বিরুদ্ধ সময় পেরিয়ে মুমিনুলের গলায় সাফল্যের মালা

স্পোর্টস ডেস্ক: ডাগআউটেই ছিলেন চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। মুমিনুল হক আপারকাটটা ঠিকঠাক মতো টাইমিং মেলানোর পর দৌড়ানোর প্রয়োজন অনুভব করলেন না। বল বাউন্ডারি দড়িতে চুমু খাওয়ার পরই ব্যাট উঠিয়ে করেন সেঞ্চুরির উদযাপন। এগার সেঞ্চুরি নিয়ে আগেই বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের মধ্েয শীর্ষে ছিলেন। আজকের তিন অঙ্কে নিজেকে আরো একধাপ এগিয়ে নিলেন এই বাঁহাতি।
ড্রেসিংরুম থেকে বেরিয়ে সতীর্থ মুশফিকুর রহিমের মুখে সে কি আনন্দের ঝিলিক। হাথুরুসিংহে বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে তালি দিচ্ছিলেন। তা দেখতে নিশ্চয়ই ভালো লাগছিল মুমিনুলের নিজেরও। ‘কড়া হেডমাস্টারকে’ খানিকটা খুশি তো করা গেল! বাংলাদেশ ক্রিকেটে হাথুরুসিংহের প্রথম অধ্যায়ে মুমিনুলের ক্যারিয়ার ওলটপালট হয়ে গিয়েছিল।
২০১৪ সালের মে মাসে হাথুরুসিংহে বাংলাদেশের কোচ হয়ে আসার আগে ৭ ম্যাচে ৭৫.৫০ গড়ে ৭৫৫ রান নিয়ে টেস্ট ক্যারিয়ার দুর্দান্ত শুরু করেছিলেন মুমিনুল। বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যানের তিন সেঞ্চুরির পাশে ছিল তিন ফিফটি। ২০১৭ সালের নভেম্বর পর্যন্ত হাথুরুসিংহের কোচিংয়ে সময়ে ১৮ টেস্টে স্রেফ ৩৩.৯০ গড়ে তিনি করেন কেবল ১০৮৫ রান। এক সেঞ্চুরির সঙ্গে ছিল নয় ফিফটি। হাথুরুসিংহে আসার পরপরই তাই আলোচনা হচ্ছিল মুমিনুলের জন্য কী অপেক্ষা করছিল।
আয়ারল্যান্ড সিরিজে ১৭ ও অপরাজিত ২০ রানের ইনিংসের পর আফগানিস্তান টেস্ট তার পরীক্ষার মঞ্চ হয়ে গিয়েছিল। সেঞ্চুরিতে মুমিনুল সেই পরীক্ষা উতরে গেছেন বেশ ভালোভাবেই। ১২১ রানে অপরাজিত থেকে মুমিনুলের মুখে যে হাসির ঝিলিক দিচ্ছিল তা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না অনেক দিন। দ্বাদশ তিন অঙ্ক ছুঁয়ে তার গলায় আজ সাফল্যমালা। কঠিন পথ পেরিয়েই মুমিনুলের এই অর্জন। ২০২১ সালের এপ্রিলে শ্রীলঙ্কায় ১২১ রানের পর ২৬ ইনিংসে কোনো সেঞ্চুরি নেই। ফিফটি কেবল ৩টি।
এ সময়ে ৮৮ রানের ইনিংস খেলেন মাউন্ট মঙ্গানুইতে। এছাড়া ৭০ রানের একটি ইনিংস ছিল জিম্বাবুয়েতে। এ সময়ে নেতৃত্বভার সামলাতে পারেননি। পারেননি নিজের ব্যাটকেও হাসাতে। দল থেকে বাদ পড়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে। বিরুদ্ধ এ সময়টা পেরিয়ে আনন্দধারায় ফেরায় রোমাঞ্চিত মুমিনুল। তাইতো নিজের কঠিন সময়টাকে ব্যাখ্যা করেছেন এভাবে, ‘আমি নিজে এটা (কঠিন সময়) ফেস করছি, এটা টেরেবল। যার মধ্যে দিয়ে যায় সেই বোঝে। আমার সময় মনে হয়েছে পুরো পৃথিবী একদিকে আমি আরেকদিকে। যার হয় সে ছাড়া কেউ বোঝে না, এর মধ্যে ঢুকতেও পারবেন না। ওই সময় শুধু প্রক্রিয়া ঠিক রাখতে পারেন। বাকিটা আল্লাহ যখন দেওয়ার তখন রান দিবে।’
কেবল সাদা পোশাকেই বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করা মুমিনুল গণমাধ্যমকেও সচেতনতার পাশাপাশি ধৈর্য ধরার আহ্বানও জানালেন, ‘এই জিনিসটা (টেস্ট ক্রিকেটে দীর্ঘ বিরতি) আমার কাছে মনে হয় আপনাদের বেশি কনসার্ন হওয়া উচিত। কারণ একটা খেলোয়াড় যখন রানে থাকে না আপনারা কিন্তু ওইভাবে বিচার করেন না। একটা খেলোয়াড় চার মাস পর টেস্ট খেলছে, ওকে একটু সুযোগ বা ওইভাবে বিবেচনা করি! কিন্তু ওই সুযোগটা কিন্তু আপনারা দেন না!’
তবে এই বিরতিতে ইতিবাচক কিছু খুঁজে পান মুমিনুল, ‘চার মাস পরে খেলুক বা এক বছর পরে খেলুকৃএকদিক দিয়ে এটা আমার জন্য পজিটিভ দিক, লম্বা সময় থাকে প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য। আসলে আমি আমার মাইনড সেটআপটা ওভাবেই করে ফেলেছি, আগেও তো একবার দেখেছেন, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট খেলছি এক বছর পরে।’ তবে বেশি ম্যাচ না খেলার আফসোসও কাজ করছে তার মনে, ‘আইসিসি যদি পাঁচটা টেস্ট দেয় আপনি কিছু করতে পারবেন না। আইসিসি দশটা টেস্ট দিলে ঠিক আছে। আপনি যখন পাঁচটা টেস্ট খেলবেন এক বছরে, তখন কিন্তু গ্যাপটা তৈরি হয়। পাঁচ মাস, তিন মাস, চার মাস। এরকম হয়।’


প্রকাশিত: জুন ১৭, ২০২৩ | সময়: ৪:৩১ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ