লালপুরে নিরাপদ ও বিষমুক্ত আম উৎপাদন করতে ফ্রুট ব্যাগিং করা হচ্ছে

লালপুর প্রতিনিধি:
কীটনাশকের ব্যবহার কমাতে নাটোরের লালপুরে বিষমুক্ত ও নিরাপদ আম রপ্তানির চিন্তা মাথায় রেখে রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন করতে আমে ব্যবহার করা হচ্ছে ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতি। এতে প্রথাগত পরিবর্তন এসেছে ফল উৎপাদনে। ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতিতে খরচ কম এবং শতভাগ নিরাপদ আম উৎপাদন হওয়ায় লোকসান কাটিয়ে বিষমুক্ত ও নিরাপদ আম দেশ ও দেশের বাহিরে রপ্তানি করে লাভবান হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন এ অঞ্চলের বাগান মালিকরা। চলতি বছরে প্রায় ১২ হাজার আমে করা হয়েছে (বিশেষ ধরনের কাগজের ব্যাগ দিয়ে মোড়ানো) ফ্রুট ব্যাগিং। উপজেলায় আমের বাম্পার ফলন হলেও সঠিক ব্যবস্থাপনা আর বাজারদরের কারণে বেশ কয়েক বছর ধরে লোকসানের মুখে পড়েছে ব্যবসায়ীরা। কীটনাশকের বিরুদ্ধে মানবদেহ ও পরিবেশের ভারসম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে এই পদ্ধতি ।

 

 

 

সরেজমিনে উপজেলার চাঁদপুর গ্রামে সাইদুর রহমানের আম্রপালি আম বাগানে গিয়ে দেখা যায়, আমের গাছে গাছে বাবুই পাখির বাসার মতো হলুদ রংএর ব্যাগ ঝুলছে। কাছে গিয়ে দেখা যায় ব্যাগের ভিতরে আম রয়েছে।
কথা হয় উপজেলার চাঁদপুর এলাকায় ফ্রুট ব্যগিং পদ্ধতিতে আম উৎপাদনকারী কৃষক সাইদুর রহমারে সঙ্গে। তিনি বলেন, এই প্রথম কৃষি অফিসের সহযোগিতায় তার ৫০ শতাংশ জমিতে আম্রপালি আমের বাগানে কীটনাশকের প্রয়োগ ছাড়া আম পাড়ার ৪৫ দিন আগে ২দুই হাজার আমে ফ্রুট ব্যাগিং করেছেন তিনি। ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতিতে আমের পরিচর্যা খরচ কম হয় এবং মানসম্মত আমও উৎপাদন করা য়ায়। তার দেখা দেখি এলাকার অনেক চাষী আমে ফ্রুট ব্যাগিং করতে আগ্রহী হচ্ছেন। এ আমের চাহিদাও বেশ রয়েছে। চিন থেকে আমদানীকৃত এই ব্যাগ গুলির দাম প্রতি পিচ সাড়ে তিন টাকা। আমদানিকৃত ব্যাগ গুলির দাম কমলে কৃষকরা ফ্রুট ব্যাগিং করতে আরো আগ্রহী হবে বলে জানান তিনি।

 

 

 

বিজয়পুর গ্রামের আম চাষী কামরুজ্জামান লাভলু গৌরমতি আমে ফ্রুট ব্যাগিং করেছেন। তিনি বলেন, এই পদ্ধতিতে আমে বাড়তি কোন কীটনাশকের ব্যবহার করতে হয় না। আম ব্যাগের ভিতরে থাকায় পোকামাকড় আক্রমন করতে পারে না। এতে আমের ফলন বৃদ্ধি পায় পাশাপাশি মানসম্মত বিষমুক্ত আম উৎপাদন করা যায়। বিষমুক্ত আমের চাহিদা বেশি থাকায় উৎপাদিত আম বিক্রয় করে আর্থিক ভাবে লাভবান হওয়া যায়। তার দাবি ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতিতে আম উৎপাদনের মাধ্যমে কীটনাশকের ব্যবহার কমবে পাশাপাশি স্বল্প খরচে মানসম্মত নিরাপদ বিষমুক্ত আম যেমন পাবে ভোক্তারা তেমনী লাভবান হবেন কৃষকরা।’
লালপুর উপজেলা কৃষি বিভাগের দেওয়া তথ্য মতে, চলতি মৌসুমে রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন প্রকল্পের আওতায় উপজেলায় প্রায় ৮ বিঘা জমিতে (আম্রপালি, বাড়ি-৪, গৌরমতি) জাতের ১২ হাজার আমে ফ্রুট ব্যগিং করা হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় উত্তম কৃষি চর্চার মাধ্যমে আম উৎপাদনের ৫টি প্রদর্শনীতে এবার ১০ মেট্রিকটন বিষমুক্ত নিরাপদ আম বাজারজাত ও মধ্যপ্রাচ্যে কয়েকটি রপ্তানির আশা করছে কৃষি বিভাগ। এছাড়ও এই প্রকল্পের আওতায় বিষমুক্ত নিরাপদ ফল উৎপাদনে উপজেলা জুড়ে আরও ৩২ টি প্রদর্শণী রয়েছে।’

 

 

লালপুর উপজেলা কৃষি অফিসার রফিকুল ইসলাম বলছেন, ভোক্তা পর্যায়ে বিষমুক্ত আম পৌঁছানোর লক্ষে লালপুরে রপ্তানি যোগ্য আম উৎপাদন প্রকল্পের আওতায় ফ্রুট ব্যগিং এর মাধ্যমে মানসম্মত, বিষমুক্ত নিরাপদ আম উৎপাদন করা হচ্ছে। ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতিতে আম উৎদনের কৃষকরাও আগ্রহী হচ্ছেন। এই আমগুলি দেশে বাজারজাত করনের পাশাপাশি ও মধ্যপ্রাচ্যে কয়েকটি রপ্তানির প্রক্রিয়া চলছে। আশা করা হচ্ছে বিদেশে আম রপ্তানি হলে কৃষকরা লাভবান হবেন। এ ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে কৃষকরা যেমন লাভবন হবেন তেমন ভোক্তারাও পাবে নিরাপদ আম। এজন্য কৃষি বিভাগ প্রতিনিয়ত কাজ করছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।

সানশাইন/সোহরাব


প্রকাশিত: জুলাই ১২, ২০২৩ | সময়: ৪:১০ অপরাহ্ণ | Daily Sunshine