সেই ‘সুখানদিঘি’ ভরাটের পর এবার হচ্ছে মার্কেট

স্টাফ রিপোর্টার : উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা সত্তেও রাতারাতি পাড় ভরাটের পর এবার সুখানদীঘিতেতে তৈরি হচ্ছে মার্কেট। নগরীর সপুরা এলাকার ‘সুখানদিঘি’ নামের পুকুরটি স্থানীয় একটি প্রভাবশালী চক্র রাতারাতি পাড় ভরাট করে মার্কেট নির্মাণের কাজ করছে। কয়েক বছর ধরেই পুকুরটি অল্প অল্প করে ভরাট করা হচ্ছিল।
রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) নগরীর ২২টি পুকুরকে সংরক্ষণের জন্য তালিকাভুক্ত করেছে অনেক আগেই। এ-সংক্রান্ত একটি প্রকল্পও পাঠানো হয়েছে মন্ত্রণালয়ে। ওই তালিকায়ও তিন একরের বেশি আয়তনের পুকুরটি আছে। রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (আরডিএ) মাস্টারপ্ল্যানেও এই পুকুরকে সংরক্ষিত জলাধার হিসেবে ধরা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওই পুকুরের মালিকানা একাধিকবার হাতবদল হয়েছে। এলাকার অনেকে এটির মালিকানা দাবি করেন। এ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে মামলা-মোকদ্দমা চলে আসছে। সর্বশেষ ক্রেতাদের একজন হিসেবে মহানগর যুবলীগের সভাপতি রমজান আলীর নাম পাওয়া যায়। রমজান আলী বলেন, কয়েক বছর আগে শেলি নামের এক আইনজীবীর কাছ থেকে তাঁরা ছয়জন পুকুরটি কিনেছিলেন। কিন্তু পুকুরের দখল নিতে গিয়ে ঝামেলা হওয়ায় তাঁরা বিক্রি করে দিয়েছেন। এখন মালিক কে তা তিনি জানেন না বলে দাবি করেন।
স্থানীয়রা জানায়, সোহরাব আলী ও সুমন আলী নামের দুই ব্যক্তি বেশ কিছু দিন ধরে পুকুরটি ভরাট করছেন। সিটি করপোরেশনের ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আবদুস সোবহান লিটন তাঁদের সঙ্গে আছেন। কাউন্সিলরের স্ত্রী, ভাই ও ভাতিজা এ পুকুরের কিছুটা অংশের মালিকানা দাবি করেন। তবে কাউন্সিলর লিটনের দাবি, পুকুরে তাঁদের কোনো মালিকানা নেই। তিনি নিজেও পুকুরটি রক্ষার চেষ্টা করছেন। কিন্তু নানা কারণে পেরে উঠছেন না।
বৃহস্পতিবার সকালে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, পুকুরের উত্তর পাশে বেশ কিছু জায়গা ভরাট করা হয়েছে। সেই ভরাট করা জায়গায় নির্মাণ করা হচ্ছে মার্কেট। ইতিমধ্যে অন্তত ১৮টি দোকানঘর নির্মাণে প্রাচীর দেওয়া হয়েছে। একদিকে পুকুরের উত্তর পাশে মাটি ফেলে ভরাট চলছে, অন্যদিকে চলছে মার্কেট নির্মাণের কাজ।
পুকুর ভরাটের বিষয়ে জানতে চাইলে সোহরাব আলী বলেন, ‘কোন পুকুর কে ভরাট করছে বলতে পারব না। আমরা এসবের সঙ্গে নাই।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর ইসলাম তুষার বলেন, ‘পুকুরটির মালিকানা অনেকের। সেটা তাঁদের সম্পত্তি। পুকুর ভরাট করা আইনে নিষিদ্ধ হলেও তাঁরা নিজেদের সম্পত্তি ভরাট করে নিচ্ছেন।’
নূর ইসলাম আরও বলেন, ‘পুকুরটাকে আমরা সংরক্ষণ করতে চাই। এ জন্য তালিকায় রেখেছি। কিন্তু প্রকল্প প্রস্তুত করে পাঠানোর পরও সেটা অনুমোদন হয়নি। ফলে টাকার অভাবে আমরা কিনে নিতে পারিনি। এই শহরের জন্য জলাধার প্রয়োজন। প্রকল্পটা অনুমোদন পেলে সেটা করা যাবে।’


প্রকাশিত: জুলাই ৭, ২০২৩ | সময়: ৫:৪৫ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ