আসামী ছাড়াতে থানায় গিয়ে নির্যাতনের শিকার নারী

স্টাফ রিপোর্টার, শিবগঞ্জ: ছিনতাই মামলার আসামীকে ছাড়াতে গিয়ে নারী নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে শিবগঞ্জ থানার বিরুদ্ধে। এ নিয়ে এক নারী সংবাদ সম্মেলনও করেছে। তবে শিবগঞ্জ থানা পুলিশ এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
শিবগঞ্জ থানা ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১৩ সেপ্টেম্বর সকালে শিবগঞ্জ বাজারের স্বর্ণকারপট্টি থেকে একটি মোটরসাইকেল ছিনতাই হয়। এ ঘটনায় প্রতক্ষদর্শীরা ইমনকে আটক করে শিবগঞ্জ থানায় সোপর্দ করে। পরে ১৫ রশিয়া গ্রামের মরফুল ইসলাম বাদী হয়ে শিবগঞ্জ থানায় তার মোটরসাইকেল ছিনতাইয়ের সাথে ইমন আলী জড়িত দাবী করে তাকে আসামী করে একটি ছিনতাই মামলা দায়ের করেন।
এদিকে ইমন আটকের খবর শুনে তার খালা ও তার নানি ঐদিন দুপুরে শিবগঞ্জ থানায় তদবীর করতে যায়। এসময় তারা তার ভাগ্নেকে মানষিক ভারসাম্যহীন দাবী করে আসামী ছেড়ে দেয়ার জোর দাবী জানায়। এ সময় পুলিশ আসামী ছাড়তে অপারগতা প্রকাশ করলে ইমনের খালা শিউলী বেগম থানা চত্বরের একটি গাছে উঠে আত্মহত্যার চেষ্টা চালায়। পরে পুলিশ গাছ থেকে নামিয়ে তাকে আত্মহত্যা চেষ্টার মামলায় আটক দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করে। অন্যদিকে অভিযুক্ত ইমনকে ছিনতাই মামলায় আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরন করা হয়।
এদিকে ইমনের খালা শিউলি বেগম আদালতের মাধ্যমে জামিনে বেরিয়ে এসে বৃহষ্পতিবার দুপুরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শহরের একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলন করে পুলিশের বিরুদ্ধে বিবস্ত্র করে নারী নির্যাতনের অভিযোগ আনেন।
সংবাদ সম্মলেনে শউিলী খাতুন অভিযোগ করে বলেন, গত ১৩ সেপ্টেম্বর তার বোনের ছেলে মানসিক ভারসাম্যহীন ইমনকে পুলিশ ছিনতাই মামলায় আটক করে। তিনি ও তার মা তার ভাগ্নে মানষিক ভারসাম্যহীন দাবি করে ডাক্তারের চিকিৎসাপত্র দেখালেও পুলিশ তা না শুনে তাদরেকে নানারকম হুমকি ও ভয়ভীতি দেখায়।
শিবগঞ্জ থানার ওসি, এসআই সিরাজ, এএসআই শহিদুল ও এক মহিলা কনষ্টেবল তাকে নির্যাতন করে বিবস্ত্র করে এবং বেধড়ক মারধর করে হাসপাতালে ভর্তি করে। পরবর্তিতে তার বিরুদ্ধে উল্টো আত্মহত্যা চেষ্টার মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তিনি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেন। এ সময় শিউলি খাতুনের মা সহ পরিবারের অন্য সদস্যরা উপস্থতি ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনকারী শিউলী বেগমকে তার ভাগনে মানসিক ভারসাম্যহীন বলে দাবী করলেও তিনি এর স্বপক্ষে কোন কাগজ দেখাতে পারেননি। তার ভাগনের বিরুদ্ধে টাকা ও মোটরসাইকেল ছিনতাইয়ের অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি দাবী করেন, টাকা ছিনতাইয়ের অভিযোগকারী মরিয়মের সাথে পারিবারিক দ্বন্দ্বের জেরে ঘটনা। আর মোটরসাইকেল ছিনতাইয়ের বিষয়টি পুলিশের সাজানো নাটক।
আত্মহত্যা প্রসঙ্গে তার দাবী পুলিশ তাকে নির্যাতনের পর গাছে উঠিয়ে নাটক করে আবার তাকে গাছ থেকে নামিয়েছে। মানষিক ভারসাম্যহীন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তার ভাগনে ঢাকায় রাজমিস্ত্রীর কাজে গিয়ে সঙ্গ দোষে নেশায় আসক্ত হয় এবং ঠিকাদারের নির্যাতনে মানষিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেললে ১২ সেপ্টেম্বর বাড়ি চলে আসে।
শিবগঞ্জ থানার ওসি চৌধুরি জোবায়ের হোসেন জানান, তিনি সহ তার থানার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ভিত্তিহীন। জনতার মাধ্যমে ছিনতাই মামলার আসামীকে পুলিশ থানায় আটক করতে গিয়ে এ ধরনের অভিযোগ অনাকাঙ্খিত।
তিনি দাবী করেন, ইমন মানষিক ভারসাম্যহীন নয় বা এ ধরনের কোন প্রমান তারা দেখাতে পারেনি। ইমন একজন পেশাদার ছিনতাইকারী ও মাদকাশক্ত।
এর আগে শিবগঞ্জ পৌর এলাকার মরিয়ম বেগমের ৪০ হাজার টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় থানার পাশে শালিশ বৈঠকের মাধ্যমে মিমাংসা হয়। তাকে জোর করে গাছে উঠানোর বিষয়টিও ভিত্তিহীন, যা ভিডিও ফুটেজ প্রমান করবে।


প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২২, ২০২৩ | সময়: ৪:৫৩ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ