তাদের ভয়ঙ্কর অগ্নিসন্ত্রাসী রূপ আবার দেখলাম: শেখ হাসিনা

সানশাইন ডেস্ক: সরকার হটানোর আন্দোলনে থাকা বিএনপি আবারও ‘ভয়ঙ্কর অগ্নিসন্ত্রাস’ শুরু করেছে মন্তব্য করে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোববার দেশের বিভিন্ন জেলায় আরও ৫০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তার এ আহ্বান আসে।
আগের দিন ঢাকার প্রবেশপথে বিএনপির অবস্থান কর্মসূচি ঘিরে সংঘাত এবং বাস পোড়ানোর প্রসঙ্গ ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “তাদের (বিএনপি) চরিত্র তো জানেন, তারা অগ্নিসন্ত্রাসী। গতকালকেও দেখেছেন। কতগুলো বাস পুড়িয়েছে। “এর আগেও জীবন্ত মানুষগুলোকে পুড়িয়ে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। গতকালকেও তাদের ভয়ঙ্কর অগ্নিসন্ত্রাসী রূপ আবার দেখলাম। বাংলাদেশে যেন এ ধরনের সন্ত্রাসীরা ক্ষতি করতে না পারে সেজন্য সকলের কাছে আমার আহ্বান থাকল।”
প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যুক্ত হন। ইসলামের প্রচার ও প্রসারে তার সরকারের নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তিনি অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন। শেখ হাসিনা বলেন, “জাতির পিতাকে হত্যা করার পর ইসলামের নাম নিয়ে অনেকে ক্ষমতায় এসেছে। কিন্তু ইসলাম ধর্মের প্রচার প্রসারে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।”
১৯৯৬ সালে যখন আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে, তখন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের নিজস্ব কোনো ভবন ছিল না, সে কথা মনে করিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, “আমি ১০ তলা ভবন নির্মাণ করে দিই। জেলায় জেলায় কোনো স্থায়ী অফিস ছিল না, মাত্র ৩৪টি জেলায় অফিস ছিল। আমি সরকারে আসার পর প্রতিটি জেলায় ইসলামিক ফাউন্ডেশন অফিসের ব্যবস্থা করে দিই ও কর্মকর্তা নিয়োগ দিই।
“আমি যখন বায়তুল মোকাররম মসজিদকে উন্নত করার জন্য প্রকল্প নিলাম, কাজ শুরু করলাম। সেখানে আমাদের মহিলাদের নামাজের সুব্যবস্থা, পুরুষদের নামাজের সুব্যবস্থা, অজুখানা থেকে শুরু করে গাড়ি পার্কিং এর সুব্যবস্থা, মিনার তৈরি করে দিচ্ছি, তখন ২০০১ এ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে পারেনি, খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে এই মসজিদের কাজ বন্ধ করে দেয়। আমরা যতটুকু কাজ করেছিলাম ততটুকু পড়ে থাকে। তা অত্যন্ত দুঃখজনক একটা ঘটনা।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আট বছর পর যখন আমরা ক্ষমতা এসে বায়তুল মোকাররম মসজিদকে আবার পুনর্র্নিমাণ করে উদ্বোধন করি। এখানে আমাদের সৌদি সরকারও আর্থিক সহায়তা করেন।” কোনো সরকার যেন ‘মসজিদ নষ্ট করতে না পারে’, সেজন্য মসজিদগুলো ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অধীনেই থাকবে বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “শুধু বায়তুল মুকাররম মসজিদ না, ক্যান্টনমেন্টে একটি বড় মসজিদের কাজ শুরু করছিলাম, তখন খালেদা জিয়ার বক্তব্য ছিল, এত বড় মসজিদে কে যাবে নামাজ পড়তে? মিনারগুলো তৈরি করতে দেয়নি। দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসে মসজিদটা নির্মাণ করি। “ইসলাম ধর্মের নামে রাজনীতি করে, কিন্তু ধর্মীয় কাজে তাদের কোনো আন্তরিকতা ছিল না। যা ছিল, শুধু দেখানো।”
৫০টি মডেল মসজিদ উদ্বোধন শেষে কক্সবাজার সদর ও খুলনার ফুলতলা উপজেলা মডেল মসজিদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ইমাম ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন শেখ হাসিনা। ইমাম ও মুয়াজ্জিনদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আমাদের সমাজে নানা ধরনের অপকর্ম হয়। এগুলো থেকে মানুষ যেন বিরত থাকে, সেজন্য আপনারা খুতবায় সচেতন করবেন। যেমন বাল্যবিবাহ রোধ করা, শিক্ষার প্রতি যেন সকলে আন্তরিক হয়, জঙ্গিবাদের সাথে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সাথে কারো ছেলে মেয়ে যেন সম্পৃক্ত না হয়।
“ইসলামের নামে জঙ্গিবাদী কার্যক্রম করে ৃইসলাম ধর্ম যে শান্তির ধর্ম, ইসলামের সেই সুনামটাই নষ্ট করে দেওয়া হচ্ছে। মুষ্টিমেয় কয়েকটি মানুষের জন্য আমাদের পবিত্র ধর্ম বিশ্বের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে, সেটা যেন না হয়।” শেখ হাসিনা বলেন, “জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসে আমাদের জিরো টলারেন্স, কোনোভাবে তা সহ্য করব না। এই পথে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে না। সেখান থেকে আপনারা ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে অথবা আপনার যখন শুক্রবারে খুতবা পড়েন, তখন যদি এই সামাজিক বিষয়গুলোতে মানুষকে সচেতন করেন, তাহলে প্রত্যেকটা বাবা-মা অভিভাবক সচেতন থাকবেন।”
সরকার ৯ হাজার ৪৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে সারাদেশে যে ৫৬৪টি মডেল মসজিদ নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছে, তার মধ্যে পাঁচ ধাপে ২৫০টি মসজিদের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী। এর আগে ২০২১ সালের ১০ জুন প্রথম ধাপে ৫০টি, ২০২৩ সালের ১৬ জানুয়ারি দ্বিতীয় ধাপে ৫০টি, ১৬ মার্চ তৃতীয় ধাপে ৫০টি এবং ১৭ এপ্রিল চতুর্থ ৫০টি মডেল মসজিদ উদ্বোধন করেন তিনি।


প্রকাশিত: জুলাই ৩১, ২০২৩ | সময়: ৬:২৮ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ