রাজশাহী জেলা ও নগর যুবলীগের সম্মেলন আজ, প্রস্তুতি সম্পন্ন

স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহী মহানগর যুবলীগের বহু প্রতিক্ষীত সম্মেলন আজ (মঙ্গলবার)। নগর সেজেছে বর্ণিল সাজে। দীর্ঘদিন পরে নতুন নেতৃত্ব পেতে যাচ্ছে নগর যুবলীগ। আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু মহানগর ও জেলা যুবলীগের সম্মেলন। কে হচ্ছেন রাজশাহী মহানগর ও জেলা যুবলীগের আগামী দিনের কান্ডারী। তা নিয়ে যুবলীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে উচ্ছ্বসও চরমে।
এ নিয়ে সোমবার সকালে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে রাজশাহী মহানগর ও জেলা যুবলীগের নেতারা।
সংবাদ সম্মেলনে যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিশ্বাস মতিউর রহমান জানান, এই সম্মেলনকে ঘিরে নেতাকর্মীদের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা বিরাজ করছে।
তিনি বলেন, অনেকেই সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হতে জীবনবৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন। তাদের মধ্য থেকে যোগ্য নেতৃত্ব আসবে বলে আশা করছি। তিনি বলেন, যারা ক্লিন ইমেজ, সাংগঠনিকভাবে দক্ষ, ত্যাগী ও পরীক্ষিত তাদের মধ্য থেকেই নেতৃত্ব বেছে নেয়া হবে। এ সময় রাজশাহী মহানগর যুবলীগের সভাপতি রমজান আলী, জেলা সভাপতি আবু সালে ও বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মরা উপস্থিত ছিলেন।
এবারের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনকে ঘিরে পদ প্রত্যাশিদের ফেস্টুন ব্যানার শোভা বর্ধন করছে পুরো নগরীজুড়েই। তবে এ ক্ষেত্রে নগর যুবলীগের উচ্ছ্বাস-উদ্দীপনা তুঙ্গে রয়েছে। কিছুটা অস্থিরতাও বিরাজ করছে। এরই মধ্যে যুবলীগের এক কর্মীর ওপর হামলার ঘটনাও ঘটেছে। টানা ২০ বছরের রাজশাহী যুবলীগের পট পরিবর্তন হতে যাচ্ছে। এরফলে আওয়ামী লীগের প্রাণশক্তি এ সংগঠনের নেতাকর্মীরা প্রাণচাঞ্চল্য হয়ে উঠেছে।
জেলা কমিটির জন্যও সভাপতি পদে ১০ জন ও সাধারণ সম্পাদক পদে ১৮ জন নেতা জীবনবৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন। তবে গঠনতন্ত্র মেনে এবার প্রার্থী হিসেবে জীবনবৃত্তান্ত দেননি সভাপতি সালেহ।
রাজশাহীতে দীর্ঘদিন ধরে কমিটি না হওয়া যুবলীগ অবশেষে চাঙা হয়েছে। রাজশাহী মহানগর যুবলীগের সভাপতি রমজান আলী ও সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন বাচ্চুর বয়স ৬০ পেরিয়েছে। তারা নিজ নিজ পদে আছেন প্রায় দেড় যুগ ধরে। আবার জেলার সভাপতি আবু সালেহও দায়িত্বে আছেন দেড় যুগের বেশি সময়। জেলার সাধারণ সম্পাদক এইচএম খালিদ ওয়াসি কেটুর মৃত্যুর পর চার বছর ধরে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব সামলাচ্ছেন আলী আযম সেন্টু। তারাও আর বয়সে যুবক নন।
২৬ সেপ্টেম্বর মহানগর ও জেলা যুবলীগের এ সম্মেলন। সাত বছর পর হচ্ছে সম্মেলনের এই আয়োজন। নেতৃত্ব প্রত্যাশীরা সম্মেলন ঘিরে তৎপর হয়ে উঠেছেন। তৃণমূলও চাঙা হয়েছে। তবে দিনক্ষণ এগিয়ে আসায় শুরু হয়েছে এক ধরনের অস্থিরতা। নেতৃত্ব প্রত্যাশীরা একজন আরেকজনের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়াচ্ছেন কুৎসা। এরই মধ্যে যুবলীগের এক কর্মীর ওপর হামলার ঘটনাও ঘটেছে।
জেলায় সভাপতি পদের জন্য জীবনবৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন বর্তমান সহসভাপতি মাহমুদ হাসান ফয়সাল সজল, মোজাহিদ হোসেন মানিক, আলমগীর মুর্শেদ রঞ্জু, আনোয়ার হোসেন, তাসিকুল ইসলাম, আরিফুল ইসলাম রাজা, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আলী আযম সেন্টু, মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জোবায়ের হোসেন রুবন, পবা উপজেলা যুবলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি এমদাদুল হক, রেজাউন নবী আল মামুন। আর সম্পাদক পদে জীবনবৃত্তান্ত দিয়েছেন জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মেরাজুল ইসলাম মেরাজ, জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোবারক হোসেন মিলন, সামাউন ইসলাম, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি হাবিবুর রহমান, জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সেজানুর রহমান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু প্রমুখ।
সম্মেলনকে সামনে রেখে নগরজুড়ে সাজ সাজ রব বিরাজ করছে। ব্যানার ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে পুরো নগরী। বিশেষ করে পদপ্রত্যাশীরা নিজ নিজ নামের ফেস্টুনে রাঙিয়েছেন নগরীকে। আবার নগর পেরিয়েও ব্যানার ফেষ্টুনে ভরে উঠেছে সর্বত্রই। নগর যুবলীগের ব্যানার ফেষ্টুন শোভা পাচ্ছে শাহ মখদুম বিমানবন্দর গেট থেকেই। কর্মীরাও সমর্থন জানিয়ে নেতার পোস্টার টানিয়েছেন। সব মিলে রাজশাহী এখন উৎসবের নগরীতে পরিণত হয়েছে।
এবার যুবলীগকে চাঙ্গা করতে তৃণমূল নেতাকর্মীরা সভাপতি হিসাবে নতুন মুখের ওপর ভরসা রাখতে চাচ্ছেন। যুবলীগের নেতাকর্মীরা চাচ্ছেন তরুণ নেতৃত্ব। সব সময় তৃণমূল নেতাকর্মীদের পাশে থেকেছেন, আপদে বিপদে পাশে দাঁড়িয়েছেন এমন সভাপতি-সম্পাদক নির্বাচিত করার জন্য হাইকমান্ডের কাছেও আহ্বান জানিয়েছেন তৃণমূল নেতৃবৃন্দ।
পদপ্রত্যাশীরা বলছেন, আওয়ামী লীগের পরই সহযোগী সংগঠনগুলোর মধ্যে যুবলীগ সবচেয়ে শক্তিশালী। গেল ২০০৯ সালের পর থেকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে নানা আন্দোলন-সংগ্রামে রাজশাহীতে তেমন সাড়া ফেলতে পারেনি যুবলীগ। এ নিয়ে অসন্তোষ ছিল নেতা-কর্মীদের মাঝে। এমনকি মূল দল আওয়ামী লীগের মাঝেও হতাশা ছিল। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নতুন করে কমিটি গঠনের উদ্যোগে এখন বেশ উজ্জীবিত সবাই।
সভাপতি প্রার্থী তৌরিদ আল মাসুদ রণি বলেন, দীর্ঘদিন পর সম্মেলনের ঘোষণায় উজ্জীবিত নেতারা। বিশেষ করে প্রতিটি ওয়ার্ডে সাধারণ নেতা-কর্মীরা খুশি। সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী নাহিদ আকতার নাহান বলেন, প্রতিটি ওয়ার্ডে কর্মীদের মধ্যে যে উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে, তাতে আগামী নির্বাচনে এই সম্মেলন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
এদিকে রাজশাহী জেলা যুবলীগের কমিটি হয়েছিল ২০১৬ সালের ১৫ মার্চ। সে সময় দ্বিতীয়বারের মতো সভাপতি হন আবু সালেহ। আবু সালেহ ২০০৪ সালে প্রথম জেলা যুবলীগের সভাপতি হন। এরপর তিনিও ১৯ বছর ধরে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। দ্বিতীয় মেয়াদে আবু সালেহর কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক হন খালিদ ওয়াসি কেটু। কিছুদিন পর কেটু মারা গেলে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হন আলী আজম সেন্টু। তবে দুজনের বিরোধের কারণে সংগঠনে স্থবিরতা লম্বা সময় ধরেই। অবশেষে সম্মেলনের দিন ঠিক হওয়ায় উজ্জীবিত জেলার নেতারাও।
এদিকে জেলা যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাশি মোবারক হোসেন বলেন, রাজশাহী জেলাধীন ৯ টি উপজেলা, ১৪ টি পৌরসভা ও ৭২ ইউনিয়ন আছে। আমি নেতৃত্বে আসলে সকল মেয়াদউর্ত্তীন কমিটিকে সম্মেলনের মাধ্যমে ঢেলে সাজাবো। কমিটিতে স্থান পাবে ত্যাগী সাংগঠনিক, সৎ ও শিক্ষিত ব্যক্তিরা।কোন মাদক সেবনকারী, মাদক ব্যবসায়ী, সন্ত্রাসী অসাংগঠনিক ও অনুপ্রবেশকারী ব্যক্তিরা কমিটিকে স্থান পাবেনা।
আমি অনেক আগে থেকেই জেলা যুবলীগের রাজনীতি করি। আমি বর্তমানে জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পদে আছি। জেলার বিভিন্ন এলাকার মানুষ শহরে বিভিন্ন কাজে আসে। কেউ বা মেডিকেল ও আলাদতে বিভিন্ন কাজে আসেন। আমি তাদের বিভিন্ন ভাবে সহযোগীতা করে থাকি। আমি আশা করছি আগামী কালকের সম্মেলনের মাধ্যমে জেলা যুবলীগের সৎ যোগ্য, সাংগঠিক ও মেধাবী, মননশীল ও শিক্ষিত যুবকেরাই নেতৃত্বে আসবেন বলে আমি বিশ্বাস করি।যে নেতৃত্বের মাধ্যমে জেলা যুবলীগ অতীতের চেয়ে আরো বেশি শক্তিশালী হবে।
একই দিনে একই মঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে নগর ও জেলা যুবলীগের এই সম্মেলন। অনেকে বলছেন – বিষয়টি সবদিক থেকে ভাল হয়েছে। এ যেন একই মঞ্চে দুই ভাইয়ের বিয়ে এবং একই খরচে অতিথি আপ্যায়ন। আবার নগর ও জেলা নেতৃবৃন্দ নিজ নিজ সম্মেলন নিয়ে ব্যস্ত থাকায় একে অপরের কমিটিকে প্রভাব খাটাতে চাইবে না। অর্থাৎ প্রভাবমুক্তভাবে দু’টি কমিটি পাবে রাজশাহী যুবলীগ।
আজকের সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ এমপি, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন, নির্বাহী সদস্য নূরুল ইসলাম ঠান্ডু ও বেগম আখতার জাহান। প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকবেন, যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল। উদ্বোধন করবেন যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস্ পরশ।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও রাজশাহী-৬ (বাঘা-চারঘাট) আসনের সংসদ সদস্য শাহরিয়ার আলম, রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ী) আসনের সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী, রাজশাহী-৪ আসনের সংসদ ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক, রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনের সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিন, সংরক্ষিত সংসদ সদস্য আদিবা আনজুম মিতা, রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী কামাল, রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অনিল কুমার সরকার, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল ওয়াদুদ দারা, রাজশাহী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মীর ইকবাল। বিশেষ বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকবেন, যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিশ্বাস মতিউর রহমান রফিকুল আলম জোয়ারর্দার সৈকত, সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. হেলাল উদ্দিন, কার্যনির্বাহী সদস্য ইঞ্জিনিয়ার শহিদুল ইসলাম সরকার, রাজশাহী জেলা যুবলীগের সভাপতি আবু সালেহ, যুবলীগের কেন্দ্রিয় কমিটির সদস্য অ্যাড. গোলাম রাব্বানী, এজাজুল ইসলাম।
সভাপতিত্ব করবেন রাজশাহী মহানগর যুবলীগের সভাপতি রমজান আলী। সঞ্চালনায় থাকবেন রাজশাহী মহানগর যুব লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন বাচ্চু ও জেলা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আলী আজম সেন্টু।


প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২৩ | সময়: ৬:৩৪ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ