রাজশাহীতে জমে উঠছে পশুহাট ক্রেতার চাহিদায় ছোট গরু

আসাদুজ্জামান মিঠু : রাজশাহীতে জমে উঠতে শুরু করেছে কোরবানীর পশুর হাট। ইতোমধ্যেই কোরবানীর প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন মানুষ। তারাও বাজারমুখি হচ্ছেন কেউ দাম বুঝতে আবার কেউ কিনতে পশু হাটগুলোতে ভিড় করছে।
কোরবানী ঈদ সামনে তাই হাটগুলোতে বাড়তি মানুষের চাপ বাড়ছে। হাটে উঠতে শুরু করেছে গরু-ছাগল। ঈদ যত ঘনিয়ে আসছে ততই রাজশাহী অঞ্চলের পশুহাটগুলোতে জমে উঠেছে পশু বেচাকেনায়। রাজশাহী মহানগরীর সিটি হাট, চৌবাড়িয়া হাট, নওহাটা হাট ও তানোরের মুণ্ডুমালা হাট সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে ক্রেতাদের পছন্দের শীর্ষে ছোট গরু।
দ্রব্যমুল্যের উর্ধ্বগতি, জীবনযাত্রা ব্যয় বেড়ে যাওয়ার কারণে জমানো টাকা কমেছে মানুষের। তাই বেশি দামের গরুর দিকে না ঝুঁকে ক্রেতারা ছোট গরুর দিকে ঝুঁকেছে।
জেলার মুণ্ডুমালা হাট ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। হাটে বড় গরুর ক্রেতা একেবারে কম থাকায় হতাশ হয়ে পড়েছে খামারিরা। হাটে আসা একাধিক পশু-বিক্রেতারা জানান, এ বছর কোরবানীতে ছোট গরু চাহিদা বেশি। ক্রেতারা ৪৫ হাজার থেকে ৭৫ হাজার টাকার মধ্যে পছন্দের পশু কিনছেন বেশি। ১২০ কেজির উপরে মাংস হবে এমন গরু ক্রেতা হাটে এখন পর্যন্ত কম।
হাটে আসা ক্রেতাদের দাবি গত কয়েক বছরে গরুর দাম দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই বর্তমান বাজারে বড় গরু কেনা অনেক কষ্টের। তাই বেশিরভাগ ক্রেতার চোখ এবার ছোট সাইজ গরুর দিকেই।
রাজশাহী মহানগরীর নওদাপাড়া থেকে সোমবার মুণ্ডুমালা হাটে গরু কিনতে এসেছিলেন মোখলেসুর রহমান। তিনি বলেন, দ্রব্যমুল্যের যা দাম তাতে বেশি দামে গরু কেনা সম্ভব নয়। আমি মুলত ছোট গরু কেনার উদ্দেশে এসেছি। দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত হাটে ঘুরে তিনি ৬৫ হাজার টাকা দিয়ে একটি গরু কিনে নিয়ে বাড়ি ফেরেন।
ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ছোট সাইজের গরু (৬০ কেজি মাংস হবে) এমন গরুর দাম ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। মাঝারি সাইজের গরু (৮০ কেজি মাংস হবে) ৫৫ থেকে ৬০ হাজার ও বড় সাইজের গরু (১২০-১৬০ কেজি মাংস হবে) লাখ টাকার উপরে দাম হাকানো হচ্ছে।
হাটে এ বছর ছাগলের দাম বেড়েছে। ১২ কেজি মাংস হবে এমন ছাগলের দাম ১২ থেকে ১৩ হাজার, ১৫ থেকে ১৮ কেজির দাম ছাগল ২০ থেকে ২২ হাজার ও ২০ থেকে ২৫ কেজি মাংস হবে এমন ছাগলের দাম হাকানো হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত।
রাজশাহীর সবচেয়ে বড় পশুহাট বসে সিটি বাইপাস। সিটি বাইপাস রাজশাহী নগরীর মধ্যে হওয়াই এ হাটে ঈদের দুই একদিন আগে বেশি বেচাবিক্রি বাড়ে। আর রাজশাহী অঞ্চলের আসপাশে বসা হাটগুলো ১৫ দিন আগ থেকে বেচাবিক্রি বেড়ে যায় কয়েকগুণ বেশি।
এরমধ্যে জমে উঠেছে নওগাঁ জেলার মান্দার চৌবাড়িয়া তানোর উপজেলার মুণ্ডুমালা গোদাগাড়ীর মহিষাল বাড়ী ও কাকনহাট এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার নাচোলের সোনাইচন্ডি পশুহাট এখন ক্রেতা-বিক্রেতায় মুখরিত। এসব হাটগুলোতে বেচা বিক্রি বেড়েছে কয়েকগুণ।
মুণ্ডুমালা হাটে দুইটি বড় ষাড় বিক্রি করতে এনেছিলেন একই এরাকার আবু জাফর নামের এক খামার মালিক। তিনি জানান, এক বছর ধরে দুইটি ষাড়ের পিছনে গো-খাদ্য কিনে অনেক খরচপাতি হয়েছে। ষাড়গুলো মোটাতাজা হয়েছে। প্রতি ষাড়ের মাংস হবে ১৪০ থেকে ১৬০ কেজি। দাম হাকা হচ্ছে এক লাখ পর্যন্ত। কিন্ত ষাড়গুলোর ক্রেতা একেবারে কম। দাম শুনেই চলে যাচ্ছেন। এজন্য তিনি হতাশ হয়ে পড়েছেন।
কোরবানীর জন্য গরু কিনতে আসা পাঁচন্দর গ্রামের হারুন অর রশিদ বলেন, সাত ভাগে কোরবানী দিবেন তিনি। তাই ৯০ থেকে ১০০ কেজি ওজন হবে এমন একটি বকনা গরু কিনেছেন ৮২ হাজার টাকায়। তুলনা মুলক দাম নাগালে বাইরে বলে জানান তিনি।
হাট ইজারাদার রবিউল ইসলাম জানান, আর কয়দিন পরেই ঈদুল আজহা। এরি মধ্যে জমে উঠেছে পশুহাট। অন্যসব হাটের চেয়ে কোরবানী সময় পশুহাটে নতুন নতুন ক্রেতা-বিক্রেতার আগমন ঘটায় বেচা বিক্রি বেড়েছে কয়েকগুণ বেশি।


প্রকাশিত: জুন ১৪, ২০২৩ | সময়: ৫:২৪ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ