মাদ্রাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শুদ্ধি অভিযান

সানশাইন ডেস্ক: একটার পর একটা দুর্নীতির অভিযোগের পর মাদ্রাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শুদ্ধি অভিযান চালাচ্ছে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতর। গত কয়েক মাসে শতাধিক প্রধানসহ শিক্ষকদের এমপিও স্থগিত ও স্থায়ীভাবে এমপিও বন্ধের উদ্যোগসহ নানা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তারপরও দুর্নীতি থেকে মুক্ত থাকছে না মাদ্রাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। অনেক সময় অধ্যক্ষসহ শিক্ষকরা প্রতিষ্ঠানে অনুপস্থিত থাকছেন দিনের পর দিন। আবার অনেকে অনুপস্থিত থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা রকম অশোভন কার্যক্রম পরিচালনা করছেন, ঘৃণা ছড়াচ্ছেন ফেসবুকে।
পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে শুদ্ধি অভিযান শুরু করেছে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতর। মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতর গত ৩১ জুলাই সারা দেশে মাদ্রাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৎক্ষণাৎ পরিদর্শনের জন্য ২২ কর্মকর্তাকে নিযুক্ত করেছে। আর শৃঙ্খলা ফেরাতে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে গত ১৮ জুলাই। মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, নিয়োগ ও এমপিও জালিয়াতির কারণে ব্যবস্থা নেওয়ার পরও সম্প্রতি শতাধিক শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগে কারণ দর্শানো নোটিশ করেছে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতর। তথ্য গোপন ও ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে জ্যেষ্ঠ প্রভাষক ও সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি এবং আর্থিক সুবিধা দিয়ে সহায়তা করায় ১১টি প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
গত ৬ আগস্টের কারণ দর্শানো নোটিশগুলোতে বলা হয়, তথ্য গোপন ও ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে বিধি বহির্ভূতভাবে পদোন্নতি ও আর্থিক সুবিধা গ্রহণ এবং গ্রহণে সহায়তা করেছেন। কোনও কারণ ছাড়াই বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণে অংশ নেননি ৫৯ মাদ্রাসা শিক্ষক। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ২১ আগস্ট কারণ দর্শানো নোটিশ করে অধিদফতর।
সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর উপজেলার হুলিয়ারপুর জামেয়া কাসেমিয়া আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মো. মইনুল ইসলাম পারভেজের বিরুদ্ধে বাল্যবিবাহ দেওয়ার অভিযোগে গত ২৫ জুন তার এমপিও বন্ধ করতে কারণ দর্শানো নোটিশ করা হয়েছে। নোটিশে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতর জানায়, বর ও কনে পক্ষকে নানা কায়দায় প্ররোচিত করে কাবিননামায় বয়স জালিয়াতি করে বাল্য বিয়ে দেওয়া হয়। শুধু তাই নয়, অধ্যক্ষ বর ও কনে পক্ষকে নানা প্ররোচণা দিয়ে বিয়ে দেওয়া এবং বিবাহ বিচ্ছেদের মতো কাজ করেন।
মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতর জানায়, যোগ্যতা না থাকায় তথ্য গোপন করে জালিয়াতির মাধ্যমে উচ্চতর গ্রেডে এমপিওভুক্ত হয়েছেন দেশের ২২টি মাদ্রাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ, সুপার, সহকারী সুপার, সহকারী মৌলভী ও সহকারী শিক্ষকসহ ২৯ জন। এই ঘটনা জানার পর শিক্ষকদের বেতন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া শিক্ষকদের নেওয়া অতিরিক্ত টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
কক্সবাজারের রামু উপজেলার ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসায় গ্রুপিং করে শিক্ষকদের বেতন উত্তালন করতে দেওয়া হয়নি। শিক্ষকদের বেতন-ভাতা দেওয়ার ব্যবস্থা নিতে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতর প্রতিষ্ঠানটির গভর্নিং বডির সভাপতি ও অধ্যক্ষকে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টসহ অধিদফতরে উপস্থিত হওয়ার নির্দেশ দেয়।
সিলেটের জাকিগঞ্জ উপজেলার চাপঘাট রহিমপুর সুন্নী দাখিল মাদ্রাসায় আর্থিক দুর্নীতি, ঘুষ লেনদেনের কারণে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতরে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে। এ অভিযোগের পর মাদ্রাসার এমপিও বন্ধসহ স্থায়ীভাবে কেন এমপিও বন্ধ করা হবে না তা জানতে চাওয়া হয়েছে মাদ্রাসা সুপারের কাছে।
মাদ্রাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দিনের পর দিন অনুপস্থিত থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রাষ্ট্রের আইন বিারোধী ও নারী বিদ্বেষী কর্মকাণ্ড চালাচ্ছেন বেশ কিছু মাদ্রাসার শিক্ষক। বাধ্য হয়ে গত ১৮ জুলাই মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতর বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দাখিল, আলিম, ফাজিল ও কামিল মাদ্রাসা পর্যায়ের কতিপয় শিক্ষক শ্রেণিকক্ষে নিয়মিত পাঠদান না করে কর্মস্থলের বাইরে অবস্থান করছেন। এমনকি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তাদের ব্যক্তিগত ওয়ালে ও বিভিন্ন গ্রুপে আন্দোলনের নামে কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অশোভন, অনৈতিক, শিষ্ঠাচার বহির্ভূত এবং উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদান করছেন।
আর্থিক দুর্নীতির কারণে সাতক্ষীরা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ মো. আবদুল কুদ্দুস সরদারকে এক পদ নামিয়ে উপাধ্যক্ষ করা হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. কামাল হোসেনের সই করা গত ৩১ অক্টোবরের অফিস আদেশ এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়। গত ১৬ আগস্ট গাজীপুরের কাপাশিয়া উপজেলার টোকনগর দারুল হাদিস আলিম মাদ্রাসায় প্রভাষক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগে নিয়োগকালীন কাগজপত্র চেয়েছে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতর।
গত ১১ জুলাই নড়াইল জেলার লোহাগড়া উপজেলার কোটাকলি বাইতুল ফালাহ দাখিল মাদ্রাসায় তথ্য গোপন করে প্যাটার্ন বহির্ভূত পদে সহকারী মৌলভী পদে এমপিওভুক্ত করার অভিযোগে মাদ্রাসা প্রধানের এমপিও বন্ধে কারণ দর্শানো নোটিশ করা হয়েছে। একই অভিযোগে চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার মোহাম্মদিয়া বালিকা দাখিল মাদ্রাসা সুপারের এমপিও বন্ধে কারণ দর্শানো নোটিশ করা হয়েছে। সিরাজগঞ্জ জেলার কাজীপুর উপজেলার সোনামুখী সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসায় নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফল জালিয়াতির মাধ্যমে দুই জন শিক্ষক নিয়োগের অভিযোগে অধ্যক্ষর এমপিও বন্ধে কারণ দর্শানো নোটিশ করা হয়েছে।
জানতে চাইলে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতরের উপপরিচালক (প্রশাসন) মো. জাকির হোসাইন বলেন, ‘শুদ্ধি অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। যাতে করে কোনও মাদ্রাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান ও শিক্ষকরা আর্থিক দুর্নীতিতে না জড়ায়। নিয়োগ ও এমপিও জালিয়াতির কারণে শত শত শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। নিয়মিত এই কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। শিক্ষকরা যাতে ক্লাস ফাঁকি না দেন এবং দুর্নীতি না করতে পারেন সে জন্য তাৎক্ষণিক পরিদর্শনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ২২ জন কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করছেন।’


প্রকাশিত: আগস্ট ২৭, ২০২৩ | সময়: ৫:০২ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ