জমি নিয়ে বিরোধের জের : ভাগ্নেকে হেরোইন দিয়ে ফাঁসিয়ে সহযোগীসহ কারাগারে মামা

স্টাফ রিপোর্টার : জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে রাজশাহীতে বিএনপির এক নেতা তাঁর ভাগ্নেকে হেরোইন দিয়ে ফাঁসিয়েছেন। তাঁর ভাগ্নে একজন ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার চালক। তার মামা অটোরিকশায় হেরোইন রেখে তাঁকে পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে দিয়েছেন। নিরীহ অটোরিকশাচালক এখন কারাগারে। এরইমধ্যে পুলিশের তদন্তে ঘটনার পেছনের ঘটনা বেরিয়ে এসেছে।
অটোরিকশাচালকের নাম বাবর আলী ওরফে ছবি (৫০)। রাজশাহীর পবা উপজেলার নতুন কসবা গ্রামে তার বাড়ি। তার মামার নাম আবদুল হাই টুনু (৬৯)। তার বাড়ি গোদাগাড়ী উপজেলার বিজয়নগর গ্রামে। তিনি গোদাগাড়ীর দেওপাড়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি। ভাগ্নেকে ফাঁসানোর অভিযোগে পুলিশ ইতোমধ্যে টুনু ও তার দুই সহযোগীকে গ্রেফতার করেছে। এরা আদালতে নিজেদের দোষ স্বীকার করে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন।
গ্রেফতার অন্য দুজন হলো, নগরীর কাশিয়াডাঙ্গা থানার গুড়িপাড়া এলাকার সানোয়ার হোসেন ওরফে মান্নান (৩১) ও দামকুড়া থানার গোবিন্দপুর এলাকার মো. মোমিন (২৮)। টুনুর কাছ থেকে টাকা নিয়ে তারা বাবরের অটোরিকশায় হেরোইন রেখেছিলেন। এই পরিকল্পনার সঙ্গে জড়িত আরও একজন পলাতক। তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
মামলার নথিপত্র ঘেঁটে দেখা যায়, গত ৫ জুন সকাল সাড়ে ৮টার দিকে দামকুড়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আলী আকবর আকন্দ পবার হরিপুর এলাকা থেকে অটোরিকশাসহ বাবর আলীকে গ্রেফতার করেন। বাবর আলীর অটোরিকশার সিটের নিচে তখন ১০০ গ্রাম হেরোইন পাওয়া যায়। এ নিয়ে এসআই আলী আকবর একটি মামলা করেন। মামলার পর বাবর আলীকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। কিন্তু ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই শাহাদত আলী অন্য ঘটনা খুঁজে পান।
এরপরই বাবর আলীকে ফাঁসানোর পরিকল্পনার সাথে জড়িত তার মামা আবদুল হাই টুনু, সানোয়ার হোসেন মান্নান ও মো. মোমিনকে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদেই তারা বাবর আলীকে ফাঁসানোর কথা স্বীকার করেন। এরপর ১১ জুন তাদের আদালতে হাজির করা হলে তারা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেন। পরে আদালত তাদের কারাগারে পাঠান।
ওইদিন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রাজশাহীর চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে সার্বিক বিষয়ে একটি প্রতিবেদন দেন। এতে তদন্ত কর্মকর্তা লেখেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও সাক্ষীদের জবানবন্দী গ্রহণের সময় ঘটনার পারিপাশির্^কতা সম্পর্কে ভিন্নরূপ তথ্য পাওয়া যায়। বিষয়টি যাচাইয়ের জন্য আসামি বাবরের স্বভাব-চরিত্র সম্পর্কে জানতে তার বাসায় গেলে কোনরকম বিরূপ তথ্য পাওয়া যায়নি। সিডিএমএস যাচাই করেও তার বিরুদ্ধে আগে কোন মামলাও দেখা যায়নি। বিষয়টি সন্দেহজনক হলে মামলার সাক্ষী সানোয়ার হোসেনের কললিস্ট যাচাই করা হয়। এতে সন্দেহজনক তথ্য পাওয়া যায়। তাই তাকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এ সময় তিনি জানান, বাবর আলীর সঙ্গে তার মামা আবদুল হাই টুনুর জমি নিয়ে বিরোধ রয়েছে। এ নিয়ে আদালতে মামলা চলমান। তাই টুনু তার ভাগ্নেকে পরিকল্পিতভাবে ফাঁসাতে সানোয়ার হোসেনের সঙ্গে ৫২ হাজার টাকার চুক্তি করেন।
চুক্তির পর সানোয়ার তার পরিচিত মোমিনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং হেরোইন কেনার জন্য ২০ হাজার টাকা দেন। পরিকল্পনামাফিক মোমিন ঘটনার আগের দিন ৪ জুন গিয়ে বাবর আলীর বাড়ির বাইরে অটোরিকশার সিটের নিচে হেরোইন রেখে আসেন। এরপর ৫ জুন সকালে মোমিনের সহযোগী মো. রাহাত (২৩) নামের আরেক যুবক ফোন করে বাবরকে অটোরিকশা নিয়ে আসতে বলেন। এ সময় রাহাত অসুস্থতার ভান করে সানোয়ারকে নিয়ে হাসপাতালে যাওয়ার জন্য বাবরের অটোরিকশায় ওঠেন। এরপর পুলিশে খবর দেওয়া হয়।
পথে পুলিশ অটোরিকশা তল্লাশি করে। এ সময় হেরোইন পাওয়া গেলে বাবরকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর সানোয়ার ২০ হাজার টাকা দেন মোমিনকে। আর নিজে নেন আরও ৫ হাজার টাকা। এভাবে ভাগ্নেকে ফাঁসান মামা। অভিযুক্ত টুনু জমি জালিয়াত চক্রের একজন হোতা। তার বিরুদ্ধে আগে থেকেই পাঁচটি মামলা চলমান বলে পুলিশের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
বাবর আলীর স্ত্রী আফরোজা খাতুন চান্দু জানান, ১০ জন অংশীদারকে বঞ্চিত করে ৪০ বিঘা জমি ভোগদখল করছেন বিএনপি নেতা টুনু ও তার তিন ভাই। এ জন্য তাঁর স্বামী বাদী হয়ে জমি বন্টনের মামলা করেছেন। এই মামলা যেন পরিচালনা করতে না পারেন, সে জন্য তাঁর স্বামীকে পরিকল্পতভাবে মাদক মামলায় ফাঁসিয়ে দেন টুনু। বাবর এখন কারাগারে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই শাহাদত আলী বলেন, বাবর আলী নির্দোশ। অভিযোগপত্র থেকে তাকে বাদ দেওয়া হবে।’ এসব নিয়ে তিনি এর বেশি কথা বলতে চাননি।


প্রকাশিত: জুন ১৪, ২০২৩ | সময়: ৫:২৫ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ