সোমবার, ২৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
অহিদুল হক, বড়াইগ্রাম: নাটোরের বড়াইগ্রামে ছোট-বড় বিভিন্ন খামার ও পারিবারিকভাবে কমপক্ষে ৩২০ কোটি টাকা মূল্যের প্রায় ৭১ হাজার পশু বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। কোরবানীর ঈদকে ঘিরে উপজেলার দুটি পৌরসভা ও সাতটি ইউনিয়নের ছোট বড় তিন হাজার ১৯টি খামারে ক্ষতিকর রাসায়নিক স্ট্রেরয়েড হরমোন মুক্ত প্রক্রিয়ায় এসব পশু পালন করা হয়েছে।
এবার উপজেলায় কোরবানীর পশুর চাহিদা রয়েছে ৩৪ হাজার ২১০টি। এসব গবাদি পশু দিয়ে উপজেলায় কোরবানীর চাহিদা পূরণ করে অতিরিক্ত ৩৬ হাজার ৫শ’ টি পশু অন্যত্র বিক্রি করা যাবে বলে জানা গেছে। ইতিমধ্যে এসব গবাদি পশুর এক-তৃতীয়াংশ বিক্রি করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
এ দিকে, ঈদের আগে বেড়েই চলেছে গো-খাদ্যের দাম। বর্তমানে খামারিদের প্রতিদিন গো-খাদ্যে খরচ বেড়েছে ২৫ থেকে ৩০ ভাগ। গো-খাদ্যের চড়া দাম আর বিভিন্ন সংস্থা থেকে ঋণ নিয়ে গড়া এসব খামার মালিকরা বলছেন, উপযুক্ত দাম না পেলে লোকসানের আশঙ্কা রয়েছে। ন্যায্যমূল্যে গরু বিক্রি করতে না পারলে এসব খামারিদের বিপুল অঙ্কের লোকসান গুনতে হবে।
উপজেলা প্রাণী সম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, কোরবানীর ঈদকে সামনে রেখে খামারি ও প্রান্তিক কৃষকরা ৭০ হাজার ৭১০ টি পশু প্রস্তুত করেছেন। যার মধ্যে ১৮ হাজার ৩৬৫ টি গরু, ৪৬ হাজার ৮০ টি ছাগল, ৯০ টি মহিষ, ৬ হাজার ১৭৫ টি ভেড়া রয়েছে। ক্ষতিকর ডেক্সামেটাসন বড়ি বা ইন্ডিয়ান বড়ি না খাইয়ে কোরবানীর মৌসুমে পুষ্টিকর প্রাকৃতিক খাবারের মাধ্যমে গরু মোটাতাজা করণ করা হয়। বিশেষ করে ষাঁড় গরুর প্রতি বেশি নজর দেওয়া হয়।
পাশাপশি গাভী, বলদ ও মহিষ চাহিদা মোতাবেক পালনসহ পারিবারিক ভাবে ছাগল ও ভেড়াও পালন করা হয়েছে। উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের প্রায় প্রতিটি স্বচ্ছল পরিবারে পারিবারিক ভাবে ৫-৭ টি গরু নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে খামার। এছাড়া ব্যক্তিগত ভাবে ২-৪টি করে গরু অধিকাংশ বাড়িতেই রয়েছে।
উপজেলার রামাগাড়ী গ্রামের খামারী ছানোয়ার হোসেন জানান, এসব খামারের গরু অনলাইনে বিক্রির পাশাপাশি নিজ এলাকা ও রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় নিয়ে বিক্রি করা হয়। সেক্ষেত্রে প্রশাসন যদি সড়কে ডাকাতি, চাঁদাবাজি ও হয়রানী রোধ করার পাশাপাশি ভারতীয় গরুর আমদানী রোধ করতে পারে, তাহলে খামারীরা লাভবান হবে।
কালিকাপুর ফজলী তলা এলাকার একটি খামারের ব্যবস্থাপক রাজু আহমেদ বলেন, সারা বছর ধরেই আমরা খামারে গাভী পালনের পাশাপাশি কোরবানীর জন্য ষাঁড় কিনে মোটাতাজা করি। নিজেদের জমিতে উৎপাদিত ঘাসসহ নিয়মিত স্বাস্থ্যসম্মত খাবার পরিবেশনের মাধ্যমেই এসব গরু মোটাতাজা করা হয়। কোন প্রকার ক্ষতিকর ওষুধ ব্যবহার করা হয় না। এবার আমাদের খামারে বিক্রি উপযোগী ৪৫ টি ষাঁড় রয়েছে।
এবছর গো-খাদ্যের দাম বেশি থাকায় গরু পালনের খরচ অনেক বেড়ে গেছে। সেক্ষেত্রে ভাল দাম না পেলে খামারিদের চরম লোকসানে পড়তে হবে। ইতোমধ্যে ব্যাপারীরা খামারে এসে গরু-মহিষ কেনার জন্য দর-দাম করছেন। আবার অনলাইন মাধ্যমসহ ব্যক্তিগত ভাবে কেনার জন্যও অনেকে কথা বলছেন বলে তিনি জানান।
উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. আমীর হামজা বলেন, বড়াইগ্রাম উপজেলা কোরবানীর পশুতে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। এই উপজেলায় কোরবানীর ঈদকে ঘিরে এবার ৭০ হাজার ৭১০টি পশু বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে, যার বাজার মূল্য কমপক্ষে ৩২০ কোটি টাকা।
খামারীদের রাসায়নিক স্টেরয়েড প্রয়োগ ছাড়া স্বাস্থ্যসম্মত সুস্থ সবল গরু-মহিষ পালনে উদ্বুদ্ধ করাসহ প্রয়োজনীয় সকল স্বাস্থ্যসেবা দেয়া হচ্ছে। হাটে যেন অস্বাস্থ্যকর গরু বেচাকেনা না করতে পারে সেজন্য এখন থেকেই প্রতিহাটে আমাদের টিম নিয়োগ করা হয়েছে।