বাংলাদেশ থেকে পর্যটক ৮ গুণ বাড়ানোর লক্ষ্য সৌদি আরবের

সানশাইন ডেস্ক: দেশের অর্থনীতিতে গতি বাড়াতে পর্যটন খাতে জোর দিচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরব। চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত ৩ লাখ ৩২ হাজার বাংলাদেশি সৌদি আরব ভ্রমণ করেছেন। হজ ও ওমরাহ পালন ছাড়াও ভ্রমণ করতে অনেক বাংলাদেশি যাচ্ছেন দেশটিতে। সার্বিক বিবেচনায় পর্যটন খাতে সৌদির জন্য বাংলাদেশ হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ বাজার। ২০৩০ সাল নাগাদ বাংলাদেশ থেকে বছরে ৩০ লাখ পর্যটকের টার্গেট রয়েছে দেশটির। তাই বাংলাদেশকে ঘিরে দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সৌদি আরব।
এত দিন পর্যটন নিয়ে তেমন আগ্রহ ছিল না সৌদি আরবের। সম্প্রতি বৈদেশিক মুদ্রার আয় বাড়াতে পর্যটন খাতকে গুরুত্ব দিয়ে ভিসানীতিতে পরিবর্তন এনেছে দেশটি। পর্যটকরা যেন সহজে ভিসা আবেদন করতে পারে, সেজন্য চালু করা হয়েছে ই-ভিসা পদ্ধতি। বাংলাদেশে গত ১ মে থেকে ই-ভিসা বা ইলেকট্রনিক ভিসা চালু করেছে দেশটি। ফলে সৌদিতে যেতে হলে আগের মতো কাগজের ভিসা পাওয়ার দীর্ঘ সূত্রতায় পড়তে হবে না। যাদের যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, শেনঝেনের ভিসা রয়েছে, তাদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ই-ভিসা দেবে সৌদি আরব।
অপরদিকে পর্যটকদের আগমন নিরবচ্ছিন্ন করতে বাংলাদেশের সঙ্গে আকাশপথে যোগাযোগ বাড়াতেও উদ্যোগ নিয়েছে সৌদি। ২৩ আগস্ট বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বিমান চলাচল সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। এ চুক্তির আওতায় দুই দেশের মধ্যে ফ্লাইট সংখ্যা বাড়ানো হবে। সৌদি আরবের বিভিন্ন গন্তব্যে সরাসরি যাওয়ার সুযোগ পাবেন বাংলাদেশি পর্যটকরা। আগে সৌদির জেদ্দা, রিয়াদ, দাম্মাম ও মদিনা-এই চারটি বিমানবন্দরে বাংলাদেশ থেকে ফ্লাইট পরিচালিত হতো। নতুন চুক্তির ফলে বাংলাদেশের যেকোনও এয়ারলাইন যাত্রী নিয়ে সৌদি আরবের যেকোনও আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করতে পারবে। নতুন সই করা সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী, সৌদি আরবে পরিচালিত ফ্লাইটের ফ্রিকোয়েন্সিও বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে নির্ধারিত ৪৯টি যাত্রী ও কার্গো ফ্লাইট ফ্রিকোয়েন্সির পরিবর্তে ৪৯টি যাত্রী ফ্লাইট ফ্রিকোয়েন্সি সুবিধা পাবে এয়ারলাইনগুলো।
সৌদি আরববৈদেশিক মুদ্রার আয় বাড়াতে পর্যটন খাতকে গুরুত্ব দিয়ে ভিসানীতিতে পরিবর্তন এনেছে সৌদি আরব। পর্যটন খাতে গতি বাড়াতে ট্রানজিট যাত্রীদের জন্যও সুবিধা বাড়িয়েছে সৌদি সরকার। বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশ থেকে অনেকেই সৌদি আরবের বিভিন্ন এয়ারলাইন ব্যবহার করে যাতায়াত করেন। ট্রানজিট যাত্রীদের সৌদি আরবে ভ্রমণে আগ্রহী করতে ট্রানজিটের সময় যাত্রীদের চার দিনের ভিসা দেবে দেশটি। এই ট্রানজিট সময়ে যাত্রীরা সৌদি আরবে ওমরাহ পালন করতে পারবেন।
সম্প্রতি বাংলাদেশে সফর করে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়, বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয়, বিভিন্ন পর্যটন খাত সংশ্লিষ্ট সংগঠন এবং প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি ও বৈঠক করেছেন সৌদি আরবের হজ ও ওমরা বিষয়ক মন্ত্রী ড. তৌফিগ আল-রাবিয়াহের নেতৃত্বাধীন একটি প্রতিনিধি দল। ২৩ আগস্ট ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খানের সঙ্গে ওই প্রতিনিধি দলের দ্বি-পাক্ষিক বৈঠক হয়। হজের কোটা বাড়ানো এবং খরচ কমানোর বিষয়েও আলোচনা হয় বৈঠকে।
ওমরাহ ভিসার মেয়াদ ৩০ দিন থেকে বাড়িয়ে ৯০ দিন করেছে সৌদি। আগে ওমরাহ ভিসায় সৌদি ভ্রমণ করা যেতো না। এখন ওমরাহ ভিসায় পুরো সৌদি ভ্রমণ করা যাবে। আগে নিষিদ্ধ থাকলেও এখন নারীরা মাহরাম ছাড়া মক্কা ও মদিনায় যেতে পারবেন। আগে ওমরাহ ভিসা ছাড়া সৌদি থেকে জমজমের পানি আনা যেতো না, নতুন চুক্তি অনুযায়ী সব ভিসাধারীরাই জমজমের পানি আনতে পারবেন।
সৌদি আরবে বর্তমানে ২৮ লাখ বাংলাদেশি কর্মরত আছেন। প্রবাসীরা যেন তাদের পরিবারের সদস্যদের সৌদি আরবে ভ্রমণের জন্য নিয়ে যেতে পারেন, সেজন্য ফ্যামিলি ভিজিট ভিসার পদ্ধতিও সহজ করা হয়েছে। ২০২২ সালে সারা বিশ্ব থেকে হজ ও ওমরাহ পালনকারীদের ভিসা ও ভ্রমণ সংক্রান্ত বিষয়ে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ‘নুসুক’ চালু করে সৌদি আরব। এটি দেশটির সরকারের প্রথম অফিসিয়াল প্ল্যানিং, বুকিং এবং এক্সপেরিয়েন্স প্ল্যাটফর্ম, যার লক্ষ্য হচ্ছে— মক্কা ও মদিনায় ওমরাহ এবং হজ পরিকল্পনা করতে সাহায্য করা। সারা বিশ্বের ভ্রমণকারীরা তাদের ভ্রমণ পরিকল্পনা করতে পারবেন নুসুকে। এতে ভিসা আবেদন থেকে শুরু করে ফ্লাইট ও হোটেল বুকিং সুবিধাও রয়েছে।
নুসুককে জনপ্রিয় করতে বিভিন্ন দেশে নানান কার্যক্রম পরিচালনা করছে সৌদি আরব। গত ২৪ আগস্ট ঢাকায় সৌদি সরকারের ফ্ল্যাগশিপ উদ্যোগ নুসুককে পরিচিত করতে প্রথম রোড শো’র আয়োজন করা হয়। রোড শোতে যোগ দেন ড. তৌফিগ আল-রাবিয়াহ, নুসুকে (এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল) প্রেসিডেন্ট আলহাসান আলদাববাগসহ সৌদির সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। বাংলাদেশে হজ, ওমরাহ, ট্যুর অপারেটর, ট্রাভেল এজেন্সি, এয়ারলাইনের প্রতিনিধিদের এ আয়োজনে আমন্ত্রণ জানানো হয়।
ড. তৌফিগ আল-রাবিয়াহ বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশের সঙ্গ সৌদির ভ্রাতৃত্বসুলভ সম্পর্ক। বাংলাদেশ থেকে আল্লাহর অতিথিরা হজ ও ওমরাহ পালন করতে আসেন। নিরাপদ, ঝামেলামুক্ত এবং আরামদায়ক সেবা দেওয়া আমাদের দায়িত্ব। আমরা তাদের আরও উন্নত সেবা দিতে, ভ্রমণ অভিজ্ঞতা আরামদায়ক করতে কাজ করছি।’
সৌদির ভিশন ২০৩০ ও পর্যটন প্রসঙ্গে নুসুক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফাহ্দ হামিদাদ্দিন বলেন, ‘বাংলাদেশ আমাদের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। এ বছর এখনও পর্যন্ত সৌদিতে তিন লাখ ৩২ হাজার বাংলাদেশি ভ্রমণ করেছেন। আমরা আরও বাংলাদেশিকে স্বাগত জানাতে চাই। বাংলাদেশিদের ওমরাহ পালনের স্বপ্ন পূরণে সহযোগী হতে চাই। ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক সমৃদ্ধ সৌদিতে স্বাগত জানাতে অপেক্ষায় থাকবো। সৌদির ভিশন ২০৩০ অর্জনের জন্য বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের প্রত্যাশা, ২০৩০ সালের ভেতরে তিন মিলিয়ন বাংলাদেশিকে আমরা স্বাগত জানাতে পারবো।’


প্রকাশিত: আগস্ট ২৮, ২০২৩ | সময়: ৪:৫৩ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ