আগে না জানার কারণে নিবন্ধন হয়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘উদ্যোক্তাদের জন্য প্রাণিসম্পদ বিভাগ সহযোগিতা করতে সব সময় প্রস্তুত। আমাদের অফিসের মাধ্যমে কারিগরি সহযোগিতা প্রদান করা হয় এবং হাঁসের টিকা প্রদানের পরামর্শ ফ্রি। সরকার নির্ধারিত ৫০ পয়সায় প্রতিটি হাঁসের টিকা তাড়াশ প্রাণিসম্পদ অফিস থেকে কিনতে পারেন খামারিরা।’
এ ছাড়াও সব হাঁস খামারিদের প্রশিক্ষণের আওতায় আনাসহ কারিগরি প্রশিক্ষণের পরিকল্পনা এ দফতরে রয়েছে বলে জানান তিনি।


প্রকাশিত: অক্টোবর ১০, ২০২৩ | সময়: ৫:১০ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ